আর ঢাক-ঢোল ছাড়া দুর্গোৎসব? ভাবাই যায় না। তাইতো শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী ঢাক-ঢোলের হাট। প্রায় ৫শ বছরের পুরনো এ বাদ্যযন্ত্রের হাট সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে। দিনে দিনে দুর্গোৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এ হাট। বাদ্যের তালে তালে মণ্ডপে মণ্ডপে নাচ-গান-আরতি আর দেবি বন্দনা দুর্গাপূজার প্রধান অনুষঙ্গ। ঢাক-ঢোলের এ হাটে যেন জানান দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমন। বাহারি রঙ আর আকারের ঢাক-ঢোল, বাঁশি, কাস, খোলসহ অসংখ্য বাদ্যযন্ত্রের পসরা সাজিয়েছ্নে এ দোকানিরা। বাদ্যযন্ত্রসহ যন্ত্রীরা এসেছেন, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে। স্থানীয়রা জানান, নামে হাট হলেও এ হাটে আসলে কোনো বাদ্যযন্ত্র বিক্রি হয় না। বিক্রি হন যন্ত্রীরা। যন্ত্রীসহ পছন্দের বাদ্যটি ভাড়া হয় এ হাটে। পূজা শুরুর আগে দরদাম ঠিক করে বায়নার টাকা দিয়ে বাদ্যযন্ত্রসহ যন্ত্রীদের সঙ্গে করে নিয়ে যায় পূজার আয়োজকরা। পুরো হাট জুড়ে যেন অন্যরকম বাদ্যযন্ত্রের প্রতিযোগিতা। সবখানে উৎসবের রঙ। যন্ত্রীরা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নেচে-গেয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছেন। দোকানিরা জানালেন, এ হাটে বিক্রি হচ্ছে ভালো। আর হাতের নাগালে পছন্দের বাদ্যসহ যন্ত্রী পেয়ে খুশি ক্রেতারাও। তবে পূজার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দাম একটু বেশি। একেকজন ঢাকি চার থেকে পাঁচ হাজার, ঢুলি দুই হাজার, বংশীবাদক দুই থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছেন। আর ছোট ব্যান্ডদল ১৫ থেকে ২০ এবং ৭/৮ জনের বড় দল ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছেন।জানা গেছে, প্রায় ৫শ বছর ধরে কটিয়াদীতে বসছে ঢাক-ঢোলের হাট। জনশ্রুতি আছে, ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে রাজা নবরঙ্গ রায় কটিয়াদীর চারিপাড়ায় তার রাজ প্রাসাদে প্রথম দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। রাজবাড়ির পূজায় ঢাক, ঢোল, বাঁশিসহ অংশ নিতে খবর পাঠানো হয়, বিক্রমপুর পরগনায় যন্ত্রীদের কাছে। সে সময় বিক্রমপুর থেকে আসা যন্ত্রীরা পূজার দুই দিন আগে কটিয়াদী- মঠখোলা সড়কের পাশে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে যাত্রাঘাট নামক স্থানে এসে জমায়েত হতেন। সেই থেকে প্রতিবছর এখানে বসে বাদ্য ও বাদকের হাট। পরে এ হাট স্থানান্তর করা হয় কটিয়াদীর পুরাতন বাজারের মাছ মহাল এলাকায়।কটিয়াদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম জাগো নিউজকে জানান, ঢাকের হাটকে ঘিরে কটিয়াদী বাজার এলাকায় শত শত মানুষের সমাগম ঘটে। হাটের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারের সমন্বয়ে একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি। ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয় স্থানীয় প্রশাসন।কিশোরগঞ্জের ঢাক-ঢোলের হাটটিই দেশের একমাত্র এবং সবচেয়ে বড় বাদ্যযন্ত্রের হাট। দুর্গাপূজা শুরুর আগের তিনদিন এ হাট বসে। দিন দিন হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা বাড়তে থাকায় বর্তমানে বাজারে জায়গা সঙ্কুলান হচ্ছে না। তাই হাটের জন্য একটি ভালো স্থান নির্বাচন করার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। নূর মোহাম্মদ/এমজেড/পিআর
Advertisement