দেশজুড়ে

সুন্দরবনের গাছ কেটে বন বিভাগের ট্রলারেই পাচার

করোনা পরিস্থিতি ও চলমান লকডাউনের মধ্যে দিনে-দুপুরে সুন্দরবনের কর্তন নিষিদ্ধ সুন্দরী ও কাকড়া গাছ কেটে তা পাচারের অভিযোগ উঠেছে বনবিভাগের এক কর্মকতার্র বিরুদ্ধে।

Advertisement

পূর্ব সুন্দরবনের ঢাংমারী স্টেশনের অফিসার (এসও) মো. আনোয়ার হোসেন খাঁন বনের ঘাগরামারী এলাকা থেকে সুন্দরী ও কাকড়া গাছ কেটে তা ট্রলারযোগে পাচার করছিলেন। গত বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পাচার কাজে ব্যবহৃত করা হয় বন বিভাগের পতাকাবাহী ট্রলার।

বন বিভাগেরই ট্রলারে থাকা গাছ পাচারকারী তরুণ বলেন, এ গাছ তাদের স্টেশন অফিসার আনোয়ার সাহেব ঘাগরামারী থেকে কেটে আনার অনুমতি দিয়েছেন।

তবে ঢাংমারী স্টেশনের স্টেশন অফিসার (এসও) মো. আনোয়ার হোসেন খাঁন দাবি করে বলেন, ঘাগরামারী টহল ফাঁড়ি থেকে এ গাছ আমাদের স্টেশনের (ঢাংমারী) স্থাপনা তৈরির কাজে আনা হচ্ছিল। এ ব্যাপারে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা রয়েছে। তবে বন বিভাগের পতাকাবাহী ট্রলারে গাছ নেয়ার সময় ছিল না কোনো বনরক্ষী। ছিল শুধু তিনজন পাচারকারী।

Advertisement

এ দিকে বন বিভাগের স্থাপনা তৈরির কাজে কোনো গাছ ব্যবহার করতে হলে তাদের জব্দকৃত গাছ ছাড়া ব্যবহার করতে পারবে না বলে জানান পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. এনামুল হক। ঢাংমারী স্টেশনের অফিসার আনোয়ার হোসেন খাঁনের সুন্দরবনের সদ্য গাছ কাটার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনি তাকে (এসও আনোয়ার) বলেছেন তাদের স্টেশনের জেটি নির্মাণের জন্য ওই গাছ নেয়া হচ্ছিল। তবে সেটি সদ্য কাটা কিনা আমি বলতে পারবো না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্টেশন অফিসার আনোয়ার হোসেন খাঁন ও ঢাংমারী স্টেশনের আওতাধীন ঘাগরামারী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে গাছ কেটে পাচারসহ নানা রকম অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

ঢাংমারী স্টেশন সংলগ্ন ভোজনখালী গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মুজিবর রহমান, সাবেক ইউপি সদস্য মো. আফসার আলী ও সঞ্জয় কুমার বর্মন অভিযোগ করে বলেন, ঢাংমারী স্টেশন অফিসার আনোয়ার হোসেন এবং ঘাগরামারীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকতার্ আব্দুর রউফ তাদের লোক (দালাল) দিয়ে সুন্দরবন থেকে প্রতিনিয়তই কর্তন নিষিদ্ধ সুন্দরী, কাকড়া ও বাইনসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ পাচার করে থাকেন।যারা এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করে তাদের বিরুদ্ধে হরিণ পাচারের মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেন বলেও অভিযোগ ওই গ্রামবাসীর।

আর অভিযোগ রয়েছে বন বিভাগের এই দুই কতার্র সকল অনিয়মে সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন ভোজনখালী গ্রামের বাসিন্দা বাদল ও ট্রলার মাঝি রহিম নামের দুই ব্যক্তি (দালাল)। বনকর্তা আনোয়ার ও রউফের সহযোগী বাদল এবং রহিমের অত্যাচারে অতিষ্ট গ্রামের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ।

Advertisement

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেনের কাছে ঢাংমারী স্টেশন অফিসার আনোয়ার হোসেন খাঁনের কর্তন নিষিদ্ধ সুন্দরী ও কাকড়া গাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি আমি দেখছি বলেই ফোন কেটে দেন।

এ বিষয়ে বন বিভাগের খুলনাঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মো. মঈন খাঁন বলেন, সুন্দরবন থেকে সদ্য গাছ কেটে স্টেশনের কোনো স্থাপনা তৈরিরসুযোগ নেই। দীর্ঘদিনের জব্দকৃত গাছ দিয়ে এসব স্থাপনা করতে গেলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন। কোনো কর্মকর্তা বনের গাছ কেটে থাকলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

মো. এরশাদ হোসেন রনি/এমএএস/জেআইএম