করোনাভাইরাসের এই সংকটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেশন জটের শঙ্কায় পড়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গত ৩১ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়। কিন্তু অনলাইন ক্লাস ব্যবস্থায় শিক্ষার গুণমান নিশ্চিত না হওয়া ও ডিজিটাল অপর্যাপ্ততায় ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৭ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থীরা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানান।
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে মাহির চৌধুরী, মেহনাজ মৌমিতা ও মীর সাব্বির আহমেদ চৌধুরী জানান, ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, অনলাইন ক্লাস ব্যবস্থায় শিক্ষার গুণমান নিশ্চিত না হওয়া ও ডিজিটাল ব্যবস্থায় অপর্যাপ্তত রয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থান করছেন। এসব অঞ্চলে ইন্টারনেট একসেসের সমান সুযোগ সুবিধা না থাকায় তারা ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া অনলাইনে ক্লাস নেয়ার ফলে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল ডিভাইস ও ডাটা প্ল্যানের ব্যয় মেটাতে না পেরে ক্লাস করতে পারছে না।
Advertisement
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনেক শিক্ষার্থী একসঙ্গে অনলাইনে ক্লাস করলে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে মতামত আদান-প্রদান অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া অনেক শিক্ষক আছেন যারা ক্লাস রেকর্ড আপলোড দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কোনো প্রশ্ন থাকলে তা করার সুযোগ থাকছে না।
আবার অনেক শিক্ষকই আছেন যারা অনালাইনে ক্লাস নেয়ার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না। তাদের জন্য হঠাৎ করে অনলাইনে ক্লাস নেয়া বড় একটি চ্যালেঞ্জ। ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর শিক্ষকদের লিখে বুঝিয়ে দেয়ার মতো টুল থাকলেও পূর্ব প্রশিক্ষণ না থাকার দরূণ অনেক শিক্ষকের পক্ষে অনলাইন ক্লাসে এসব টুল ব্যবহার করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে তারা শুধু অনলাইন ক্লাসে বই অথবা স্লাইড দেখে যা পড়েন, শিক্ষার্থীদের তাই শুনতে হয়।
এছাড়া এই মহামারীতে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, অনেকে মারা যাচ্ছে। এর মাঝে আমাদের নিজেদের পরিচিত মানুষ, প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনরাও আছেন। প্রতিদিন এ ধরনের খবর আমাদেরকে মানসিকভাবে দুর্বল করে ফেলছে। আমরা সবাই নিজেদের ও নিজেদের পরিবারকে নিয়ে দুশ্চিন্তা ও ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছি। এমন অবস্থায় অনলাইনে ক্লাস করা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে আরও হুমকির মুখে ফেলবে বলে আমরা মনে করি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা আমাদের সবার জীবনের বড় একটি অংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব কোর্সই আমরা চাইলে অনলাইনে করতে পারি। কিন্তু আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ চাই। এরপরও যদি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস নেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা না করে তাহলে সেই ক্লাসের মাধ্যমে প্রাপ্ত শিক্ষা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে আমরা সন্দিহান।
Advertisement
মোয়াজ্জেম হোসেন/এফএ/পিআর