জাতীয়

হাজারো মৌসুমী গরু ব্যবসায়ী এবার বেকার

দেশের হাজার হাজার মৌসুমী গরু ব্যবসায়ীর দিন কাটছে হতাশার মধ্যে। এবার বেকার জীবনযাপন করছেন তারা। কোরবানিকে সামনে রেখে প্রতিবার এসব ব্যবসায়ীরা ৩-৪ মাস আগে গরু কিনে মোটাতাজাকরণ করতেন। কিন্তু করোনা সঙ্কটের কারণে দেশের সব হাটবাজার বন্ধ। ফলে গরু কেনাবেচাও হচ্ছে না। এতে যারা গরু কিনে ৩-৪ মাসে মোটাতাজাকরণ করে বিক্রি করতেন সেসব ব্যবসায়ীরা এখন ঘরে বসে বেকার সময় পার করছেন।

Advertisement

দেশের বিভিন্ন স্থানে মৌসুমী গরু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যখন থেকে তারা গরু কেনার প্রস্তুতি শুরু করেছেন তখন থেকেই সারাদেশে লকডাউন শুরু হয়েছে। কোরবানির আগে গরু কেনাকে কেন্দ্র করে অনেকে বিভিন্ন সমিতি ও মহাজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে গরু কেনার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশের সব অফিস আদালত ও পরিবহন, হাট বাজার, দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তাদের আর গরু কেনা হয়নি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা কবে কাটবে তার নিশ্চয়তা নেই। করোনা যদি আরও এক-দুই মাস থাকে তাহলে এবার আর তারা ব্যবসা করতে পারবে না। কেউ কেউ বলেন, এবার ব্যবসা না করতে পারায় অভাব বাড়বে।

কথা হয় পাবনার সাথিয়া উপজেলার গরু ব্যবসায়ী সরোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, কোরবানিকে সামনে রেখে একটা ব্যবসার মৌসুম শুরু হয়। হাজার হাজার মানুষ কোরবানির ৩-৪ মাস আগে গরু কিনে মোটাতাজাকরণ করে বিক্রি করে।

Advertisement

তিনি বলেন, আমাদের আশপাশের সব চেয়ে বড় হাট হলো তালগাছি, বেড়া করোনজা ও পাবনা পুস্প পাড়া গরুর হাট। এই হাটগুলো থেকে প্রতিবার এই সময় হাজার হাজার গরু বিক্রি হয়। কিন্তু এবার ২৬ মার্চের পর থেকে কোনো হাট লাগে না। ফলে যারা ব্যবসা করবেন তারা গরুও কিনতে পারছে না। এই সময়টাতে আমাদের এলাকায় যারা গরুর ব্যবসা করতো তারা একেবারে বেকার বসে আছে।

কুষ্টিয়ার গরু ব্যবসায়ী মো. ইসলাম জানান, প্রতিবছর কোরবানির ঈদে ২০-২৫টি গরু নিয়ে আসতেন হাজারীবাগ গরুর হাটে। এবার একটি গরুও কিনতে পারেননি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, দেশের যে পরিস্থিতি তাতে এবার আর ঢাকায় গরু নেয়ার ভাগ্য হবে না। কারণ কোথাও কোনো হাটবাজার লাগতে দিচ্ছে না। গরু কেনার জন্য যখন প্রস্তুতি নিচ্ছি তখনই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। সরকারও সব বন্ধ করে দেয়। ফলে এবার আর গরুর ব্যবসা করা সম্ভব নয়। কোনো কাজও নেই। একদম বাড়িতে বসে বসে বেকার দিন কাটছে।

কালিগঞ্জের খামারি মোহাম্মদ মোমেন জাগো নিউজকে বলেন, আমিও প্রতিবার এ সময়ে বিভিন্ন হাট ঘুরে সুন্দর সুন্দর গরু কিনে কোরবানিতে বিক্রি করতাম। এবার টার্গেট ছিল ৫০টি গরু কেনার। কিন্তু করোনার কারণে তা সম্ভব হলো না। আমার মনে হয় এবার আর এই ব্যবসা করা যাবে না। করোনার প্রভার যদি আরও ১-২ মাস থাকে তাহলে যারা সারাবছর কোরবানির গরু মোটাতাজাকরণ করেছে তাদের গরু বিক্রি করা নিয়েই সংকট তৈরি হবে। কারণ হাট না লাগলে গরু কেনাবেচা হবে কোথায়?

Advertisement

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, সারাবিশ্বে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে আমরাও সে পরিস্থিতির শিকার। কোরবানির ২-৩ মাস আগে অনেক ব্যবসায়ীই গরু কিনে মোটাতাজাকরণের পর বিক্রি করতেন। কিন্তু করোনার কারণেই এবার হাজার হাজার ব্যবসায়ী কোরবানির পশু কেনাবেচা করতে পারছে না। যারা একেবারে বেকার জীবন কাটাচ্ছে তাদের জন্য সরকার সাহায্য সহযোগিতার ব্যবস্থা করেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, এবার কোরবানির পশুর সংখ্যা নির্ণয়ে মাঠ পর্যায়ে জরিপ চলছে। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যেই রিপোর্ট পাওয়া যাবে।

উল্লেখ্য, গত বছর সারাদেশে কোরবানিযোগ্য প্রায় এক কোটি ১৮ লাখ পশু প্রস্তুত ছিল। এর মধ্যে ৪৫ লাখ ৮২ হাজার গরু-মহিষ, ৭২ লাখ ছাগল-ভেড়া এবং ছয় হাজার ৫৬৩টি অন্যান্য পশু। কোরবানিতে পশু জবাই হয়েছিল এক কোটি ছয় লাখ। গত বছরের প্রস্তুতকৃত প্রায় ১২ লাখ পশু অবিক্রিত থেকে যায়।

এফএইচএস/এএইচ/এমএস