মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনিও একজন মমতাময়ী মা, প্রিয়তমা স্ত্রী। আপনি বুঝবেন স্বজন হারানোর যন্ত্রণা কতটা তীব্র হতে পারে। এই দুনিয়ায় আপনার চাইতে কেউ বেশি বুঝবে না সন্তানের কাছ থেকে তার বাবাকে ছিনিয়ে নেয়ার কষ্ট কতটা! দয়া করে আমাকে স্বামী হারা করবেন না।রোববার বেলা ১২ টায় কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়া এ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এমন করেই আকুতি জানান। কেননা ৭৫` এর ১৫ আগস্ট কাল রাত্রিতে আপনি আপনার বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবার-পরিজন হারিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের জননেত্রী মমতাময়ী শেখ হাসিনাকে বলছি। আজ প্রায় দুই মাস কেটে যাচ্ছে `র্যাবের হাতে আটক` আমার স্বামী কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজের কোনো সন্ধান আমরা পাচ্ছি না। আজ দুটো মাস আমরা নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে আমার দুই শিশু সন্তান ও বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়িকে সঙ্গে নিয়ে এ দুয়ার থেকে ও দুয়ার সব জায়গায় সবুজকে খুঁজে ফিরছি। সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরছি কিন্তু কেউই সবুজের সন্ধান দিচ্ছে না। সবাই শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন সবুজ বেঁচে আছে! আজ কালই ফিরবে! প্রতিদিনই আশ্বাস পেয়ে আশায় বুক বাধি এই বুঝি সবুজ ফিরছে! কিন্তু আমার স্বামী সবুজ আর ফেরে না! আমার অবুঝ দুই শিশু এই আশা নিয়ে রাতে ঘুমাতে যায় ভোর হলেই তাদের বাবা ফিরে আসবে! প্রতিদিন উঠে নতুন সূর্য দেখে। প্রতিদিনই হয় ভোর! কিন্তু ওদের বাবা আর ফেরে না! আপনাদের মাধ্যমে আজ আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি আমার স্বামী সবুজকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দিন। দোহাই প্রধানমন্ত্রী আমাকে স্বামী হারা করবেন না। আমার অবুঝ দুই সন্তানকে এতিম করে দেবেন না। আমার শ্বশুর-শাশুড়িকে সন্তান হারানোর মত কষ্ট যেন সারাটা জীবন বয়ে বেড়াতে না হয়! প্রিয় জননেত্রী আমরা পরিবারের সদস্যরা আপনার কাছে করজোড়ে সবুজের প্রাণ ভিক্ষা চাচ্ছি। স্বামীর সন্ধান লাভের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে আজ আমরা বড়ই ক্লান্ত। তাই আজ আবারও আপনাদের দুয়ারে এসেছি। স্বামীর সন্ধান লাভের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎও করতে চান। কিন্তু কিছুতেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না বলে সাংবাদিকদের জানান। সংবাদ সম্মেলনে সবুজের দুই সন্তান প্রেম ও মেয়ে সুমাইয়া, সবুজের মা সাহেদা খাতুন ও শাশুড়ি শিরিনা আক্তার উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে জিনিয়া দাবি করেন তার স্বামী কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজ ও কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আখতারুজ্জামান লাবু গত ২১ আগস্ট নিখোঁজ হন। আগের দিন রাতে শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের সর্বশেষ কথা হয়। গাজীপুর জেলার মাওনা এলাকার ড্রিম স্কয়ার রিসোর্ট থেকে ওই দিন ভোরে র্যাব সদস্যরা প্রথমে রিসোর্টের মালিক মনিরুজ্জামান মনিরকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে ওই রিসোর্ট থেকে কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আখতারুজ্জামান লাবু এবং তার স্বামী কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পরের দিন শনিবার র্যাব সদস্যরা ওই রিসোর্টের মালিক মনিরুজ্জামান মনিরকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু র্যাব তার স্বামী শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজ ও আক্তারুজ্জামান লাবুকে গ্রেফতার করার বিষয়টি অস্বীকার করে। র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাবু-সবুজকে গ্রেফতারের বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করলেও র্যাব সদস্যরা রিসোর্ট মালিক মনিরুজ্জামান মনিরকে এবং পরবর্তীতে গত ২৬ অগস্ট কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আখতারুজ্জামান লাবুকে ছেড়ে দেয়। লাবু ছাড়া পাওয়ার তার মাধ্যমে আমরা পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত হয়েছি র্যাব-১ এর সদস্যরা তাদেরকে (লাবু-সবুজকে) গ্রেফতারের করে। ছাড়া পাওয়ার পরও র্যাবের ভয়ে লাবু এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি হচ্ছে না। লাবু ফিরে আসলেও তারা সবুজের কোনো সন্ধান পাচ্ছেন না। গত ১৫ আগস্ট কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর গেটে শোক দিবসের কর্মসূচি চলাকালে সবুজ নামে একজন খুন হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শেখ সাজ্জাদ হোসেনের স্ত্রী জিনিয়া বলেন, আমরা বার বার বলে এসেছি এখনো বলছি সবুজ হত্যাকাণ্ড একটি পূর্ব পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। রাজনৈতিক ফয়দা হাসিলের জন্য কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজ গ্যাং রাজনৈতিক ফয়দা হাসিল এবং রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হওয়ার জন্য অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। আমার স্বামী কুষ্টিয়ার গরীব-দুঃখীসহ সকলের বন্ধু কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজকে আসামি করেছে। আমরা আবারও বলছি শুধু বলছি নয়: জোর গলায় দাবি করছি সবুজ কোনভাবেই এই হত্যাকেণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়। যে কারণে আমার দেবর যে কিনা সেদিন ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিল না আরিফুর রহমান সজীব এবং মামা শ্বশুর দুলালকেও আসামি করা হয়েছে। জিনিয়া বলেন, আমরা কুষ্টিয়ার উন্নয়নের রূপকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জননেতা মাহাবুব উল আলম হানিফ এবং প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আর্তি জানাচ্ছি আমার স্বামীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হোক। আমার স্বামী যদি সত্যিকার অর্থেই কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থেকে থাকে তাহলে তাকে প্রচলিত আইনের আওতায় সোপর্দ করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিন। বিচারে যদি আমার স্বামী দোষী সাবস্ত্য হয় তাহলে তার ফাঁসি হোক তাও আমরা মেনে নিতে রাজি আছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দোহাই আপনার বিনা অপরাধে আমার স্বামীকে কোনো সাজা পেতে দেবেন না। আমার স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা দিন। দয়া করে আমাদের কান্না থামান। আল-মামুন সাগর/এমজেড/পিআর
Advertisement