দেশে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রায় দুই হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার আরও একটি ইউনিট (৩ নম্বর ইউনিট) স্থাপন করা হচ্ছে।ইতোমধ্যে নতুন ইউনিট নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ শুরু করা হয়েছে। ৩ নম্বর ইউনিটটি বাস্তবায়ন শেষে উৎপাদনে গেলে বড়পুকুরিয়া ২৫০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষমতা ৫২৫ মেগাওয়াটে গিয়ে দাঁড়াবে।ফলে দেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের বিদ্যুতের চাহিদা পূরন করবে এবং লো-ভোল্টেজ জনিত সমস্যা কমে আসবে। ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ইউনিটটি উৎপাদনে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এদিকে, ৩ নম্বর ইউনিটের পাইলিংয়ের কাজ শুরু হওয়ায় এলাকার দুই শতাধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে।জানা গেছে, দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অবস্থিত বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে আহরিত কয়লা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে খনিমুখে ২৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে দুটি ইউনিট রয়েছে। প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ১২৫ মেগাওয়াট করে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে সম্প্রসারণ করে ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩ নম্বর ইউনিট স্থাপন করা হচ্ছে।দরপত্রদাতার ঋণের (বায়ারস ক্রেডিট) আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব করে ২০১১ সালের ২৬ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে তিনটি বৈদেশিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। দরপত্রের শর্ত পূরণ না হওয়ায় একটি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র বাতিল করা হয়। চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন ও সাংহাই ইলেকট্রিক গ্রুপ কোম্পানি নিয়ে গঠিত সিএমসি/এসইসি কনসোর্টিয়াম এবং জয়েন্ট ভেঞ্চর হারবিন ইলেক্ট্রিক ইন্টারন্যাশনাল ও সিসিসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড চায়না এ দুটি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়। বার্যাস ক্রেডিটের আওতায় ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ইউনিট স্থাপনের বিপরীতে জয়েন্ট ভেঞ্চর হারবিন ইলেক্ট্রিক ইন্টারন্যাশনাল এবং সিসিসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি মূল আর্থিক প্রস্তাবে ২৪৮.৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (২ হাজার ৩৯ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার ৫শ টাকা), বার্ষিক ৩ দশমিক ২৫ ভাগ (৩.৫%) সুদে ১০ বছরে সমান ২০ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য ও নির্মাণকালীন ৩ বছর গ্রেস পিরিয়ড প্রভৃতি শর্তে দর উদ্ধৃত করে। এতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রতি কিলোওয়াট স্থাপন ব্যয় হবে ৯০৮.৯৮৬ মিলিয়ন ডলার (সুদসহ ১০০০.৬৮ মার্কিন ডলার)। অপর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিএমসি/এসইসি কনসোর্টিয়াম অনেক বেশি দর ও শর্ত আরোপ করে। তাছাড়া তাদের কাজের মানও ভালো নয়। এর আগে সিএমসি/ এসইসি কনসোর্টিয়াম বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুটি ইউনিট স্থাপনে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে। যার ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কখনই পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে যেতে পারেনি।সুত্র জানায়, সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে জয়েন্ট ভেঞ্চর হারবিন ইলেক্ট্রিক ইন্টারন্যাশনাল এবং সিসিসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সঙ্গে আর্থিক ও কারিগরি বিষয়ে পিডিবির টেন্ডার কমিটি নেগোসিয়েশন করে। এরপর দরপত্রটি গ্রহণ করার সুপারিশ করে সরকারের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর। সরকারের ক্রয় কমিটি ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ তা অনুমোদন করে। জয়েন্ট ভেঞ্চর হারবিন ইলেক্ট্রিক ইন্টারন্যাশনাল এবং সিসিসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সঙ্গে পিডিবির চুক্তি স্বাক্ষর হয় ২০১৩ সালের ৪ জুলাই। চুক্তি কার্যকর হয় চলতি বছরের ১৫ জুলাই এবং আগস্ট মাস থেকে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। চুক্তি কার্যকরের দিন থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ৩ বছর।পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল ভবন (বয়লার ও মেশিন ভবন) সংলগ্ন উত্তর পাশে পুরো দমে পাইলিংয়ের কাজ চলছে। বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী সারথ চন্দ্র ভাদুড়ী ও নির্বাহী প্রকৌশলী (আই অ্যান্ড সি) মাহবুবুর রহমান জানান, ৩ নম্বর ইউনিটটিতে বয়লার ও গ্যাস টারবাইন দুটি সিস্টেমই থাকবে। এর ফলে কয়লা বা গ্যাস যে কোনোটিই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে ইউনিটটি চালু রাখা যাবে। ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ইউনিটটি উৎপাদনে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে যে গতিতে কাজ চলছে তাতে করে নির্ধারিত সময়ের ৩ মাস আগেই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তৃতীয় ইউনিটটি বাস্তবায়ন শেষে উৎপাদনে গেলে দেশের উত্তর-পশ্চিম জোনের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ হবে এবং লো ভোল্টেজ জনিত সমস্যা কমে আসবে। এছাড়া, এখানকার বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়ে ট্রান্সমিশন লস কমাবে।তিন নম্বর ইউনিটটি চালু রাখতে বছরে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টন কয়লার প্রয়োজন হবে। এতে করে বড়পুকুরিয়া খনির কয়লার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে বলে তারা মনে করেন।এমদাদুল হক মিলন/এমজেড/পিআর
Advertisement