ইমরান হুসাইন
Advertisement
‘মা’ অতি মায়াভরা একটা শব্দ। পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম শব্দ ‘মা’, যে শব্দের মধ্যে পৃথিবীর সকল সুখ-শান্তি, আনন্দ, ভালোবাসা এবং সকল মায়া জড়িত। পৃথিবীতে এই একটাই একমাত্র শব্দ যে শব্দের কথা মনে করলে সকল প্রকার দুঃখ-কষ্ট মুহূর্তের মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। আর মুহূর্তের মধ্যে শান্তিতে ভরে ওঠে প্রাণ।
মা শব্দটার মধ্যে এক অন্যরকম শান্তি পাওয়া যায়। সেই শান্তি পৃথিবীর অন্য কোনো শব্দে বা বস্তুতে মেলে না। এই পৃথিবীতে যদি নিঃস্বার্থ কোনো ভালোবাসা থেকে থাকে তাহলে সেটা মায়ের ভালোবাসা। মায়ের ভালোবাসার সাথে আর কোনো কিছুর তুলনা হতে পারে না।
আজ বিশ্ব মা দিবস। তারিখ যাই হোক না কেনো মে মাসের দ্বিতীয় রোবাবার সারাবিশ্বে বিশ্ব মা দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। বস্তুত মায়ের প্রতি ভালোবাসা বা শ্রদ্ধার কোনো নির্দিষ্ট দিন নেই। প্রতিটা দিনই প্রতিটা সন্তানের কাছে তার মায়ের জন্য মা দিবস। প্রতিটা সন্তানের জীবন তার মায়ের গর্ভেই গড়া। একজন সন্তানের জনক তার মা।
Advertisement
একজন মা দীর্ঘ ১০ মাস ধরে তার গর্ভে সন্তানকে লালন করার পর একটা সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকেন। এই সময়টা প্রতিটা মায়ের জন্য অনেক কষ্টকর একটা সময়। একজন মা তার নিজের জীবনের সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসেন তার সন্তানকে। যা পৃথিবীর আর কেউ পারে না। সন্তানের মঙ্গলকামনায় নিজের জীবনটা অনায়াসে বিসর্জন দিতে পারেন একজন মা। আর তাই এই মায়ের স্থান সকল কিছুর ঊর্ধ্বে। শুধু মা দিবসেই নয়, মাকে ভালোবাসুন প্রতিটা সময়, প্রতিটা দিনে।
বিশ্ব মা দিবস প্রথম পালন করা শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্রের আনা জার্ভিস ও তার মেয়ে আনা মারিয়া রিভস জার্ভিসের উদ্যোগে প্রথম মা দিবস পালিত হয়। আনা জার্ভিস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর ও ওহাইওর মাঝামাঝি ওয়েবস্টার জংশন এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তার মা অ্যান মেরি রিভস জার্ভিস সারাজীবন অনাথদের সেবায় জীবন ব্যয় করেছেন। ১৯০৫ সালে মারা যান মেরি। অনাথদের জন্য মেরির এই নিঃস্বার্থ উৎসর্গিত জীবনের কথা অজানাই থেকে যায়।
লোকচক্ষুর অগোচরে কাজ করা মেরিকে সম্মান দিতে চাইলেন মেয়ে আনা জার্ভিস। তাই নতুন এক উদ্যোগ নেন তিনি। অ্যান মেরি রিভস জার্ভিসের মতো দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সব মাকে স্বীকৃতি দিতে আনা জার্ভিস প্রচার শুরু করেন। তার সাত বছরের চেষ্টায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায় মা দিবস। ১৯১১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্যে মা দিবস পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
তবে মা দিবসের প্রবক্তা আনা জার্ভিস দিবসটির বাণিজ্যিকীকরণের বিরোধিতা করে এসেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘মাকে কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর মানে নিজ হাতে তার জন্য দুই কলম লেখার সময় না হওয়া। চকলেট উপহার দেয়ার অর্থ হলো- তা নিজেই খেয়ে ফেলা।’
Advertisement
এসব না করে এই দিনটিতে মায়ের জন্য এমন কিছু করতে অনুরোধ করেন তিনি যেন তা অর্থবহ হয়ে থাকে। মায়ের কাছে সন্তান সবসময় প্রিয়। প্রতিটা মা তার সন্তানকে নিজের থেকেও অধিক ভালোবাসেন। মায়ের ভালোবাসা পেতে হলে কখনও মাকে বলতে হয় না যে মা আমাকে একটু ভালোবাসো। মায়েদের কোনো চাওয়া-পাওয়া থাকে না। মায়েদের সুখ একটা জায়গায়তেই আর সেটা হলো তার সন্তানের সুখ।
মা ভালোবাসার এক অনন্য নাম। মায়ের মতো এমন শুভাকাঙ্ক্ষী জগতে আর নাই। মায়ের প্রতি আমাদের কর্তব্যের কোনো শেষ নেই। নিজের গায়ের চামড়া দিয়ে মায়ের জুতা বানিয়ে দিলেও সারাজীবনে কখনও মায়ের এক কণা দুধের ঋণ শোধ করা সম্ভব না।
একজন সন্তানের প্রথম কর্তব্য হলো মাকে খুশি করা। মায়ের মনে কোনো দুঃখ না দেয়া। মায়ের সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার না করা। আমরা আমাদের মায়েদের সবসময় সম্মান করব। মাকে ভালোবাসব। আজ বিশ্ব মা দিবসে সকল মায়ের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
লেখক : শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
এইচআর/বিএ/পিআর