চট্টগ্রামে হু হু করে বাড়ছে মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ। গতকাল বৃহস্পতিবার একদিনেই জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯ নারী-পুরুষ। এর মাঝেই আগামী ১০ মে থেকে শপিংমলগুলো খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তে আতঙ্ক চেপে বসেছিল নগরবাসীর মনে। তবে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেননি। নগরের প্রায় সব বড় শপিংমল ও দোকান মালিক সমিতি রোজায় তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে একমত হয়েছেন। তারা বলছেন, ‘জীবন বাঁচলেই জীবিকা।’
Advertisement
শুক্রবার বিকেলে এ বিষয়ে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন চট্টগ্রামের পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী মিমি শপিং সেন্টার মালিক সমিতির সভাপতি মো. জাকির হোসেন। বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা অনেক ভেবেছি, দোকানের মালিকদের সঙ্গেও কথা বলেছি। জানি তারা ভালো নেই, দুই মাসের বেশি সময় ধরে মার্কেট বন্ধ। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা মেনে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
‘আমরা যদি ১০ তারিখ (মে) মার্কেট খুলি, তারপর কয়দিন খোলা রাখতে পারব— সেটাই প্রশ্ন। যতই বলা হোক না কেন, ঈদ-বাজারে কোনোভাবেই সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা সম্ভব হবে না। শুরুতেই দোকানিরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাবেন। পরে তারাই ক্রেতাদের সংস্পর্শে এসে পুরো চট্টগ্রাম শহরে রোগটা ছড়িয়ে দেবেন। তাই আমাদের এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। জীবন বাঁচলেই জীবিকা। আমি না বাঁচলে, পরিবার না বাঁচলে, সে টাকা খাবে কে?’
তিনি আরও বলেন, নগরের বেশির ভাগ শপিং সেন্টার ঈদের আগে না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যবসায়ী সমিতিগুলো। শুক্রবার বিকেলে নগরের বিভিন্ন শপিং সেন্টারের দোকান মালিক সমিতি ও ব্যবসায়ী সমিতির সম্মিলিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
Advertisement
নগরের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক শপিংমল সানমার ওশান সিটি দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আসাদ ইফতেখার জাগো নিউজকে বলেন, ‘নগরের বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমল ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে আমরা বেশ কয়েকদিন ধরেই কথা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। আজ সম্মিলিত বৈঠকে এ রোজার ঈদের আগে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় শপিংমলগুলোর অন্তত নয়টি শপিং সেন্টার ও মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জীবনের তাগিদেই এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’
এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের যে বড় শপিংমলগুলো না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেগুলো হচ্ছে- সানমার ওশান সিটি, মিমি সুপার মার্কেট, ফিনলে স্কয়ার, আফমি প্লাজা, চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স, কল্লোল সুপার মার্কেট, আমিন সেন্টার, সেন্ট্রাল প্লাজা, খুলশী কনকর্ড টাউন সেন্টার।
৯২ শতাংশ ব্যবসায়ী মার্কেট বন্ধের পক্ষে
চট্টগ্রামে রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় ‘মধ্যবিত্তের বাজার’ বলে খ্যাত দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ হকার্স মার্কেটের ১১০টি দোকান মালিক সমিতি তাদের মার্কেটগুলো বন্ধ রাখতে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তামাকুমুন্ডিলেন বণিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে ব্যাপকভাবে মতামত নিয়েছি। মালিক-শ্রমিক সবাই একমত, আগে জীবন, তারপর জীবিকা। আমি বাঁচলেই না খাবার খাব।’
‘আমরা এ বিষয়ে মোবাইলে সবার সাথে কথা বলেছি, অনলাইন জরিপও করেছি। ৯২ শতাংশ দোকান মালিক ও কর্মচারীরা মার্কেট বন্ধ রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। আগামীকাল (শনিবার) পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে আমাদের বৈঠক আছে, ঘোষণাটা সেখান থেকেই আসতে পারে’— বলেন মোজাম্মেল হক।
মার্কেট বন্ধে অনলাইন জরিপ
খুলশী কনর্ড টাউন সেন্টার শপিংমল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ রুম্মান আহাম্মেদ বলেন, ‘কাল খুলশী টাউন সেন্টার বন্ধ ঘোষণার পর অনেক বেশি টেনশনে ছিলাম। কিন্তু আমি বরাবরই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে, আমরা কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেইনি। তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের বড় সব শপিংমল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমল খোলার জন্য সরকার অনুমতি দিলেও সাধারণ মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে করোনার সংক্রণ রোধে চট্টগ্রামের শপিংসেন্টারগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।’
এদিকে আগামীকাল শনিবার (১১ মে) চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট, ইউনেস্কো সিটি সেন্টার, সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেট ও লাকি প্লাজার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেট ও লাকি প্লাজা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘প্রথমত, আমাদের প্রস্তুতি নেই। দ্বিতীয়ত, করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি ঈদ-বাজারে মেনে চলা অসম্ভব। নিজেদের ও কর্মীদের জীবন, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।’
তবে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, চট্টগ্রামের সভাপতি সালেহ আহমেদ সোলাইমান জাগো নিউজকে বলেন, সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমল খোলার জন্য অনুমতি দিয়েছে। তাই কেউ যদি চান তিনি শপিংমল বা দোকান বিধি মেন খোলা রাখতে পারবেন। এজন্য কাউকে কৈফিয়ত দিতে হবে না। শুক্রবার নগরের বিভিন্ন মার্কেট মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ৩১ মে পর্যন্ত দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে সবাই একমত হয়েছেন।
বন্ধ থাকবে নিউ মার্কেটও
বেসরকারি মার্কেটগুলোর পাশাপাশি চট্টগ্রামের সমাজসেবা অধিদফতরের আওতায় থাকা চট্টগ্রাম বিপণিবিতান বা নিউ মার্কেটও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক হাসান মাসুদ। তিনি বলেন, মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আবু আজাদ/এমএআর/পিআর