দেশজুড়ে

এই না হলে মেম্বারকন্যা, এবার সাংবাদিককে দেখে নেয়ার হুমকি!

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপকর্মের বিরুদ্ধে রিপোর্ট প্রকাশের জেরে সাংবাদিকের ওপর হামলার পর এবার তার এক জুনিয়র সহকর্মীকে মোবাইল ফোনে দেখে নেয়ার হুমকি দিলেন ইউপি মেম্বারের কন্যা!

Advertisement

গত রোববার সন্ধ্যায় উপজেলার বানিয়ারচর বউবাজার এলাকায় এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের জেলা প্রতিনিধি চৌধুরী হাসান মাহমুদ ও তার ক্যামেরাম্যান প্রদীপ সরকারের ওপর হামলার পরপরই জলিরপাড় ইউনিয়নের মেম্বার ও হামলার ঘটনার মাস্টারমাইন্ড শ্রিপ্র মোহন্ত হারুর মেয়ে জেসমিন মোহন্ত (৩২) মোবাইল ফোনে আরেক সাংবাদিককে দেখে নেয়ার হুমকি দেন।

তিনি সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং তার মায়ের বিরুদ্ধে রিপোর্ট প্রকাশের জন্য একই পরিণতি ভোগ করার হুমকি দেন ওই সাংবাদিককে।

সম্প্রতি মুকসুদপুরের বানিয়ারচরের তালবাড়ি এলাকায় দেশীয় মদ তৈরির সরঞ্জামসহ স্থানীয় তিন যুবককে আটক করে এলাকাবাসী। ইউপি মেম্বার শ্রিপা মোহন্ত হারুর আত্মীয় হওয়ায় তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ না করে ছেড়ে দেয়া হয়। স্থানীয়দের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এটিএন বাংলার সাংবাদিকসহ আরও কয়েকজন সাংবাদিক ওই এলাকা পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করেন।

Advertisement

এছাড়া এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে এবং নিরীহ মানুষের সঙ্গে কথা বলে সাংবাদিকরা ওই মেম্বারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য জানতে পারেন। মেম্বার বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী (সোশ্যাল সেফটি নেট) কার্যক্রমে স্থানীয়দের সুবিধা দেয়ার কথা বলে অবৈধ অর্থ আদায়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে খবর পরিবেশন করেন সাংবাদিক হাসান মাহমুদ। এ ঘটনায় ওই ইউপি সদস্য তার ওপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হন।

গত রোববার (৩ মে) সন্ধ্যায় মুকসুদপুরে সরকারি ত্রাণ কার্যক্রমের সংবাদ সংগ্রহ শেষে গোপালগঞ্জ শহরের বাড়িতে ফেরার পথে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট সড়কের বানিয়ারচর বউবাজার এলাকায় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ওঁৎ পেতে থাকা কয়েকজন সন্ত্রাসী এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের জেলা প্রতিনিধি চৌধুরী হাসান মাহমুদের পথরোধ করে। তারা হাসান মাহমুদ ও তার ক্যামেরাম্যান প্রদীপ সরকারকে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে রাস্তার পাশে নিয়ে লাঠিসোটা ও লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। ছিনিয়ে নেয়া হয় তাদের সঙ্গে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্রসহ ভিডিও ক্যামেরা।

একপর্যায় সন্ত্রাসীরা ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা চালায়। গুরুতর আহত সাংবাদিকের ভিডিও ধারণ করে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন রকম অপপ্রচার চালায় তারা।

পরে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ গুরুতর অবস্থায় হাসান মাহমুদকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ক্যামেরাম্যান প্রদীপ সরকার স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন।

Advertisement

এদিকে, সাংবাদিক হাসান মাহমুদ ও তার ক্যামেরাম্যান প্রদীপ সরকারের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় গোপালগঞ্জে কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের জন্ম দেয়। দেশজুড়ে ওঠে নিন্দার ঝড়। ওই ঘটনায় হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান জেলার সাংবাদিক নেতারা। অন্যথায় ভবিষ্যতে কঠোর কর্মসূচির হুমকি দেন তারা।

হামলার ঘটনায় চৌধুরী হাসান মাহমুদ বাদী হয়ে মুকসুদপুর থানায় একটি মামলা করেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না বলে বাদীর অভিযোগ।

এ বিষয়ে মুকসুদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মীর্জা আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তদন্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে বলেন। তদন্ত কর্মকর্তা মুকসুদপুর সিন্ধিয়াঘাট পুলিশের এসআই হাবিবুর রহমান বলেন, আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এসএম হুমায়ূন কবীর/এমএআর/জেআইএম