কবরস্থানের সঙ্গে যেন নান্দনিক মেলবন্ধন। প্রাচীন ও আধুনিক নকশার সমন্বয়ে সাজানো, রয়েছে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যও। প্রথম দেখাতেই নয়নাভিরাম মসজিদটি দৃষ্টি কাড়ছে সবার। বিশেষ করে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ও মুসলিম স্থাপত্যকলার অংশ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) উদ্যোগে নির্মিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে— এমন মন্তব্য সংশ্লিষ্ট সকলের।
Advertisement
অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের নামে নামকরণ করা মসজিদটি ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের উদ্যোগে নতুন রূপ দেয়া হয়। ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট এর নির্মাণকাজ শুরু, শেষ হয় ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। মসজিদটি প্রসঙ্গে ছেলে সাঈদ খোকন জাগো নিউজকে বলেন, মসজিদের সঙ্গে আজিমপুর কবরস্থানের একটি মেলবন্ধন রাখা হয়েছে। এটি নকশাকারদের অনন্য কৃতিত্ব। সব ধরনের আধুনিক সুবিধা রাখা হয়েছে মনজিদটিতে। যা সবাইকে আকৃষ্ট করবে।
আজিমপুর কবরস্থানের ভেতরে অবস্থিত মসজিদে প্রবেশ করলেই প্রথমে নজর কাড়বে এর নান্দনিক সব কারুকাজ। মসজিদের ভেতরে আছে উন্নতমানের বিদেশি টাইলস। নানা রঙের সুদৃশ্য বাতিতে আলোকিত হয় এটি। কারুকার্যময় নয়নাভিরাম মসজিদটি সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।
প্রবেশপথে বিশাল শান, অন্যপ্রান্তে আজিমপুর কবরস্থান। বাংলাদেশের মসজিদের প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে অনুপ্রাণিত হয়ে এর নকশা করা হয়েছে। মসজিদে আজানের বাংলা অর্থ বড় বড় অক্ষরে লেখা আছে। উঁচু মিনারে রাখা মাইকের মাধ্যমে আজানের ধ্বনি ছড়িয়ে যায়। মুসল্লিদের জন্য আছে প্রশস্ত পার্কিং সুবিধা। এতে ৩০টির বেশি গাড়ি রাখা যায়।
Advertisement
নারী-পুরুষের জন্য রয়েছে আলাদা অজু ও নামাজ পড়ার ব্যবস্থা। মসজিদটিতে একসঙ্গে এক হাজার ৫২০ জন মুসল্লি এবং একসঙ্গে ৭০ জন নারী পৃথকভাবে নামাজ আদায় করতে পারেন। রমজানসহ মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব অর্থাৎ দুই ঈদে দুই হাজারের বেশি মানুষ নামাজ পড়তে পারেন। নামাজের কাতার মেলাতে আছে লাইটিংয়ের আধুনিক ব্যবস্থা।
মসজিদে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। লিফট ও উন্নতমানের টয়লেট সুবিধার পাশাপাশি রয়েছে জানাজা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা। নারী-পুরুষসহ সবার লাশ গোসল করানোর জন্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয় এখানে। ইমাম, মোয়াজ্জিন ও খাদেমের থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে দুই তলা মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৪ কোটি ১৯ লাখ ২২ হাজার ৫০০ টাকা। ২৩ কাঠা জমির ওপর বাহারি ইটের তৈরি এ মসজিদের আয়তন ৩০ হাজার ২২ বর্গফুট। এর মধ্যে সেমি বেজমেন্ট ১১ হাজার ৩৫০ বর্গফুট, গ্রাউন্ড ফ্লোর ১১ হাজার ৩৫০ বর্গফুট ও দ্বিতীয় তলা ৭ হাজার ৫০০ বর্গফুট। এছাড়া ১১ হাজার ৩৫০ বর্গফুটের প্লিন্থ এরিয়া রয়েছে।
প্রাচীন ও আধুনিক নকশার সমন্বয়ে সাজানো মসজিদটির মূল স্থপতি রফিক আজম। নকশা তৈরি ও নির্মাণকাজে আরও যুক্ত ছিলেন তার প্রতিষ্ঠান ‘সাতত’র একদল স্থপতি ও প্রকৌশলী। তারা হলেন- স্থপতি ইকরামুন নেসা, স্থপতি ফাহিম আবরার কবির, প্রকৌশলী মোহাম্মদ আখতার হোসেন, প্রকৌশলী লুৎফর রহমান, প্রকৌশলী মোহাইমিনুল ইসলাম ও প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম।
Advertisement
এএস/এমএআর/এমএস