অর্থনীতি

কমেছে সাত নিত্যপণ্যের দাম, বেড়েছে দুটির

রোজায় গত এক সপ্তাহ রাজধানীর খুচরা বজারে সাতটি নিত্যপণ্যের দাম কমেছে। বিপরীতে দাম বেড়েছে দুটির। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

Advertisement

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মালিবাগ, শাহজাহানপুর, বাদামতলী, সূত্রাপুর, শ্যামবাজার, কচুক্ষেত, মৌলভীবাজার, মহাখালী, উত্তরা আজমপুর, রহমতগঞ্জ, রামপুরা এবং মীরপুর-১ নম্বর বাজারের পণ্যের দামের তথ্য নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক সপ্তাহে দুটি পণ্যের দাম বেড়েছে। তার একটি হলো জিরা। এ পণ্যটির দাম বেড়েছে ৪৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এক সপ্তাহ আগে ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া জিরার দাম বেড়ে হয়েছে ৫০০-৬০০ টাকা। অপরটি বড় দানার মশুর ডাল। এ পণ্যের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। পণ্যটির দাম বেড়ে ৯০-১০০ টাকা হয়েছে, যা আগে ছিল ৮৫-৯৫ টাকা।

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে জিরার দাম বেড়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা ১০০ গ্রাম জিরা বিক্রি করছেন ৫০-৬০ টাকা, যা রোজার আগে ছিল ৪০-৪৫ টাকা। জিরা কেজি হিসেবে নিলে ৪৮০-৫৫০ টাকা রাখা হচ্ছে।

Advertisement

খুচরায় বাড়লেও গত এক সপ্তাহে পাইকারিতে জিরার দাম কমেছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। গত ৫ মে থেকে জিরার দাম কমছে বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের মসলার পাইকারি প্রতিষ্ঠান রুবেল ট্রেডিংয়ের মালিক মো. রুবেল।

রুবেল বলেন, লকডাউনের কারণে ২৫ তারিখের পর থেকে বেনাপোল ও চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য আসা আটকে ছিল। যে কারণে কিছুদিন আগে জিরার দাম কিছুটা বেড়েছিল। তবে এখন আসা স্বাভাবিক হওয়ায় দাম কমে গেছে। যে জিরার কেজি ৪০০ টাকা হয়েছিল, তা এখন ২৮০-৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরায় দাম বাড়ার কারণ হিসেবে রামপুরার ব্যবসায়ী শামছু বলেন, আমরা প্রতিদিন পাইকারি বাজারে যাই না। তাই এখন সত্যিই পাইকারিতে দাম কমেছে কি না, বলতে পারব না। আমাদের কাছে যে জিরা রয়েছে তা বাড়তি দাম দিয়ে কেনা। এ কারণে আমরা বাড়তি দামে বিক্রি করছি। কম দামে জিরা কিনতে পারলে, তখন কম দামে বিক্রি করব।

এদিকে টিসিবির তথ্যে উঠে এসেছে, খুচরা পর্যায়ে গত এক সপ্তাহ সাতটি পণ্যের দাম কমেছে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি দাম কমেছে আদার। এই পণ্যটির দাম ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ কমে ১৪০-১৮০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

Advertisement

দাম কমার তালিকায় এর পরে রয়েছে রসুন। দেশি রসুনের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ১৬ শতাংশ এবং আমদানি করা রসুনের দাম ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমেছে। ১১০-১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি রসুনের দাম কমে ৯০-১২০ টাকা হয়েছে। আর আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকা, যা আগে ছিল ১৪০-১৭০ টাকা।

দাম কমার এ তালিকায় রয়েছে- খোলা সয়াবিন তেল, পামঅয়েল, পেঁয়াজ, ছোলা ও খেঁজুর। খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ কমে ৯২-৯৩ টাকা হয়েছে। খোলা পাম অয়েলের দাম ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ কমে ৬৫-৭০ টাকা হয়েছে। আর পাম অয়েল সুপারে দাম ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ কমে হয়েছে ৭৫-৮০ টাকা।

এ ছাড়া দেশি পেঁয়াজের দাম ৫ শতাংশ কমে ৪৫-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজের ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমে হয়েছে ৪০-৪৫ টাকা কেজি। ছোলার দাম ২ দশমিক ৭০ শতংশ কমে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৮-৯২ টাকা। আর সাধারণ মানের খেঁজুরের দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ২২০-৩০০ টাকা। এ পণ্যটির দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

খুচরা বাজারেও খোঁজ নিয়ে এসব পণ্যের দাম কমার তথ্য পাওয়া গেছে। এর সঙ্গে চিনির দামও কিছুটা কমেছে। রোজার আগে ৭০-৭৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া চিনি এখন খুচরা পর্যায়ে ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী জাহিরুল বলেন, করোনার কারণে এবার সব পণ্যের দামই বেড়েছিল। কিন্তু রোজার মধ্যে একের পর এক পণ্যের দাম কমছে। আমি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছি। রোজায় পেঁয়াজ, চিনি, তেল, রসুন, আদার দাম কমে আগে কখনও দেখিনি। কিন্তু এবার সবগুলোর দাম কমেছে। এতে আমাদের মতো খুচরা ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছে।

তিনি বলেন, ৯৫ টাকা কেজি কেনা সয়াবিন তেল ৯২ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। ৭৫ টাকায় কেনা পাম অয়েল ৭০ টাকা বিক্রি করছি। ২৩০ টাকা কেজি কেনা আদা ১৫০ টাকা বিক্রি করছি। এবার চিন্তা করেন আমরা কী পরিমাণ লোকসানের মধ্যে পড়েছি।

এমএএস/জেডএ/জেআইএম