গাইবান্ধা জেলা কারাগারে ডিভিশন ওয়ার্ডে প্রথম শ্রেণির মর্যাদায় দিব্যি আয়েশি দিন কাটাচ্ছেন শিশু সৌরভকে গুলি করে দেশজোড়া কুখ্যাতি কুড়ানো সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। আপাতত সেখানে তিনি একাই আছেন। তাকে সার্বক্ষণিক সেবা দিতে তৈরি আছেন এক কয়েদি। জেলের ভাষায় যাকে ফালতু বলা হয়। খাবার পাচ্ছেন কারাবিধি অনুযায়ী। তার কক্ষে একটি খাট, টেলিভিশন ও চেয়ার-টেবিল রাখা হয়েছে। প্রতিদিন একটি দৈনিক পত্রিকা তার জন্য নির্ধারিত।গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে মাতাল অবস্থায় শিশু শাহাদাত হোসেন সৌরভকে গুলি করে হত্যা চেষ্টা ও প্রতিবেশি হাফিজার রহমানের বাড়ি ভাঙচুর এবং লুটের ঘটনায় দায়ের হওয়া দু’টি মামলায় এমপি লিটনকে গত বুধবার ঢাকার উত্তরা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। পরদিন বৃহস্পতিবার গাইবান্ধার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সুন্দরগঞ্জ আমলি আদালত) আদালতে তাকে হাজির করা হয়। তার পক্ষে বিক্ষোভ মিছিল করার জন্য তার অনুগত নেতাকর্মীরা সুন্দরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আদালতপাড়ায় লোকজন নিয়ে আসেন।পরে তারা বাড়াবাড়ি করলে পুলিশ লাঠি পেটা, টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও শর্টগানের গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়। বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। এখন তিনি সেখানেই আছেন। আদালত আগামী ৮ ডিসেম্বর সৌরভ হত্যা চেষ্টা মামলা এবং ১৪ ডিসেম্বর হাফিজার রহমানের বাড়ি ভাঙচুর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।শুক্রবার তার সঙ্গে আত্মীয়স্বজন দেখা করেন। তার ঘনিষ্টজন এবং আওয়ামী লীগের উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও গত দু’দিনে দেখা করেছেন। শনিবার তাদের একজন জানান, এমপি লিটন প্রথমদিকে কিছুটা বিমর্ষ থাকলেও এখন খোশ মেজাজেই আছেন। কারাগারে প্রথম শ্রেণির মর্যাদায় থাকায় কোনো ধরনের সমস্যা নেই।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা জানান, এমপি লিটন ভোজনরসিক নন। তারপরও তাকে যত্নের সঙ্গে পছন্দের খাবারই দেয়া হচ্ছে। তার শারীরিক কোনো সমস্যা নেই। তবে ফালতু কাজ সেরে চলে যাওয়ার পর একটু একা বোধ করেন। কারণ এমপি অনুগত নেতাকর্মী, বন্ধুবান্ধব পরিবেষ্টিত থাকতে অভ্যস্ত। তিনি আরো বলেন, লিটন তার কাছে এলাকার খোঁজখবর নিয়েছেন।লিটনের অন্যতম আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু বলেন, একই আদালতে (গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ আমলি আদালত) আবারো রোবার তার জামিনের আবেদন করা হবে। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা দু`টোর ধারা জামিনযোগ্য। এই কারণে আইনজীবীরা তার জামিনের ব্যাপারে আশাবাদী।তিনি আরো বলেন, আইনে কোনো বাধা না থাকলেও স্থানীয়ভাবে জেলা বিচারিক আদালতে দীর্ঘদিন থেকে একটি প্রথা প্রচলিত আছে যে, প্রথম জামিন না মঞ্জুর হওয়ার সাতদিন পর পুনরায় একই আদালতে জামিন আবেদন করা হয়। তাই বিষয়টি নিয়ে রোববার সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে জামিন আবেদন করা হতে পারে। যদি সেটা সম্ভব না হয়। সেক্ষেত্রে সাতদিন পর আবেদন করা হবে।গাইবান্ধা জেলা কারাগার সুপার মো. মাহবুব আলম জাগো নিউজকে জানান, এমপি লিটন গত বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) আনুমানিক বেলা ১টার দিকে কারাগারে আসেন। সংসদ সদস্য হিসেবে তাকে জেলকোড অনুযায়ী সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী এসব তিনি পাবেন।অমিত দাশ/বিএ
Advertisement