বিশেষ প্রতিবেদন

নতুন রূপে আজিমপুর কবরস্থান

মৃত্যুর পর মানুষের শেষ ঠিকানা হয় কবর। সেই শেষ ঠিকানা আজ আধুনিকতার ছোঁয়ায় নান্দনিক রূপ পেয়েছে। পুরনো দৃশ্যপট বদলে নতুন রূপ ধারণ করেছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী আজিমপুর কবরস্থান। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) উদ্যোগে এ কাজটি সম্পন্ন হয়েছে।

Advertisement

ধারণা করা হয়, সপ্তদশ শতাব্দীতে ঢাকা শহরের পত্তনের সমসময়ে এ গোরস্থানের সূচনা। এখানে শায়িত আছেন বায়ান্নর ভাষাশহীদসহ আরও অনেক কৃতী সন্তান। আজও নগরবাসীর মরদেহ প্রতিনিয়ত সমাহিত হচ্ছে। ডিএসসিসির আধুনিকায়ন কার্যক্রমের ফলে ৭৪ দশমিক ৪২ বিঘা জমির ওপর নির্মিত ঐতিহ্যবাহী এ কবরস্থানের পুরনো দৃশ্যপট একেবারেই বদলে গেছে। পেয়েছে এত অনন্য নির্মাণ শৈলী যা মানুষকে প্রিয়জনদের কাছে বারবার ফিরে আসতে উৎসাহ জোগাচ্ছে।

আধুনিক এ কবরস্থানে এক হাজার ৬০০ মিটার দৃশ্যমান সীমানার দেয়াল রয়েছে। এর মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ পাশে আছে কাচের ৩২০ মিটার সীমানা। যে কারণে বাইরে থেকে কবরগুলো সহজেই চোখে পড়বে। রয়েছে প্রতি দুই সারি কবরের পরপর একটি করে চার ফুট চওড়া হাঁটাপথ। এমন ১৬৮টি লম্বা হাঁটাপথ রয়েছে। পথগুলো বিশেষ ঢালাইয়ের মাধ্যমে পাকা করা। এর নিচেই রাখা হয়েছে পানি নিষ্কাশনের ড্রেন। ফলে মুষলধারে বৃষ্টি হলেও আগের মতো আর পানি জমে থাকবে না। মাঝের হাঁটাপথে দাঁড়িয়েই প্রার্থনা শেষ করা যাবে। এটি সাজাতে ব্যবহার হয়েছে বিশেষ ধরনের সিরামিক ইট।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পরিচ্ছন্ন নান্দনিক এ কবরস্থানে প্রবেশের ফটক রয়েছে দুটি। প্রধান ফটকের সঙ্গে রয়েছে কেয়ারটেকারের অফিস। বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও সবুজ গাছ দিয়ে সবুজায়ন করা হয়েছে স্থানটি। সেই সঙ্গে রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত অজুখানা, মরদেহের গোসল ও জানাজার বিশেষ ব্যবস্থা। ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রতিটি কবরের নম্বর নির্ধারণের ব্যবস্থা রয়েছে। পুরো স্থানটি সিসি ক্যামেরার আওতায় এনেছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে আজিমপুর কবরস্থানের আধুনিকায়নের কাজ হাতে নেয়া হয়। দুটি প্যাকেজে ব্যয় হয় মোট ৪৮ কোটি ৯৯ লাখ ৪১ হাজার ১৭১ টাকা। বিশিষ্ট স্থপতি রফিক আজমের তত্ত্বাবধানে কবরস্থানটির পুনঃডিজাইন চূড়ান্ত করে ডিএসসিসির ইঞ্জিনিয়ার বিভাগ।

আজিমপুর কবরস্থানের আধুনিকায়ন প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ‘এই বিশাল জনবহুল শহরে কেউ মারা গেলে তাদের অধিকাংশেরই দাফন এখানে হয়। কিন্তু মানুষ প্রিয়জনের কবর দেখতে এসে সুন্দর পরিবেশ পায় না। কবরই যেহেতু মানুষের শেষ ঠিকানা তাই আমরা পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী কবরস্থানটি আধুনিকায়ন করেছি। ফলে মৃতব্যক্তির পরিবার-পরিজন স্বাচ্ছন্দ্যে এবং খুবই নির্মল পরিবেশে কবর জিয়ারত করতে পারবেন।’

এএস/এমএআর/পিআর

Advertisement