সংক্রমণের ঝুঁকি সত্ত্বেও ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ঠেকানোর যুদ্ধে সামনে থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে রাজশাহী জেলা পুলিশ। করোনায় মাঠে কাজ করছেন জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের নয় শতাধিক সদস্য। করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের মতোই ভূমিকা পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা।
Advertisement
রাত-দিন এক করে জেলার আট থানা এলাকায় সার্বক্ষণিক দায়িত্বপালন করছে পুলিশ। এতে দিনদিন রাজশাহী জেলা পুলিশেও বাড়ছে করোনার সংক্রমণ ঝুঁকি। দায়িত্বপালনে গিয়ে এরই মধ্যে জেলার তানোর থানা পুলিশের এক কনস্টেবল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সংক্রমণ ধরা পড়েছে ওই থানার এক পরিচ্ছন্নতাকর্মীরও।
সোমবার (০৪ মে) রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) করোনা ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় তাদের করোনা ধরা পড়ে। এ ঘটনায় থানা ব্যারাকের সাত সদস্যকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। এর আগের দিন রোববার থানার ১৭ সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠায় উপজেলা স্বাস্থ্য দফতর। পরীক্ষায় ওই দুইজন বাদে অন্যদের করোনা নেগেটিভ আসে। তবুও এদের ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে পুলিশ।
জেলা পুলিশ জানায়, লকডাউন থাকায় জেলার প্রবেশপথগুলোতে চেকপোস্টে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ। গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাসিন্দাদের ঘরে রাখতে মাইকিং করা হচ্ছে। সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়ে যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন তাদেরও দেখভাল করছে পুলিশ।
Advertisement
এছাড়া জেলাজুড়ে চালানো ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাজে সহায়তা দিচ্ছে জেলা পুলিশ। প্রত্যন্ত এলাকার করোনাদুর্গত মানুষের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে খাবার। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন, অপরাধীদের গ্রেফতার এবং মামলা নেয়ার মতো নিয়মিত কাজও চলছে পুলিশের। থানা ও ফাঁড়ি পুলিশের সঙ্গে চলমান করোনা যুদ্ধে শুরু থেকেই যুক্ত রয়েছে জেলা পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম বলেন, করোনা মোকাবিলার প্রশিক্ষণ ছাড়াই করোনাযুদ্ধে মাঠে নেমেছে রাজশাহী জেলা পুলিশ। চলমান এই সঙ্কটকালে পুলিশের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব সংক্রমণ ঠেকাতে গণজমায়েতে বাধা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা। মূলত এই কাজটি করতে গিয়ে বাইরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন। এরই মধ্যে জেলার তানোর থানার এক কনস্টেবল ও এক পরিচ্ছন্নতাকর্মীর করোনা ধরা পড়েছে। তাদেরকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
এ নিয়ে জেলায় করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ল ১৭ জনের। সংক্রমণ ধরা পড়ার পর তাদের আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে। এছাড়া ওই কনস্টেবল ব্যারাকের যে কক্ষে থাকতেন সেখানকার আরও সাতজনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। এর আগে থানার ১৭ সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। তাতে ওই দুইজনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম আরও বলেন, জেলা পুলিশের কোনো সদস্য অসুস্থবোধ করলেই হাসপাতালে নেয়া হয়। এজন্য প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ হাসপাতাল। পুলিশ সদস্যদের মাঝে করোনা সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। সিনিয়র কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠপর্যায়ের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন। পাশপাশি পুলিশ সদস্যদের মধ্যে মাস্ক এবং হ্যান্ড গ্লাভসসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, পুলিশ লাইনস এবং ব্যারাকে পর্যাপ্ত জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্যারাকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বেড স্থাপন করা হয়েছে। যাতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাফেরা ও অবস্থান করতে পারেন পুলিশ সদস্যরা। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে তাদের পুষ্টিমান সমৃদ্ধ উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের পরিবারকেও সুরক্ষিত রাখতে নানা পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সংক্রমণ মোকাবিলায় সবাইকে নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এএম/এমকেএইচ