সেদিন বাবা-ভাইয়ের শরীর থেকে বেরিয়ে আসা রক্তগঙ্গা দেখে আর বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে ভয়-আতঙ্কে পানি চেয়েছিলেন। ঘাতকেরা এক ফোঁটা পানিও খেতে দেয়নি তাকে। পানি না দিয়ে খেতে দেয়া হয় বন্দুকের বুলেট। তার আগে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল, মায়ের কাছে যেতে চেয়েছিলেন। ঘাতকেরা মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলে, বন্দুকের গুলিতে বুক ঝাঝরা করে দিয়েছিল শিশু রাসেলের।পৃথিবীর ইতিহাসে শিশু হত্যা মানবতাবিরোধী অপরাধ জেনেও ঘাতকেরা শিশু রাসেলকে রেহাই দেয়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবতাকে স্তব্ধ করে দেয়া জঘন্যতম ওই হত্যাকাণ্ডে প্রাণ দিতে হয়েছিল শেখ রাসেলকে। আজ বেঁচে থাকলে বড় বোন শেখ হাসিনার মতো আওয়ামী লীগের কোনো অঙ্গ সংগঠনের হাল ধরতে পারতেন শেখ রাসেল।এমন বয়সেই বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের কাণ্ডারিরূপে আভির্ভূত হন। হাল ধরেন উপমহাদেশের অন্যতম পুরানো দলটির। বড় ভাই শেখ কামাল এমন বয়সের আগেই প্রতিষ্ঠা দেন মূল দলের অন্যতম শাখা সংগঠন আওয়ামী যুবলীগের। শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে আজ বড় ভাইয়ের হাতে গড়ে ওঠা আওয়ামী যুবলীগের মধ্যমণি হতে পারতেন।আজ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেলের ৫১তম জন্মদিন। ১৯৬৪ সালের এই দিনে ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ ফজিলতুন্নেসা মুজিবের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন শেখ রাসেল।পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে শেখ রাসেলই সবার ছোট। ভাই-বোনের অন্যরা হলেন- শেখ হাসিনা, শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রেহানা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন তিনিও। এ সময় তিনি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াল ও শোকাবহ ১৫ আগস্টের ঘটনায় ভাগ্যক্রমে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা এদিন নির্মমভাবে নিহত হন।একটি রাজনৈতিক বিচক্ষণ পরিবারে জন্ম নেয়া শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে তার কাছে এমন নেতৃত্ব আশা করা অমূলক নয় বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বেঁচে থাকলে শেখ রাসেল কী হতেন সেটা আলাদা বিষয়। কিন্তু এমন একটি পরিবারে জন্ম নেয়া যে কোনো ব্যক্তির কাছে দেশ-জাতির প্রত্যাশা অনেক বেশি থাকে। বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্য সদস্যরা দেশকে যেভাবে ভালোবেসেছেন এবং বেসে যাচ্ছেন, তাতে করে শেখ রাসেরের জীবনেও এর ব্যতিক্রম ঘটতো না।আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ঘাতকরা দেশ থেকে আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে দিতে চেয়েছিল, যার প্রমাণ শিশু রাসেল হত্যা। এমন হত্যাকাণ্ড কোনো সভ্য সমাজই সমর্থন করতে পারে না। তবে ষড়যন্ত্রকারীরাই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আজ (রোববার) সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে রাসেলসহ ১৫ আগস্টে নিহত শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো।দিনটি যথাযথভাবে পালন করতে দলীয় নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও সর্বস্তরের জনগণসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।এএসএস/বিএ
Advertisement