আগামী অর্থবছরের বাজেটে অবশ্যই যেন কোনোভাবে কালো টাকা সাদার ব্যবস্থা না থাকে। কারণ এটি সামগ্রিকভাবে আমাদের অর্থনীতিতে কোনো ধরণের সুফল বয়ে আনে না। তাই এ ধরনের সুবিধা দেয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। একই সঙ্গে চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় করপোরেট ট্যাক্স না কমানোর পশামর্শ দিয়েছে সিপিডি।
Advertisement
শনিবার (৯ মে) ‘কোভিড-১৯-বর্তমান প্রেক্ষাপট ও বাজেট ২০২০-২১’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলা হয়। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন, সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে আসন্ন বাজেট প্রস্তাবনায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের মূসক নেটের বাইরে রাখার জন্য বার্ষিক টার্নওভার ৫০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক কোটি টাকা পর্যন্ত মূসক অব্যাহতি প্রদান করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সিপিডি বলছে, এটি করলে ছোট ব্যবসীরা কিছু সুবিধা পাবেন। এতে সরকারের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বলছে, করোনায় দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা চাঙা রাখতে ব্যক্তি শ্রেণীর করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো উচিত। এটি এখন আড়াই লাখ টাকা আছে। এটি বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা এবং পাশাপাশি করের হারও কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি।
Advertisement
করপোরেট ট্যাক্স কমানোর বিষয়ে সাবধান হওয়ার পশামর্শ দিয়েছে সিপিডি। কারণ এ ট্যাক্স কমালে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে কোন ধরণের চাপ আসবে তা বিবেচনায় নিতে হবে। এখন যে পরিমাণ সরকারি ব্যয় প্রয়োজন রয়েছে এটি বিবেচনায় নিলে করপোরেট কর না কমানোই ভালো বলে মনে করছে বেসরকারি এ গবেষণা সংস্থাটি। পাশাপাশি বিভিন্ন কর প্রণোদনা দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পশামর্শ দিয়েছে সিপিডি।
আসন্ন বাজেটে রাজস্ব আহরণে করের হার না বাড়িয়ে কর ফাঁকি বন্ধে কঠোর হওয়ার পক্ষে সিপিডি। একই সঙ্গে অর্থপাচার বন্ধে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি।
আগামী বাজেটে ঘাটতি মেটাতে বিদেশি উৎসকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি তেলের দাম কম থাকায় যে মুনাফা আসবে; অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে দরিদ্র মানুষের মধ্যে ব্যয় করতে পারে এতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা চাঙ্গা থাকবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে সারাবিশ্বের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। সেখানে সাপ্লাই চেন, চাহিদার ওপর চাপ পড়েছে। যার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। দেশের ভেতরেও অর্থনীতির অনেক খাত বিচ্ছিন্ন ও বন্ধ রয়েছে। যার কারণে অর্থনীতির ওপর আরেকটা চাপ পড়েছে।
Advertisement
এমন অবস্থায় আসন্ন ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট হতে যাচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। বাংলাদেশ কখনোই এ ধরনের অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে পড়েনি। সেজন্য এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। সুতরাং এবারের বাজেট তৈরির ক্ষেত্রে অনেক ধরনের চাপ, সমস্যা, চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হতে হবে।
এছাড়াও ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, অনলাইন জরিপে ৯৩ শতাংশ বর্তমান প্রেক্ষাপটে শপিংমল না খোলার এবং ৯৬ শতাংশ শপিংমলে না যাওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। জীবন ও জীবিকা দুটোই প্রয়োজন আছে। তবে জীবন যদি না থাকে, সেই জীবিকা দিয়ে কী প্রয়োজন। সুতরাং এজন্য সুচিন্তিতভাবে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
এসআই/এমএফ/এমএস