মতামত

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, হাতকড়া ও গুজবের ডালপালা

বিশ্ব এখন করোনা আক্রান্ত। চারিদিকে মৃত্যুর ছোবল। বিশ্বের ক্ষমতাধর বলে কথিত আমেরিকার অবস্থা খুবই নাজুক। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রতিদিন যে ব্রিফিং দিতেন তা এখন আর দিচ্ছেন না নিয়মিত। তারপরও বিভিন্ন মিডিয়ার মুখোমুখি হচ্ছেন। তার ছায়াসঙ্গী হয়ে আছেন সাংবাদিকরা। তিনি সাংবাদিকদের শাসাচ্ছেন! পাশাপাশি সাংবাদিকরাও তার সমালোচনা করেই যাচ্ছেন! কী হয়নি, কী হতে পারত এমন অনেক সমীকরণ আমাদের সামনে। তারপরও লাশের পাহাড় ডিঙিয়েই হুংকার দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। একপর্যায়ে ট্রাম্প বলেছেন, আমি যদি প্রায় ৩২ কোটি আমেরিকানের হাতে একটা করে করোনার ভ্যাকসিন এই মুহূর্তে ধরিয়ে দিই- তারপরও আপনারা সাংবাদিকরা বলবেন, কেন আরও এক সপ্তাহ আগে দিলাম না!

Advertisement

বিষয়টি এ জন্য বলছি, ট্রাম্পকে জবাবদিহিতা করেই যেতে হচ্ছে। হবেও। এছাড়া কোনো উপায় নেই। কিন্তু তাই বলে 'মতপ্রকাশের স্বাধীনতা' বলতে যা বোঝায়, এর পুরোটা কি মার্কিন মুলুকে আছে? এই প্রশ্নের জবাব বিভিন্নভাবে দেয়া যায়। সবকথার শেষ কথা হচ্ছে, একটা পর্যায়ে 'হাই লেবেল' থেকে বলে দেয়া হয়, খামোশ থাকুন। বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না।

আমেরিকা আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বাংলাদেশে কেউ যদি লিখেন- 'বিদেশিরা বাংলাদেশ ছেড়ে যাচ্ছেন কেন?', তাহলে এর পেছনে তিনি ঘায়েল করতে চাইবেন সরকারকে। বিষয়টি কিন্তু সে রকম নয়। বিদেশিরা বাংলাদেশ ছেড়ে যান- নিজেদের মাটির টানে, স্বজনের টানে। ওটা তার দেশ। সেখানে তাকে যেতেই হবে। কেউ যদি বুঝাতে চান, বাংলাদেশে করোনা 'মহারকমের' মহামারি আসছে তাই বিদেশিরা এই দেশ ছাড়ছে- এটা হচ্ছে সুক্ষ্ম উসকানি। এই উসকানি তো মতপ্রকাশের আওতায় পড়ে না। এটা পড়ে গুজবের আওতায়।

বাংলাদেশ, সেই দেশ- যেখানে একজন লোক লাইফ সাপোর্টে থাকলে দশ ঘণ্টা আগেই তাকে মৃত বলে নিউজ করে ফেলা হয়। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার হিড়িক পড়ে যায়। কার আগে কে দেবে! কে দেবে এই মরার ব্রেকিং নিউজটি! আচ্ছা, এটা কি কোনো মানবিক সাংবাদিকতার আওতায় পড়ে? না পড়ে না। তাহলে কিছু সাংবাদিক, স্ট্যাটাসবাজ এই কাজটি অহরহ কেন করছেন? কী মতলব তাদের? বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়া এখন মানুষকে মারমুখো করে তুলেছে। এটাকে হীনস্বার্থে ব্যবহার করছেন অনেকেই! এর মাজেজা কী? তারা কি জানেন না, একটি মিথ্যা সংবাদ অন্য একজন মানুষের হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে!

Advertisement

বাংলাদেশ অনেক জটিল সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই করোনাকালে সরকারি ত্রাণ মেরে দিচ্ছে কিছু লোক। এরা সরকারি দলের- না বেসরকারি দলের, তা মুখ্য বিষয় নয়। মুখ্য বিষয় হচ্ছে এরা চোর। এরা লুটেরা। এরা ডাকাত। এরা মানুষের ন্যায্য অধিকার হরণ করছে। চুরি করছে। চোর-ডাকাতদের সম্মিলিতভাবেই ধাওয়া করতে হয়। এটাই নিয়ম। কেউ এদের পক্ষ নেবেন- তা হতে পারে না। হতে দেয়া যায় না।

বাংলাদেশে দুর্নীতি নিয়ে সাংবাদিকরা সোচ্চার ভূমিকা পালন করছেন। এটা সরকারের প্রশংসার দাবি রাখে। মনে রাখতে হবে, সাংবাদিকরা সবসময় মাটি ও মানুষের প্রতিনিধি হয়েই কাজ করছেন, করবেন। না, যারা গুজবের হোতা আমি তাদের কথা বলছি না।

শফিকুল ইসলাম কাজল নামে একজন ফটোসাংবাদিক কিছুদিন আগে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন! এর ২৩ দিন পর তাকে পাওয়া যায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে! এরপরই তাকে হাতকড়া পরিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। শফিকুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছিল। এরপর তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিরও আরেকটি মামলা হয় বলে মিডিয়ায় খবর আসে। তার বিরুদ্ধে মামলা হতেই পারে। কিন্তু তাকে হাতকড়া পরিয়ে একজন উদভ্রান্ত মানুষের মতো পুলিশের গাড়িতে তুলতে হবে কেন? তিনি কি দাগী আসামি? তিনি কি পালিয়ে যাবেন? তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো কি জামিনযোগ্য নয়? যদি হয়ে থাকে, তাহলে তার প্রতি এমন অমানবিক আচরণ কেন করা হবে? এই দেশে একাত্তরের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের হাতেও তো হাতকড়া পরানো হয়নি। তাহলে কেন একজন সাংবাদিকের হাতে হাতকড়া? আবার ক্ষমতাবান হলেই দমানোর জন্য মামলা করতে হবে সাংবাদিক, সম্পাদকের বিরুদ্ধে? এটা তো বিচারিক রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিচালকদের কর্ম হওয়া উচিত নয়।

বাংলাদেশে অপরাধজগত কারা নিয়ন্ত্রণ করছে- তা এই দেশের চৌকস গোয়েন্দা বাহিনীর না জানার কথা নয়। জানেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। যদি না জানতেন, তাহলে এই সাম্প্রতিক সময়ে 'প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই অমুক গ্রেফতার হয়েছেন'- এমন কথা বলতেন না আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের। তারা সবই জানেন।

Advertisement

এই যে জানা, এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে গত কয়েকদিনে আরও কিছু লোককে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন। পরে পুলিশে তাদের সোপর্দ করা হয়েছে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা কী করছিলেন? অনলাইনে কী ছিল তাদের অ্যাক্টিভিটি? তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর সাথে যুক্ত এমন কিছু লোকেরও নাম এসেছে, যারা বিদেশে থেকে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের গুজব, মিথ্যা, বানোয়াট কথাবার্তা বলেই যাচ্ছে।

বিদেশে থেকে ইউটিউব চ্যানেল খুলে একটি জাতি, একটি রাষ্ট্র, একটি পতাকার বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলা খুব কঠিন কিছু নয়। এরা সকলেই নিজেদের গায়ে ভুয়া লেবেল লাগিয়ে দাবি করছে- আমরা বাংলাদেশি। বাংলাদেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে, বাংলাদেশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারা কথা বলছে বলে দারি করছে। কিন্তু বিদেশে থেকে যারা এসব উসকে দিচ্ছে- তাদের মতলবটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত এবং সরকারবিরোধী। ব্যক্তিগত বলছি এ জন্য, এরা মূলত বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে, ঘোট পাকিয়ে বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছে কিংবা নিতে চাইছে। বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনায় এরা এতটাই হীন মতলববাজ যে, প্রায় ৭৪ হাজার করোনামৃত মানুষের দেশে অবস্থান করে তারা বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা উসকানি দিয়েই যাচ্ছে। যে বাংলাদেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা এখনও দুইশর নিচে (এই লেখার সময় পর্যন্ত)।

বাংলাদেশে একজন আলোকচিত্রি মিথ্যা ফেসবুক লাইভ করে গুজব উসকে দিতে চেয়েছিলেন। একজন অভিনেত্রী মিথ্যা উসকানি দিয়ে ফেসবুকে লাইভ দিয়েছিলেন। দেশের মানুষ সতর্ক থাকায় বড় কোনো অঘটন এরা ঘটাতে পারেনি। কিন্তু তারা সেটাই চেয়েছিল। এই দুজনকেই আইনের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। এই গুজব প্রচার কি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা? যদি না হয়ে থাকে- তাহলে রাষ্ট্র তো ব্যবস্থা নেবেই।

সম্প্রতি বাংলাদেশে একটি নতুন রাজনৈতিক দল যাত্রা শুরু করেছে। তাদের নাম 'আমার বাংলাদেশ পার্টি' (এবি পার্টি)। তারা বলছেন, আমার বাংলাদেশ! এরা কারা? কী তাদের অতীত পরিচয়? আজ হঠাৎ করে এসে তারা বলছেন আমার বাংলাদেশ! কী তাদের সেই বাংলাদেশের চিত্রকল্প? ১৯৭১ সালে এই 'আমার বাংলাদেশ'-ওয়ালাদের ভূমিকা কী ছিল? তারা তো তাদের মতপ্রকাশ করেই আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান করেছেন। করতে পেরেছেন।

সরকার তাদের বাধা দিয়েছে? না- দেয়নি। তারা তাদের মতপ্রকাশ করেই 'আমার বাংলাদেশ' খুঁজতে বেরোননি? বেরিয়েছেন। বাকি বাছবিচার ৩০ লাখ শহীদের রক্তেঘেরা বাংলার মানুষ করবেন। অবশ্যই করবেন। কারণ বাংলাদেশ ভুলে যায়নি একাত্তরে আলবদর, রাজাকার, আলশামস বাহিনীর নির্মম বর্ররতা। আজ ওদের উত্তরসূরীরাই 'আমার বাংলাদেশ' খুঁজছে! নাৎসিবাদীরা কিংবা ওদের উত্তরসূরীরা ঘোষণা দিয়ে কি ইউরোপ-আমেরিকায় এমন একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটাতে পারবে? এই প্রশ্নটি আমি আপনাদের সমীপেই রেখে যাচ্ছি- হে প্রিয় পাঠক!

আবার ফিরে আসি সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে। আমরা জানি, সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। সাংবাদিকরা অনেক কিছুই পারেন। প্রথম বিশ্বের দেশগুলোতে সাংবাদিকরা আগেই সংকেত দিতে পারেন, ওই দেশের রাজনীতি কোন দিকে মোড় নিচ্ছে। তা ফলেও যায়। এর অন্যতম কারণ এরা কোনোভাবেই রাষ্ট্র-মানসের প্রতিপক্ষ নয়। আর নয় বলেই তাদের চোখ খোলা। কান সজাগ। বাংলাদেশে এমন নৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। না ওঠার অন্যতম কারণ হচ্ছে- রাজনীতিকরা সাংবাদিকদের প্রলোভন দেখিয়ে ক্রয় করে নেন। তারা নিজেদের প্রয়োজনে সাংবাদিকদের ব্যবহার করেন। বিশিষ্ট সাংবাদিক মাওলানা আকরম খাঁ, জহুর হোসেন চৌধুরী, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, সিরাজুদ্দীন হোসেন প্রমুখ সাংবাদিক কিন্তু এই বাংলারই সন্তান। এরাও ছিলেন বাংলাভাষী সাংবাদিক। দুঃখের কথা হচ্ছে, আজকের নবীশ সাংবাদিকরা এদের জীবনাচার বিষয়ক বইগুলো মোটেই পড়াশোনা করেন না। বাংলাদেশে যারা সাংবাদিকতা বিষয়ে লেখালেখি করেন, তাদের লেখাগুলো নতুনরা পড়েন কি?

একটু পেছন ফিরে তাকাই। প্রয়াত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর তার একটি নিবন্ধে লিখেছেন, ‘অনেক সাংবাদিক ব্যক্তিগত গোপনীয়তা প্রসঙ্গে বলে থাকেন, ‘পাবলিক ফিগারের আবার প্রাইভেসি কী?’ এটাও একটা ভুল ধারণা। এই ধারণা নিয়েও আলোচনা করা দরকার। এ ধরনের ইস্যু নিয়ে আলোচনা প্রশিক্ষণের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়া উচিত। কারণ, আজকের তরুণ সাংবাদিক একদিন সংবাদপত্র, টিভি বা বেতারে নীতিনির্ধারণী পদে যাবেন। তাকে বুঝতে হবে সাংবাদিকের নৈতিকতা কী। ধনী লোক বা বড় শিল্পপতি, বিখ্যাত ব্যক্তি, বড় তারকা কোনো বিপদে পড়লে অনেক সাংবাদিক উল্লসিত হন। তাদের সেই উল্লাস প্রতিফলিত হয় তাদের লেখায়। এটা সাংবাদিকের বিকৃত মানসিকতা। অসুস্থ মানসিকতা। এ ধরনের মানসিকতা সাংবাদিকতা পেশার জন্য উপযুক্ত নয়। সাংবাদিকের দৃষ্টি হবে বস্তুনিষ্ঠ। তথ্য-প্রমাণ দিয়ে তিনি লিখবেন। উভয় পক্ষের বক্তব্য প্রকাশ করা তার প্রধান শর্ত।’ (ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও সাংবাদিকের নৈতিকতা, মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, দৈনিক প্রথম আলো, তারিখ : ১৬-০১-২০১১)।

বাংলাদেশে এখন অনেক অনলাইন মিডিয়ার ছড়াছড়ি। প্রায় প্রতিটি থানায় কয়েকটি ওয়েব ডেইলি। এতে সাংবাদিকদের সংখ্যা বাড়ছে প্রত্যন্ত এলাকায়। এসব সাংবাদিকের অনেকে টাকাকড়ি কামানোর ধান্ধাও করছেন। ফলে এরা পথভ্রষ্ট হচ্ছেন। ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে চাইছেন। আমরা দেখছি, বিশেষ করে অনলাইন মিডিয়াগুলোর কোনোটি ‘গসিপ’ নিউজের বন্যা বইয়ে দেয় মাঝে মাঝে। ‘ভেঙে গেল অমুকের সংসার’, ‘লাশ হয়ে ফিরলেন অমুক’, ‘যে দৃশ্য না দেখলেই নয়’- এ রকম অনেক সংবাদ লিখে শেষে জানাচ্ছে, এটা একটি নাটকের, ছায়াছবির দৃশ্য! এটা কী ধরনের রিপোর্টিং? সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হলো ব্ল্যাকমেইলিংয়ের। চাঁদা না দিলে রিপোর্ট করা হবে- এমন হুমকি দিতে গিয়ে প্রাণও গেছে কারও কারও! তারপরও গ্রামে গ্রামান্তরে গড়ে উঠছে এক ধরনের ‘সাংবাদিক’। ফেসবুকে, অনলাইন মিডিয়ায় এদের কারও কারও ভিজিটিং কার্ড দেখলে আঁতকে উঠতে হয়। অনেক পদবি তাদের। নিজে নামের সঙ্গে টাইটেল দিয়ে কার্ডের প্রচার করাটা কোন নৈতিকতার আওতায় পড়ে? বিশ্বের কোথাও এমনটি আছে কি?

মোটরসাইকেল, গাড়ির পেছনে ‘সাংবাদিক’ লিখে পার পেয়ে যাচ্ছে চোরাকারবারি, খুনিও। মিথ্যা অজুহাতে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করছে কেউ কেউ! নির্বিকার সরকারি আইন প্রয়োগকারী বাহিনী। এর সবই হচ্ছে বাংলাদেশে। সাংবাদিকতা করার আগে এর বেসিক বিষয়গুলো জানা দরকার। বিশ্বব্যাপী অনেক সংগঠন আছে যারা এসব প্রশিক্ষণ দেয়। প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) প্রশিক্ষণ নিয়েছেন কজন গ্রামীণ সাংবাদিক? এদের অনেকে হয়তো পিআইবির নামও জানেন না।

আমেরিকার বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও সাংবাদিক ফ্র্যাঙ্ক লুথার মট হলুদ সাংবাদিকতার পাঁচটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন- ১. সাধারণ ঘটনাকে কয়েকটি কলামজুড়ে বড় আকারের ভয়ানক একটি শিরোনাম করা। ২. ছবি আর কাল্পনিক নকশার অপরিমিত ব্যবহার। ৩. ভুয়া সাক্ষাৎকার, ভুল ধারণার জন্ম দিতে পারে এমন শিরোনাম, ভুয়া বিজ্ঞানমূলক রচনা আর তথাকথিত বিশেষজ্ঞ কর্তৃক ভুল শিক্ষামূলক রচনার ব্যবহার। ৪. সম্পূর্ণ রঙিন রবিবাসরীয় সাময়িকী প্রকাশ, যার সঙ্গে সাধারণত কমিকস সংযুক্ত করা হয়। ৫. স্রোতের বিপরীতে সাঁতরানো পরাজিত নায়কদের প্রতি নাটকীয় সহানুভূতি।

বাংলাদেশে এখন জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশকে ঘায়েল করার খায়েশে একাত্তরের পরাজিতদের প্রতি সহানুভূতি বাড়ছে নাটকীয়ভাবে। এর কলকাঠি কারা নাড়ছে? ফেসবুকে পেজ খুলে মিথ্যা উসকানি দিচ্ছে কারা? এদের শিকড় কোথায়- তা সাধারণ মানুষকে জানতে হবে। গুজবের ডালপালা, বাংলাদেশে বৃক্ষের ডালপালার চেয়েও ছায়া ফেলে মাঝে মাঝে অনেক বেশি! এ বিবেচনাটুকু গণমানুষকে করতেই হবে।

যে কথাটি বলে শেষ করতে চাই তা হলো- নিউইয়র্ক টাইমসের এডিটোরিয়াল লাইনে একটা 'স্লোগান' ছাপা হয় প্রতিদিন। তা হলো- "All the News That's Fit to Print."। বিষয়টি আসলে কি তাই? না- তেমনটি নয়। কোনো একটি বিশেষ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো সংবাদ, বিজ্ঞাপন ছাপে না, ছাপবে না দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। তাহলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আসলে কি এবং কোথায়? ওটা আমার কাছে বায়বীয় বস্তু বলেই আছে এবং থেকে যাচ্ছে! আজকের নতুন, শিক্ষানবিশ সাংবাদিকরা বিষয়টি খেয়াল রাখবেন বলেই আমি আশা করবো।

নিউইয়র্ক / ০৭ মে ২০২০email-oronik@aol.com

লেখক : নিউইয়ক প্রবাসী সাংবাদিক, কবি, কলামিস্ট।

এইচআর/বিএ/এমএস