মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত-মৃতের সংখ্যা প্রতিদিনই উদ্বেগজনক হারে বাড়লেও আগামী ১০ মে থেকে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে সরকার। চলমান এ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে রমজানে খুলবে না দেশের অন্যতম সেরা শপিংমল বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স ও যমুনা ফিউচার পার্ক। এই দুই জায়ান্ট শপিংমলের এমন সিদ্ধান্তের পর রোজায় দোকান খোলা নিয়ে দ্বন্দ্বে রয়েছেন নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরাও।
Advertisement
এ বিষয়ে বুধবার (৬ মে) ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম (শাহিন) জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকেই এখন পর্যন্ত ফলো (অনুকরণ) করছি। নিউমার্কেট এলাকার পুলিশ আগামী ১০ মে থেকে মার্কেট খোলার বিষয়ে এবং গাইডলাইন দেয়ার জন্য আমাদের ডেকেছিলেন। আজকে আমরা মার্কেটে এসেছি, কীভাবে দোকান-পাট খোলা যায় দেখার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নিউমার্কেটের পক্ষ থেকে জানিয়েছি, বর্তমানে তো করোনা পরিস্থিতি প্রতিদিন খারাপ হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি বলি, আমার জীবনটা আগে। কিন্তু আমরা তো কোনো সেক্টর থেকেই কোনো সুবিধা পাচ্ছি না। তাই রুটি-রুজির জন্য আমরা রাজি হয়েছিলাম। তবে মার্কেট খোলা রাখার বিষয়ে আমাদের এক্সিকিউটিভ (নির্বাহী) কমিটির সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব। আমরা আমাদের নিজের, কর্মচারীদের এবং ক্রেতাদের সর্বোপরি দেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেব না।’
আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দোকানদাররা। আবার যদি এখন আমরা মার্কেট খুলে দেই, তাহলে আমরাই বেশি স্বাস্থ্যগত দিক দিয়েও ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তাই আমরা আমাদের সমিতির এক্সিকিউটিভ মেম্বারদের (নির্বাহী সদস্য) সঙ্গে কথা বলব, তারপর সিদ্ধান্ত নেব। তাছাড়া পুলিশ যে গাইডলাইন দিয়েছে, তাতে মার্কেটের চারটা গেটের মধ্যে মাত্র দুটা গেট খোলা রাখা যাবে। নতুন করে আরও একটি টানেল তৈরি করতে হবে, এতকিছুর পর মনে হয় না মানুষ কেনাকাটা করতে আসবে।’
Advertisement
সভাপতি বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে বেচাকেনা হওয়ার সম্ভাবনা কম। এতদিন আমাদের দোকানের সব কর্মচারী দেশের বাড়ি চলে গেছেন, এখন তাদের মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে কিছু টাকা দিলেই হবে। কিন্তু অল্প কয়েক দিনের জন্য ঢাকায় আনলে তো পুরো বেতন দিতে হবে, বোনাস দিতে হবে। না আমি দোকান খুলে কিছু বিক্রি করতে পারব। সভাপতি হিসেবে আমি দ্বন্দ্বে রয়েছি। প্রথম ১৪ দিন যদি শক্তভাবে মনিটর করা হতো, তাহলে এখন দোকান খোলা যেত। সরকার যদি ১৪ দিন কারফিউ দিয়ে দিত তাহলে সব থেকে ভালো হতো। কারণ বারে বারে আমরা আর কত ক্ষতিতে পড়ব।’
এর আগে, সোমবার (৪ মে) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দোকান ও শপিংমল আগামী ১০ মে থেকে খোলার কথা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। তবে তা বিকেল ৪টার মধ্যে বন্ধ করার কথা বলা হয়।
এতে বলা হয়, কোভিড-১৯ রোগের বিস্তাররোধ এবং পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার আগামী ৭ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি/জনসাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা/সীমিত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে শর্তাদি বিবেচনা করে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় অভ্যন্তরীণভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকানপাট, শপিংমলসহ অন্যান্য কার্যাবলী ১০ মে থেকে সীমিত আকারে খুলে দেয়ার ব্যবস্থার অনুরোধ জানানো হলো। তবে এক্ষেত্রে আন্তঃজেলা ও আন্তঃউপজেলা যোগাযোগ/চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
হাট-বাজার, ব্যবসা কেন্দ্র, দোকানপাট ও শপিংমল সকাল ১০টায় খুলবে এবং বিকেল ৪টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রতিটি শপিংমলে প্রবেশের ক্ষেত্রে স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত সতর্কতা গ্রহণ করার কথা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
Advertisement
এমইউএইচ/এফআর/এমএস