সীমান্ত খুললে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় পেট্রাপোল-বেনাপোল বর্ডারে পণ্য পরিবহন বন্ধ রেখেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ফলে সীমান্তে হাজার হাজার পণ্যবাহী ট্রাক আটকে রয়েছে। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সীমান্ত খুলে দিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে চিঠি দিয়েছে।
Advertisement
চিঠিতে বলা হয়েছে, এর ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি লঙ্ঘিত হচ্ছে।
করোনা সংক্রমণ রোধে গত ২৪ মার্চ দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করে ভারত। বন্ধ করে দেয়া হয় প্রত্যেক সীমান্তও। পাশাপাশি সাময়িকভাবে নেপাল, ভুটান এবং বাংলাদেশে পণ্য চলাচলেও স্থগিতাদেশ জারি হয়। কিন্তু গত ২৪ এপ্রিল কেন্দ্রীয় সরকার সীমান্তবর্তী রাজ্যকে নির্দেশিকা দিয়ে জানায়, সীমান্ত খুলে দিতে হবে। যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্য প্রতিবেশী দেশে পাঠানো যায়।
চিঠিতে বলা হয়, সীমান্ত না খুললে, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তি আছে, তা লঙ্ঘিত হবে। রাজ্য সরকার সীমান্ত খুলে কীভাবে নতুন করে বাণিজ্য শুরু করছে, সে বিষয়ে দ্রুত কেন্দ্রকে রিপোর্টও দিতে বলা হয়।
Advertisement
তবে অভিযোগ ওঠেছে কেন্দ্রের এ নির্দেশের পরেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাংলাদেশ সীমান্ত খুলতে রাজি হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল সরকারের বক্তব্য, সীমান্তে পণ্য যাতায়াত শুরু হলে বাংলাদেশ থেকে করোনা সংক্রমণ পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে পড়বে।
সীমান্ত ব্যবসায় যুক্ত এক ব্যবসায়ী জানান, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে অন্তত দুই হাজার পণ্যবাহী ট্রাক পেট্রাপোল সীমান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ওষুধ, রাসায়নিক, খাদ্যদ্রব্য-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস সেখানে আছে। শুধু তাই নয়, বেনাপোলের দিকেও আটকে আছে বেশ কিছু ভারতীয় ট্রাক। যেগুলো দেশে ঢুকতে দিচ্ছে না পশ্চিবঙ্গ সরকার।’
জানা গেছে, গত বুধবার বিকেলে এ বিষয়ে একটি কড়া চিঠি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা। তাতে বলা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব সীমান্ত খোলার ব্যবস্থা করুক রাজ্য। নইলে বিষয়টিকে আইনভঙ্গ হিসেবেই ধরা হবে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে পণ্য পাঠাতে না পারলে আন্তর্জাতিক মহলে ভারতকে জবাবদিহি করতে হবে।
তবে মুখ্যসচিব সরাসরি এ বিষয়ে কিছু না বললেও রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব জানিয়েছেন, এ বিষয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে কেন্দ্রকে উত্তর দেয়া হবে।
Advertisement
স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘রাজ্যের শীর্ষ আমলাকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব কী লিখেছেন, সেটা মিডিয়ার জানার কথা নয়। লকডাউন প্রোটোকল মেনেই কাজ হচ্ছে। পেট্রাপোলে কিছু পাবলিক ইস্যু রয়েছে।’
উল্লেখ্য, প্রতি বছর ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসা-বাণিজ্য হয়। ভারত থেকে ওষুধ, রাসায়নিক-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বাংলাদেশে পাঠানো হয়। পাঠানো হয় খাদ্য সামগ্রীও। গত বছর পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করেছিল ভারত। যা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যথেষ্ট উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। করোনা কালে নতুন করে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে দু'দেশের মধ্যে এখনও কূটনৈতিক বাক্য বিনিময় হয়নি। তবে পরিস্থিতি এমন চলতে থাকলে আবারও উত্তেজনা তৈরি হতে পারে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
এএইচ/এমএস