দক্ষিণ এশিয়ার রুই জাতীয় মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে নৃশংস কায়দায় একটি ডলফিনকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। শুক্রবার (৮ মে) সকালে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার উরকিরচর ইউনিয়নের জিয়া বাজার এলাকার ছায়ারচর নামক স্থান থেকে ডলফিনটির ক্ষতবিক্ষত দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
Advertisement
তবে কে বা কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। ডলফিনের নিরাপদ বিচরণ ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত হালদা নদীতে একের পর এক ডলফিনের মৃত্যুকে ‘অশনিসংকেত’ হিসেবে দেখছেন পরিবেশবাদীরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি বলছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত হালদায় ২৪টি ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এই প্রথম কোনো ডলফিনের মৃতদেহে এভাবে ধারালো কিছুর গভীর আঘাত দেখা গেল।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মনজুরুল কিবরিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘সকালের দিকে ডলফিনটিকে হত্যা করা হয়। ডলফিনটির দৈর্ঘ্য ৫ ফুট ২ ইঞ্চি এবং ওজন ৫২ কেজি। গত ২১ মার্চ ২৩তম ডলফিনের মৃত্যুর পর ১৮ দিনের মধ্যে এটি ২৪তম ডলফিনের মৃত্যু। ডলফিনটিকে মাথা বরাবর আড়াআড়িভাবে এবং ঘাড় থেকে লেজ পর্যন্ত দৈর্ঘ্য বরাবর কাটা হয়েছে।’
Advertisement
ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলছেন, হত্যাকাণ্ডের এই চিহ্ন বিগত সময়ের মৃত ডলফিনগুলোর চেয়ে ভিন্ন। তার মতে, এভাবে ডলফিন হত্যাকাণ্ড নতুন ইঙ্গিত বহন করে।
‘ধারণা করা হচ্ছে, কোনো জেলের অবৈধ জালে আটকা পড়লে ডলফিনটিকে ডাঙায় তোলা হয় এবং কেটে চর্বি নেয়ার চেষ্টা করা হয়। ডলফিনটির মুখে জালের একটি অংশ আছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, ডলফিনটি মাছ ধরার অবৈধ জালে আটকে পড়েছিল। পরে তীরে তুলে কেটে হত্যা করা হয়েছে। এসব ডলফিনের চর্বি থেকে নারীদের রোগমুক্তি ঘটে বলে এলাকায় এক রকম কুসংস্কার আছে। আমাদের ধারণা, সে কারণে ডলফিনকে এভাবে নৃশংস কায়দায় হত্যা করা হয়েছে’-যোগ করেন হালদা নদীর এই গবেষক।
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনাটি হালদা নদীর ডলফিন সংরক্ষণের জন্য একটি ‘অশনিসংকেত’।
শুক্রবার সকালে নদীর মদুনাঘাট সংলগ্ন অংশে ডলফিনটি ভাসতে দেখে মা মাছ পাহারায় নিয়োজিত বেসরকারি সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (আইডিএফ) স্বেচ্ছাসেবকরা স্থানীয় প্রশাসনকে জানায়।
Advertisement
হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, জোয়ারের সময় নদীতে ভেসে আসা ডলফিনটি মদুনাঘাট অংশ থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে সেটি নয়ারহাট এলাকায় মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়।
আবু আজাদ/এসআর/এমএস