নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাসে মারা গেছে অর্ধশতাধিক। করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও কয়েকজন। করোনার সংক্রমণের আশঙ্কায় মৃতের দাফন-কাফন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্বজনরা। এ অবস্থায় মৃতের দাফন-কাফনে এগিয়ে এসেছেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য রোজিনা আক্তার।
Advertisement
করোনাকালে ছয় মৃত নারীর গোসল করিয়েছেন নিজ হাতে। ব্যবস্থা করেছেন জানাজা ও দাফন-কাফনের। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও করোনা রোগীর দাফন-কাফন করে যাচ্ছেন তিনি। তবে এখনও তিনি করোনামুক্ত।
রোজিনা আক্তার বলেন, করোনা পরিস্থিতির প্রথম থেকে সতর্কতা কার্যক্রম, জনসচেতনতা তৈরি, ত্রাণ বিতরণ করে আসছি। এরপরও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আরও কিছু করার ইচ্ছা ছিল। তাই পরিবারের মতামত নিয়ে করোনায় মৃত্যু হওয়া মানুষের দাফনে নিজেকে নিয়োজিত করেছি।
এরই মধ্যে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। ২৬ এপ্রিল কাউন্সিলর খোরশেদ ও তার স্বেচ্ছাসেবী দলের সঙ্গে আমলাপাড়া এলাকার করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা হাসিনা বেগমের গোসল করাই। এরপর নাসিক এলাকার আরেকজন করোনায় মারা যাওয়া রোগীকে গোসল করিয়ে দাফন দেই। ধর্মগঞ্জের একজন এবং এনায়েতনগর এলাকার তিনজন নারীকে দাফন করেছি আমি।
Advertisement
ইউপি সদস্য রোজিনা আক্তার বলেন, আমার স্বামী মারা গেছেন। মা, দুই ছেলে ও তাদের পরিবার নিয়ে আমাদের সংসার। প্রথমে আমি আমার দুই ছেলের সঙ্গে কথা বলি। তাদের বুঝাই এবং তাদের উৎসাহে আমি এই কাজে নিয়োজিত হই। এই কাজে ভয় আছে। কিন্তু এই মহামারির সময় আমি বসে থাকতে পারি না। আমি মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছি। এখন এলাকাবাসীও আমাকে উৎসাহ দেন।
প্রথম অভিজ্ঞতা সম্পর্কে এই জনপ্রতিনিধি বলেন, প্রথমে কিছুটা ভয় ছিল। কিন্তু যখন সাহস করে পিপিই, মাস্ক পরে যাই তখন আর কোনো ভয় ছিল না। দাফন শেষে প্রথমে ব্যবহৃত পিপিই ফেলে দেই। তারপর বাড়িতে এসে গরম পানি দিয়ে গোসল করি, গড়গড়া করি। একই সঙ্গে চিকিৎসদের পরামর্শ অনুযায়ী চলি। আমি এখনও করোনামুক্ত আছি।
করোনাকালে জনপ্রতিনিধি হিসেবে সম্মুখভাগে কাজ করতে হচ্ছে জানালেন রোজিনা আক্তার। তাছাড়া করোনা রোগী কিংবা উপসর্গ নিয়ে মৃতদের দাফনে সরাসরি কাজ করছেন তিনি। ঝুঁকি রয়েছে আক্রান্ত হওয়ার। তবুও পিছিয়ে যেতে নারাজ তিনি।
রোজিনা আক্তার বলেন, কিছু মানুষ নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছেন। ঝুঁকি তো আছেই। করোনা টেস্টও করিয়েছি। এখনও ফলাফল পাইনি। যতক্ষণ সুযোগ থাকবে ততক্ষণ মানুষের জন্য কাজ করব।
Advertisement
সবার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের সবাইকে সরকারি নির্দেশনা মানতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমি জনপ্রতিনিধিদের বলব, আপনারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ান।
শাহাদাত/এএম/এমকেএইচ