অর্থনীতি

করোনায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ‘কল সেন্টার’

>> নেই সুরক্ষা সরঞ্জাম, মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি>> এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত চারজন >> কর্মীরা কাজ করছেন ভয় আর দুশ্চিন্তায়>> স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ব্যবস্থা : কেন্দ্রীয় ব্যাংক

Advertisement

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিস্তার রোধে সরকারসহ বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে সতর্কতা ও বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলা হলেও তা আমলে নিচ্ছে না বেসরকারি ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। কোনো ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম না দিয়ে ঝুঁকির মধ্যে কর্মীদের দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির ‘কল সেন্টার’। ইতোমধ্যে তাদের চারজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়েও কাজ করছেন অনেকে। দেয়া হচ্ছে না কোনোপ্রকার সুযোগ-সুবিধা।

এদিকে, চাকরি হারানোর ভয় কোনো কথা বলছেন না কেউ। এভাবেই করোনার প্রাদুর্ভাবের সংকটময় সময়ে আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কল সেন্টারের কর্মীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির কল সেন্টারের কর্মী নিয়োগ তৃতীয় পক্ষ একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হয়ে থাকে। কিন্তু এর সার্বিক কার্যক্রম ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নিজস্ব প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়।

Advertisement

ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কল সেন্টারের কর্মীরা জানান, গত দেড় মাস ধরে কোনো ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই তারা কাজ করছেন। কল সেন্টারে নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা জীবাণুনাশকের কোনো ব্যবস্থা। ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন কর্মীরা। এখন পর্যন্ত চার কর্মী কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হয়েছেন। এছাড়া অনেক কর্মী করোনার উপসর্গ- জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে অফিস করছেন। আবার কয়েকজন বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ায় বেশ কয়েকদিন হলো কল সেন্টারে আসছেন না। বাধ্য হয়ে বাসায় থাকছেন। তবে এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে না। এমনকি খোঁজ-খবরও নেয়া হচ্ছে না।

তারা আরও জানান, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কল সেন্টারের একটি ফ্লোরের মধ্যে প্রতিটি শিফটে ৭০ থেকে ৮০ জন কর্মী একসঙ্গে করোনার ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ডেক্সগুলো পাশাপাশি, একটি-অপরটির সঙ্গে লাগানো। শুধু চাকরি হারানোর ভয়ে করোনা আক্রান্ত হওয়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়েও প্রতিদিন কাজ করছেন তারা। মুখ ফুটে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। যারা অসুস্থ হচ্ছেন, তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। আর যারা সুস্থ আছেন তারাও মানসিক চাপ ও চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অসুস্থ হওয়া কল সেন্টারের এক কর্মী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বেশ কিছুদিন জ্বর আর সর্দি নিয়ে অফিস করেছি। এখন শরীর বেশি অসুস্থ, ফলে কয়েকদিন হলো অফিসে যাচ্ছি না। করোনার টেস্ট করানোর জন্য আইইডিসিআরে ফোন দিয়েছি। তারা নমুনা পরীক্ষা করবে। খুব ভয়ের মধ্যে আছি।’

‘এখন বেতন কাটা এবং চাকরি হারানোর দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে’— উল্লেখ করে এ কর্মী আরও জানান, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বলে প্রতিদিনই অফিস করতে হয়। কোনো কারণে একদিন অফিসে না গেলে বেতন কাটা হয়। আবার বেশিদিন অনুপস্থিত থাকলে চাকরি থাকে না। এই ভয়ে বেশির ভাগ কর্মী অসুস্থ হয়েও বাধ্য হচ্ছেন অফিস করতে। সংকটময় সময়ে এর বিনিময়ে কিছুই পাচ্ছেন না তারা।

Advertisement

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘৮০ জন কর্মী একসঙ্গে কাজ করছেন। তাদের সুরক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নেই। ব্যাংকের পক্ষ থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা জীবাণুনাশক কিছুই দেয়া হয়নি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন সবাই। কেউ কিছু বলেন না। মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। কারণ কর্মীরা কেউ কথা বললে চাকরি থাকবে না।’

‘ব্যাংকের কর্মীদের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা ঘোষণা হচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি, আক্রান্ত হচ্ছি কিন্তু আমরা এসব প্রণোদনার কিছুই পাচ্ছি না। কারণ আমাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ। আমাদের মধ্যে যারা অসুস্থ হচ্ছেন তারা নিজ খরচেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।’

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে এসব কর্মীর দাবি, সংকটময় পরিস্থিতিতে কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং যারা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা যেন করা হয়।

এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবুল কাশেম মো. শিরিনের সঙ্গে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু উনি রিসিভ করেননি। পরে মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো উত্তর মেলেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, করোনার বিস্তার রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সীমিত আকারে ব্যাংক লেনদেনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি (ডব্লিউএইচও-এর গাইডলাইন অনুযায়ী) মেনে চলতে হবে। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকেও প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে স্বাস্থ্যবিধিসহ বিভিন্ন শর্ত পরিপালনের কথা বলা হয়েছে। এখন কোনো ব্যাংক বা তাদের অধীনস্থ কোনো প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম যদি পরিচালনা করে সেক্ষেত্রে ওই ব্যাংকের উচিত শতভাগ স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

করোনার এমন দুর্যোগের সময় যদি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনে অবহেলা করে তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে— বলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ মুখপাত্র।

এসআই/এমএআর/জেআইএম