চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। গত তিন দিনে চট্টগ্রামে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪৭ জনের। গত সোমবার থেকে বুধবারের (৬ মে) মধ্যে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও দুজন। স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, হঠাৎ বেড়ে যাওয়া এ সংখ্যা চট্টগ্রামে আগামী দিনগুলোতে করোনা পরিস্থিতির অবনতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
Advertisement
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত রোববার (৩ মে) চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজে (বিআইটিআইডি) ১৮৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় পাঁচজনের। এছাড়া চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) ল্যাবে পরীক্ষায় এদিন আরও ৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে রোববার মোট ১৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়।
সোমবার (৪ মে) বিআইটিআইডি ল্যাবে নতুন ২৪৩টি নমুনা পরীক্ষায় ২২ জনের করোনা শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে ১৬ জন চট্টগ্রামের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে ১২ জন চট্টগ্রাম নগরের ও চারজন উপজেলার বাসিন্দা।
মঙ্গলবার (৫ মে) বিআইটিআইডি ল্যাবে নতুন ২৩৯টি নমুনা পরীক্ষায় ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়। সর্বশেষ গত দুদিনে (৪ ও ৫ মে) চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির (সিভাসু) ল্যাবে ১২২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ২২টি নমুনার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ১২ জন রয়েছেন। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে গত তিন দিনে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪৭ জনের।
Advertisement
বুধবার (৬ মে) দুপুরে জাগো নিউজকে এসব তথ্য জানান চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির।
ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, গত দুদিনে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির (সিভাসু) ল্যাবে ১২২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ২২টি নমুনার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের নতুন ১২ জন, পুরোনো একজন। তাদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্য। এছাড়া চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক চিকিৎসক ও তার স্ত্রী, দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে তিনজন ও বাঁশখালী উপজেলার দুই নারী রয়েছেন। প্রথমবারের মতো হাটহাজারী উপজেলায় একজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সীতাকুণ্ডে একজন ও সাতকানিয়া উপজেলায় একজন। এর আগে পুলিশ, র্যাব ও অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা সদস্যের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
তিনি জানান, চট্টগ্রামের বাইরে রাঙ্গামাটিতে শনাক্ত হয়েছে চারজন, লক্ষ্মীপুরে একজন, ফেনীতে একজন ও নোয়াখালীতে দুজন। রাঙ্গামাটিতে আক্রান্তদের একজন শহরের রিজার্ভবাজার, দুজন হাসপাতাল এলাকা ও একজন দেবাশিষ নগরের বাসিন্দা।
এদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মির্জা ইসকান্দর মিয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি চট্টগ্রাম নগরের সরাইপাড়া এলাকার বাসিন্দা। এ নিয়ে চট্টগ্রামে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৯ জনে দাঁড়ালো।
Advertisement
চট্টগ্রাম হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গোলাম মোস্তফা জামাল জাগো নিউজকে বলেন, বুধবার বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১২৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা, কুমিল্লা, কক্সবাজার ও রাজবাড়ীতে করোনা শনাক্ত হয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও ফিল্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাঁচ ব্যক্তিও এই তালিকাও রয়েছেন।
এ নিয়ে চট্টগ্রামে এক শিশু, পাঁচ পুরুষ ও দুই নারীসহ মোট ৯ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এছাড়া আইসোলেশনে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ছয়জন। মৃত্যুর পর তাদের মধ্যে পাঁচজনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ পাওয়া যায়।
এছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন মোট ৩২ জন। তাদের মধ্যে পাঁচ পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। বর্তমানে ১৫৭ জন রোগী আইসোলেশনে আছেন। হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১৯২ জন।
আবু আজাদ/এমএসএইচ/জেআইএম