রাজধানীর বাজারে গেলেই পাওয়া যাচ্ছে আনারস। ঢাকার বাজারে এ আনারসের বড় অংশই আসছে রাঙ্গামাটি থেকে। তবে ঢাকা ও রাঙ্গামাটির দামের মধ্যে রয়েছে বিস্তার ফারাক। রাঙ্গামাটির থেকে ১৫ গুণ বেশি দামে আনারস বিক্রি হচ্ছে ঢাকায়।
Advertisement
ঢাকার বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি পিস লম্বা আনারস বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। আর গোল ছোট আনারসের পিস বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকা। ঢাকার বাজারে লম্বা যে আনারস বিক্রি হচ্ছে তার বেশিরভাগ আসছে রঙ্গামাটি থেকে।
এদিকে রাঙ্গামাটির ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, তারা আনারসের পিস বিক্রি করছেন ৪-৫ টাকা। অর্থাৎ রাঙ্গামাটির থেকে ১৫ গুণ বেশি দামে ঢাকায় আনারস বিক্রি হচ্ছে।
দামের এমন পার্থক্যের কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঢাকার পাইকারি বাজারে আনারসের দাম বেশি। পাইকারিতে এক পিস আনারস কেনা পড়ছে ৪০ টাকার ওপরে।
Advertisement
অপরদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাঙ্গামাটি থেকে ঢাকায় এখন ঠিকমত আনারস আনা সম্ভব হচ্ছে না। আবার যা আনা হচ্ছে তার গাড়ি ভাড়া অনেক পড়ছে। সব মিলে এক পিস আনারসের পেছনে খরচ পড়ছে ২৫ টাকার মতো।
রামপুরায় ভ্যানে আনারস বিক্রি করা জাকির বলেন, আমাদের এই আনারস রাঙ্গামাটির। এ আনারস অনেক মিষ্টি। আমরা অল্প লাভে আনারস বিক্রি করি। একটা আনারস পাইকারি কেনা পড়ছে ৪০ টাকা। আমরা ৫০ টাকায় বিক্রি করছি। খরচ পরিশ্রম মিলালে খুব একটা লাভ হয় না।
খিলগাঁওয়ে ৬০ টাকা পিস আনারস বিক্রি করা নান্নু বলেন, এখন আনারসের দাম একটু বেশি। তবে কিছুদিন পর দাম কিছুটা কমবে। তখন হয় তো ২০-৩০ টাকার মধ্যে আনারস পাওয়া যাবে।
রাঙ্গামাটিতে আনারসের পিস ৪-৫ টাকা, তাহলে আপনারা ৬০ টাকা বিক্রি করছেন কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রাঙ্গামাটির আনারস অনেক ভালো। পাইকারের তথ্য অনুযায়ী আমাদের এই আনারসও রাঙ্গামাটি থেকে আনা। কিন্তু রাঙ্গামাটিতে আনারসের পিস চার টাকা এটা জানা নেই। আমরা যেখান থেকে কিনি সেখানে এক পিস আনারসের দাম পড়ে ৪০ টাকার ওপরে।
Advertisement
পাইকারি ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর বলেন, আনারসের দাম এক একদিন এক এক রকম থাকে। এখন সাধারণত ২৫-৩০ টাকার মধ্যে আনারস বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার বাহির থেকে এখন মাল আনতে ঠিকমত পরিবহন পাওয়া যাচ্ছে না। আবার যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে তার ভাড়া অনেক বেশি। এ কারণে ঢাকায় আনাররেস দাম একটু বেশি। তবে খুচরায় আনারসের দাম ৬০ টাকা হওয়ার কথা নয়। ৪০ টাকার মধ্যে থাকা উচিত।
এদিকে আনারসের রাজধানী নামে পরিচিত রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলার আনারস বাগানের মালিক সুদাকর চাকমা বলেন, এ বছর ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু করোনার জন্য আনারস বাজারে নিলেও বিক্রি করতে পারছি না। আনারস সব এক সঙ্গে পেকে যাওয়ায় বিপদে পড়েছি। কারণ আনারস বেশিদিন রাখা যায় না। দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই পাকা ফল ফেলে দিতে হচ্ছে।
আরেক আনারস চাষী জীবন কুমার চাকমা বলেন, আনারস নিয়ে এখন কী করব ভেবে পাচ্ছি না। আমাদের থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ফল কিনে নিয়ে যায়। তারা এখন বলছে পরিবহন সমস্যার জন্য ফল বেশি কিনতে পারবে না। আবার যা কিনছে তারা সঠিক দাম দিচ্ছে না। প্রতি পিস আনারসের দাম ৪-৫ টাকা দিচ্ছে তারা। এতে তো আমার কীটনাশকের দামও উঠবে না।
রাঙ্গামাটির ট্রাক মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি আইয়ুব খান বলেন, গত বছর এই সময় প্রতিদিন ৮০-৯০টি আনারসের ট্রাক গেলেও বর্তমানে সেটি দাঁড়িয়েছে ১০-১২টিতে। এতে হতাশ পরিবহন সেক্টরে জড়িত মালিক-শ্রমিকরা।
রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও পাহাড়ে আনারসের ভালো ফলন হয়েছে। এ বছর জেলায় ২১২৫ হেক্টর জমিতে ৬০ হাজার মেট্রিক টন আনারস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এমএএস/এএইচ/এমএস