মতামত

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষমতার পরিচয় দিন

জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশাও বেশি থাকে। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছেও জনপ্রত্যাশা অনেক। বিশেষ করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা,  বহির্বিশ্বে ভাবমূর্তি রক্ষা করা, দলের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা জরুরি। এর একটির সঙ্গে অন্যটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটি বাদ দিয়ে অন্যটি সম্ভব নয়। এ কারণে সার্বিকভাবে সমন্বিত পদক্ষেপ নিয়ে এগুতে হবে যাতে সরকার  এবং দল মিলে একসঙ্গে জনকল্যাণে কাজ করা যায়।আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হলে আইনের চোখে সবাই সমান-এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এক্ষেত্রে অপরাধ করে যে কেউ পার পেতে পারে না সেটির  নিশ্চয়তা দিতে হবে। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে কেউ যেন টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি করতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা কোনোদিনও সম্ভব হবে না। বিচার পাওয়া এবং সঠিক সময়ে বিচার পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে সমাজ থেকে অপরাধ দূর করা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। বিদেশি দুই জন নাগরিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর থেকেই নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশি বিদেশি মহল। অনেক দেশই সতর্কতা জারি করছে। কোনো কোনো দেশের নাগরিকদের সরিয়েও নেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় দুই বিদেশি হত্যার রহস্য উন্মোচন করে খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করার কোনো বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে বহির্বিশ্বে ভাবমূর্তি ধরে রাখতে হলে কূটনীতিক তৎপরতাও চালাতে হবে। আমাদের গার্মেন্টস শিল্পপণ্যের এবং বিদেশি জনশক্তি রপ্তানির ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এই দু`টি সেক্টর রেমিটেন্স অর্জনের মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতির গতিপ্রবাহ ঠিক রাখছে।    রাজনৈতিক দল গুলোর নেতৃবৃন্দই সরকার চালায়। কাজেই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর সম্মিলিত আচরণও শাসন ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলে। এক্ষেত্রে দলীয় শৃঙ্খলার কোনো বিকল্প নেই। মন্ত্রী-এমপিদেরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। কথার লাগাম টেনে ধরতে হবে। কেবল একে অন্যের ওপর দোষ চাপালেই হবে না।এ ছাড়া নেতাকর্মীদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডও দল বা দল চালিত সরকারের ভাবমূর্তির জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেয়। একজন সাংসদের ছেলের মাতাল হয়ে গাড়ি চালানোর সময় তার ছোঁড়া গুলিতে দুইজন পথচারীর মৃত্যু, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে গোলাগুলিতে মায়ের গর্ভে  শিশু গুলিবিদ্ধ হওয়া এবং গাইবান্ধায় সাংসদের গুলিতে একজন শিশুর আহত হওয়ার ঘটনাগুলোতে দলের এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতি হয়েছে মারাত্মকভাবে। যদিও তিনটি ঘটনায়ই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গাইবান্ধার সাংসদ এখন জেলে। এরপরও মানুষ চায় এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। জঙ্গিবাদ নির্মূল, যুদ্ধাপরাধীর বিচারও বড় চ্যালেঞ্জ। সৌদি আরব থেকে শিশু রাজন হত্যার মূল অভিযুক্ত কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ভারত থেকে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার অন্যতম আসামি নূর হোসেনকেও ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। এ  দুটি ঘটনায় অপরাধীরা বিচারের মুখোমুখি হচ্ছে ভেবে মানুষজন স্বস্তি পাচ্ছে। এই আস্থার জায়গাটি ধরে রাখতে হবে। পদ্মাপাড়ে সচিব কমিটির বৈঠক হল। পদ্মা সেতু দেশীয় অর্থায়নেই হচ্ছে। এটি এখন আর স্বপ্ন নয়। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে মানুষের চোখে স্বপ্ন জাগিয়ে রাখতে হবে ভবিষ্যত বাংলাদেশের। যে বাংলাদেশ হবে, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বৈষম্য এবং দুর্নীতিমুক্ত । সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এইচআর/এমএস

Advertisement