আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে চারটি খাতকে গুরুত্ব দেয়ার বিষয়ে সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। খাতগুলো হলো- স্বাস্থ্য, কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী এবং কর্মসংস্থান।
Advertisement
এ জন্য অর্থনীতিতে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি করবে, অর্থনৈতিক গতি তরান্বিত করবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এমন ব্যয় রেখে, অপ্রয়োজনয় ও অনুৎপাদনশীল ব্যয় কাটছাঁট করার পরামর্শ দিয়েছে গবেষণা সংস্থাটি। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) কমপক্ষে দুই শতাংশ করতে বলেছে সিপিডি।
শনিবার (৯ মে) ‘কোভিড-১৯ বর্তমান প্রেক্ষাপট ও বাজেট ২০২০-২১’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ সুপারিশ ও পরামর্শ তুলে ধরা হয়।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন সংস্থার ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। মূল প্রতিবেদন তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির রিসার্চ ফেলো তৌফিক ইসলাম।
Advertisement
ফাহমিদা বলেন, ‘সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্বাস্থ্য খাতের ব্যয় জিডিপির ১ দশমিক ১২ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছিল। সেটাই পূরণ করতে পারেনি। এই ১ দশমিক ১২ শতাংশই কিন্তু কম, অন্যান্য দেশের তুলনায়। আমাদের প্রতিবেশী ভারতের দুই শতাংশের উপরে। আমাদের নিজেদের লক্ষ্যমাত্রাটা পূরণ করতে পারিনি। সুতরাং যে লক্ষ্যমাত্রা আমাদের নীতিমালায় রয়েছে তা পূরণ করতে হবে। তবে শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না, ব্যবস্থাপনাটাও বড় বিষয়। স্বাস্থ্য খাতে অবশ্যই বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। সেটা ২ শতাংশ করা উচিত।’
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে স্বাস্থ্য খাতের জন্য যে বরাদ্দ করা প্রয়োজন, সেটা আমরা করিনি। জনগণ কিন্তু তাদের বরাদ্দ করতে বাধ্য হচ্ছেন। জনগণ ব্যয় করছেন তাদের নিজেদের প্রয়োজনে। স্বাস্থ্য খাতে নিজের পকেট থেকে অর্থ খরচ করার দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার উপরে।’
স্বাস্থ্য খাতে সরকারের ব্যয় কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে সরকারের বরাদ্দ আমাদের সম্পূর্ণ বাজেটের সাড়ে ৫ শতাংশের মতো, ১০ হাজার কোটি টাকা। এটা বাড়াতে হবে। এটাকে আমাদের ২ শতাংশের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি কোন জায়গাতে এটা ব্যবহার হচ্ছে তাও গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, মেডিকেল টেকনিশিয়ানে ২০১৩ সালের পর কোনো ধরনের নিয়োগ হয়নি। এখন সরকার জরুরি ভিত্তিতে বেশ কিছু নিয়োগে যাচ্ছে। কিন্তু এখানে তো একটা দক্ষতার প্রয়োজন। এগুলো ধারাবাহিকভাবে না করল আমরা ফল পাবো না। সুতরাং এখানে শুধু টাকা বিষয় না। এখানে মানবসম্পদ উন্নয়ন করা, অবকাঠামো উন্নয়ন করা, প্রতিষেধক কর্মকাণ্ডগুলো ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী করা গুরুত্বপূর্ণ।’
Advertisement
কর ফাঁকি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়ে মোস্তাফিজুর বলেন, ‘অপ্রত্যক্ষ কর সাধারণ মানুষের ওপরই বেশি পড়ে। এটা আদায় করা সহজ। অনেক ক্ষেত্রে মানুষকে বিভিন্ন ব্যয় করতে হয়, সেই ব্যয়ের ওপর ট্যাক্স আরোপ করলে তা আদায় করা সহজ। তবে আমরা আরও একটু কঠিনভাবে যাওয়ার জন্য বলেছি। কর ফাঁকি যেন খুবই শক্ত হাতে দমন করা হয়। জনগণের যে টাকা করের মাধ্যমে আসার কথা আমরা দেখেছি, আমাদের দেশে সেটা আসে না। আমাদের ট্যাক্স-জিডিপির হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। ১০ শতাংশের মতো। আমাদের যদি ১৮ শতাংশ ট্যাক্স-জিডিপি থাকতো তাহলে ঝুঁকি মোকাবিলার অনেক শক্তি থাকত।’
তিনি বলেন, ‘আমি এখন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছি। খোলার যখন প্রয়োজন না তখন খুলতে বাধ্য হচ্ছি। এর বড় কারণ আমার হাতে ওই ধরনের শক্তিমত্তা নেই। আর্থিক সক্ষমতা নেই, যে সক্ষমতা দিয়ে এগুলোকে আমি আরও কিছুদিন মোকাবিলা করতে পারি।’
অর্থ পাচার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিভিন্নভাবে গত ১০ বছরে ৫ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। যে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে পাচার হওয়া টাকা তার পাঁচগুণ। এই টাকার একটা অংশও যদি দেশে থাকতো, তাহলে অর্থনীতির একটা কাজে আসত এবং সরকার একটা ট্যাক্স পেত।’
মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ট্রাভেলটা ওপেন করলেই শুধু লাখ লাখ অবৈধদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে না, যারা বৈধভাবেও আছেন কিন্তু সেই কোম্পানিতে কোভিডের কারণে ব্যাংক ক্রাফট হয়ে গেছেন তারাও কিন্তু ফেরত পাঠানো শুরু করতে পারে। সুতরাং আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে- বড় সংখ্যার প্রবাসীরা ফেরত আসতে পারেন। তাদের কীভাবে আমরা এখানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব, এ বিষয় আমাদের একটা চিন্তাভাবনা থাকা উচিত।’
এমএএস/এফআর/এমএস