বিনোদন

অন্যান্য মাসেও যেন আমরা পাপ মুক্ত থাকি : সাইমন

কিশোরগঞ্জের ছেলে সাইমন সাদিক। শৈশব-কৈশোর পুরোটাই কেটেছে সেখানে। নির্মাতা জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘জ্বি হুজুর’ চলচ্চিত্রের অভিনয়ের মাধ্যমে ঢাকাই চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তার। এরপর একই নির্মাতার ‘পোড়ামন’ ছবিতে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন। এরপর আরও অনেক সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি। ২০১৮ সালের ‘জান্নাত’ সিনেমাটির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। জনপ্রিয় এই অভিনেতা জানালেন রোজা নিয়ে তার অভিজ্ঞতার কথা। জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো-

Advertisement

জাগো নিউজ : প্রথম রোজা রেখেছিলেন কত সালে মনে আছে?সাইমন : প্রথম রোজা তো রেখেছিলাম খুব ছোটবেলায়। তখন তো আর সব রোজা রাখা হতো না। হঠাৎ জোর করে হয়তো একটা রোজা রাখলাম। এরপরে সারা এলাকাতে জানিয়ে দিতাম আমি রোজা রেখেছি। রোজা রাখার আনন্দটা সবাইকে জানাতে ভালো লাগতো। ঘরে ঘরে গিয়ে বলতাম যে আমি আজকে রোজা রেখেছি।

জাগো নিউজ : কষ্ট হতো না ছোটবেলায় রোজা রাখতে?সাইমন : দুপুরের পর এক ধরণের ছটফটানি শুরু হয়ে যেত আমার। তখন আমি খুব ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারীও ছিলাম না। রোজা রেখে কাহিল হয়ে যেতাম। বয়স আর কতো হবে; দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি তখন। অনেক সময় এমন হয়েছে সেহরি খেয়েছি আবার দুপুরের পরে খেয়ে ফেলেছি। মনে মনে ভাবতাম যেহেতু দুপুর পর্যন্ত রোজা রেখেছি সেহেতু একটা রোজা হয়ে গেছে। একটু বড় হয়ে সব রোজা রাখা শুরু করলাম, তখন আমার রোজা রাখা ফরজও হয়ে গেছে।

জাগো নিউজ : সেহরি করা কিংবা সন্ধ্যার সময় একসঙ্গে ইফতার করা সেই অনুভূতি গুলো কেমন ছিল ছোটবেলায়?সাইমন : ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে দেখে এসেছি, অনেক বড় করে ইফতারের আয়োজন করা হতো। কারণ হচ্ছে আমাদের যৌথ পরিবার ছিল। দাদা, আব্বু, ছাড়াও বাড়ির সবাই মিলে একসঙ্গে বসে ইফতার করা হতো। ভাই-বোন ফুফুরা একসঙ্গে প্রতিদিনই প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশ জনের ইফতারের আয়োজন হতো।

Advertisement

অন্যরকম একটা পরিবেশ তৈরি হতো বাড়িতে। সেটা অনেক সুখের স্মৃতি। অন্যদিকে সেহরির সময়ও একটা অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হতো। আমাদের বাড়ি ছিল ঠিক মসজিদের পাশে। সময় হলেই মসজিদের মাইক থেকে ডাকাডাকি শুরু হয়ে যেত। মনে পড়ে তখন শীতকাল ছিল। শীতের সময় লেপের ভেতর থেকে উঠতে ইচ্ছে হতো না।

অনেকদিন এমন হতো আমাকে ডাকতো না পরে আমি রাগারাগি করতাম। এরপর যখন আর একটু বড় হলাম সেহরি খাওয়ার পর মসজিদে নামাজ পড়ে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে যেতাম। আবার সন্ধ্যার আগে দাঁত মাজার ধুম লেগে যেত। মডেলার ডাল নামে এক রকমের মাজনি ছিল, সেটা আমরা ব্যবহার করতাম। এই ডাল নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি লেগে যেত। সেই সময় গুলো আসলেই খুব মজার ছিল। অনেকদিন পর সেগুলো মনে পড়ল।

জাগো নিউজ : ছোটবেলার রোজা আর এখনকার রোজার ভেতর মূল কোন পার্থক্যটা কোথায়?সাইমন : ছোটবেলায় না বুঝেও অনেক কিছু করতাম। এখন কোন ভুল হলে সহজেই সেটা ধরতে পারি। চেষ্টা করি সঠিকভাবে রোজা পালন করার। যতটুকু পারি ভালো কাজ করার চেষ্টা করি। ছোটবেলায় এগুলো চিন্তা করতাম না। বরাবরই বন্ধুদের নিয়ে ইফতার করতে ভালো লাগে। আমাদের গ্রামে এখনো করোনাভাইরাস আক্রান্ত কেউ ধরা পড়েনি। তবুও আমরা সাবধান আছি। এরপর ও বন্ধুদের নিয়ে একসঙ্গে ইফতার করলাম একদিন। তবে সেটা নিরাপদ দূরত্ব রেখেই।

জাগো নিউজ : সাধারণত ইফতার ও সেহরিতে কি ধরনের খাবার খেয়ে থাকেন?সাইমন : অনেকে বলে রোজায় ইফতারিতে ভাজা পোড়া খাওয়া নিষেধ। কিন্তু সত্যি কথা বলতে আমার এগুলো ছাড়া ইফতার করতে ভালোই লাগে না। মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, এগুলো আমার ভালো লাগে। আর ভোর বেলায় তরকারি দিয়ে ভাত খাওয়ার পর দুধ কলা দিয়ে ভাত খেতে ভালো লাগে। যখন আম থাকে দুধের সঙ্গে পাকা আম দিয়ে ভাত খেতে ভালো লাগে।

Advertisement

জাগো নিউজ : এবার রমজানের বিশেষ প্রার্থনা কী?সাইমন : এবারের আমাদের সবার প্রার্থনা একটাই- রোজার মধ্যে যেন করোনাভাইরাস আমাদের দেশ থেকে এমনকি সারা পৃথিবী থেকে আল্লাহ দূর করে দেন। পবিত্র রমজান মাসে সারা দেশের মানুষ অনেক আতঙ্কে আছে। আমরা তো গ্রামে থাকি, বিশেষ করে বড় বড় শহরের মানুষেরা অনেক আতঙ্কের মধ্যে সময় কাটাচ্ছে। আল্লাহ যেন এটা উঠিয়ে দেন, আবার সবকিছু স্বাভাবিক করে দেন।

জাগো নিউজ : সবশেষে সবার উদ্দেশ্যে কী বলতে চান?রসাইমন : রমজান মাস হচ্ছে সংযমের মাস। প্রত্যেক মাসের চেয়ে এই মাসের গুরুত্ব অনেক বেশি। এই রমজানের কারণে আমরা ইসলামের প্রতি অনেক বেশি ঝুঁকে পড়ি। রমজানের শিক্ষা নিয়ে বছরের অন্যান্য মাসেও আমরা যেন পাপ মুক্ত থাকি। সবাই যেন ইসলামের তরিকায় চলি। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষকে মানুষ মনে করি। এটাই আমার চাওয়া। সবাই ভালো থাকুক। সুন্দর থাকুক। সবাই সবার জন্য শুভকামনায় নত হোক। পৃথিবীর সুন্দর হোক।

এমএবি/পিআর