রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে আধো আলো আধো অন্ধকারে গাছের নিচে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এক যুবক। অদূরে কিছু ভবঘুরে শিশু ঘোরাফেরা করছে। ওই যুবক বারবার এদিক-সেদিক তাকাচ্ছেন।
Advertisement
কাউকে হেঁটে যেতে দেখলেই দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য মোটরসাইকেল থেকে উঠে দাঁড়াচ্ছেন তিনি। তাকে দেখে সামনে এগিয়ে যেতেই যুবকের প্রশ্ন, ‘কোথাও যাবেন নাকি?’ না সূচক জবাব পেয়ে আবার মোটরসাইকেলের সিটে বসে পড়লেন তিনি।
যুবকের নাম মেহেদী হাসান। বাসা রাজধানীর ভাটারা এলাকায়। পেশায় রাইড শেয়ারিং পাঠাও-উবার মোটরসাইকেল চালক।
মেহেদী জানান, গত ২৬ মার্চ থেকে মোটরসাইকেল ভাড়া নেয়া বন্ধ রেখেছেন। স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ চার সদস্যের পরিবার। মাসিক ৬ হাজার টাকা বাসা ভাড়া। দুই সন্তানের মধ্যে একজন দুধের শিশু। আরেক সন্তান পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। প্রতি মাসে বাসা ভাড়া, সংসার খরচ ও সন্তানের দুধ কেনা বাবদ মাসিক খরচ কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা।
Advertisement
এত টাকা খরচ কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে মোটরসাইকেলটিতে তিনি বসে আছেন সেটা কিস্তিতে কেনা। ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালানোর আগে তিনি একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। সেই গার্মেন্টসে তিন মাস বেতন না হওয়ায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে কিস্তিতে মোটরসাইকেল কেনেন। ওই সময় সংসার চালাতে ৪০ হাজার টাকা ঋণ করেন। ঋণের টাকা বাবদ প্রতি মাসে ৪ হাজার ৮০০ টাকা এবং মোটরসাইকেল কিস্তি বাবদ প্রতি মাসে ৫ হাজার ৩০০ টাকা পরিশোধ করতে হয়।
মেহেদী বলেন, গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে রোজগার পুরোপুরি বন্ধ হওয়ায় আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধার করে কোনোভাবে দিনাতিপাত করছিলেন। কিন্তু চলতি মাসে বাড়িওয়ালা জানিয়ে দিয়েছেন, ভাড়া দিতে না পারলে তাকে বাসায় থাকতে দেয়া হবে না। একদিকে বাড়ি ভাড়া অন্যদিকে সংসারের খরচ, সব মিলিয়ে তিনি চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন। তাই করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি জেনেও গত ২ মে থেকে রাস্তায় নেমেছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আপাতত অপরিচিত আরোহী খুব একটা বেশি নিচ্ছেন না। ভাটারা এলাকার পরিচিত কাউকে নিয়ে দিনে দু-একটা ট্রিপ দিয়ে সংসারের খরচ তোলার চেষ্টা করছেন। আজ ইফতারের পর এলাকার একজন পরিচিতকে নিয়ে নিউমার্কেটে এসেছেন। আশা ও যাওয়া মিলিয়ে ৩৫০ টাকা পাবেন। যাকে নিয়ে এসেছেন তিনি নীলক্ষেত মোড়ে অপেক্ষা করতে বলেছেন। ঘণ্টাখানেক পর ফিরবেন। তাই কাছাকাছি কোথাও ট্রিপ পেলে আরোহী নিয়ে যাবেন বলে জানান মেহেদী।
এই যুবক জানান, ছোট সন্তানের বয়স মাত্র এক বছর। এখনো কৌটার দুধ খায়। মূলত সন্তানের দুধের টাকা জোগাড় করতেই তিনি করোনার ঝুঁকি জেনেও রাস্তায় নেমেছেন। সামনের দিনগুলোতে কী হবে, এই ভেবে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন মেহেদী হাসান।
Advertisement
এমইউ/এমএসএইচ/পিআর