মহামারি করোনাভাইরাস প্রকোপের মধ্যে ঈদ সামনে রেখে বিভিন্ন মসলার দাম বাড়তে শুরু করেছে। দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনে, জিরা, হলুদ, শুকনো মরিচ, তেজপাতাসহ সব ধরনের মসলার দাম মাসের ব্যবধানে বেড়েছে। তবে সবথেকে বেশি বেড়েছে জিরার দাম। এক সপ্তাহের মধ্যে পণ্যটির দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
Advertisement
মঙ্গলবার (৫ মে) রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বল এমন তথ্য পাওয়া গেছে। দাম বাড়ার তথ্য উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেও।
খুচরা বাজারে মসলার দাম বাড়লেও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, লকডাউনের কারণে মাল না আসায় কিছুদিন আগে মসলার দাম বেড়েছিল। কিন্তু এখন আমদানি করা মসলা আসতে শুরু করেছে। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের মসলার দাম কমেছে।
বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে যারা যায়, জিরার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৩৫০-৪৫০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বাড়ার এ তালিকায় রয়েছে এলাচও। এক সপ্তাহ আগে ৩৬০০-৪০০০ টাকায় কেজি বিক্রি হওয়া এলাচের দাম বেড়ে হয়েছে ৪০০০-৪২০০ টাকা।
Advertisement
এছাড়া অন্য মসলার মধ্যে তেজপাতার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ১০০-১২০ টাকা। ধনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৫০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ১০০-১২০ টাকা। এক মাস আগে ১০০০-১২০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া লবঙ্গের দাম বেড়ে হয়েছে ১২০০-১৪০০ টাকা।
একইভাবে দারুচিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৫০০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৪০০-৪৫০ টাকা। ১৪০-১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া হলুদের দাম বেড়ে হয়েছে ২০০-২২০ টাকা। শুকনো মরিচের দাম বেড়ে ২৫০-৩৫০ টাকা হয়েছ, যা এক মাস আগে ছিল ২০০-২৫০ টাকা।
সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির হিসাবে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে জিরার দাম বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। মাসের হিসাবেও পণ্যটির এই দাম বেড়েছে। এছাড়া মাসের ব্যবধানে তেজপাতার ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ধনের ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ, এলাচের ৪ শতাংশ, দারুচিনির ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ, দেশি আদার ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, দেশি হলুদের ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ, দেশি শুকনো মরিচের ২২ দশমিক ২২ শতাংশ ও আমদানি করা শুকনো মরিচের ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ দাম বেড়েছে।
এদিকে সম্প্রতি কিছুটা দাম কমলেও মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম এখনো বেশি। বর্তমানে দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৩৫-৪০ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৩০-৪০ টাকা। দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০-১৩০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আর দেশি আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০-২০০ টাকা, যা আগে ছিল ১২০-১৫০ টাকা এবং আমদানি করা আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৭০ টাকা, যা আগে ছিল ১৫০-১৬০ টাকা।
Advertisement
রামপুরার ব্যবসায়ী মামুন বলেন, পাইকারি বাজারে সব ধরনের মসলার দাম বেড়েছে। ফলে আমাদের বাড়তি দামে মসলা কিনতে হচ্ছে। এ কারণে আমরা বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। সামনে ঈদ এ কারণেই হয় তো এখন মসলার দাম বেড়েছে।
খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী জহির বলেন, পাইকারিতে আগে যে জিরা আমরা ৩০০ টাকা কেজি কিনেছি এখন তা ৪৫০ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে। এই দামে জিরা কিনে ৫০০ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব না। জিরার মতো পাইকারি বাজারে সব ধরনের মসলার দাম বেড়েছে। ফলে আমরা বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।
তবে পাইকারিতে মসলার দাম বাড়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পাইকাররা। এ বিষয়ে পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি অমর কান্তি দাশ জাগো নিউজকে বলেন, পাইকারিতে মসলার দাম বাড়েনি বরং কমেছে। কিছুদিন আগে যে জিরার কেজি ৪০০ টাকা বিক্রি করেছি, তা এখন ৩০০ টাকা বিক্রি করছি। এলাচ বিক্রি করছি ২৯০০-২৯৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৩২০০ টাকা।
তিনি বলেন, এলাচ, মরিচ, দারুচিনির দাম কমে গেছে। সামনে আরও দাম কমবে। কারণ এখন চিন ও ভারত থেকে কম দামে মাল আসছে। খুচরা বাজারে দাম বাড়লে তো আমাদের কিছু করার নেই। খুচরা ব্যবসায়ীদের তো আমি কন্ট্রোল করতে পারব না।
মৌলভীবাজারের মসলার পাইকারি প্রতিষ্ঠান রুবেল ট্রেডিংয়ের মালিক মো. রুবেল জাগো নিউজকে বলেন, লকডাউনের কারণে ২৫ তারিখের পর থেকে বেনাপোল ও চট্টগ্রাম বন্দরে মাল আটকে ছিল। যে কারণে মসলার দাম কিছুটা বেড়েছিল। কিন্তু এখন সব খুলে গেছে, মাল আসছে। ফলে সব ধরনের মসলার দাম কমেছে। এমনকি নরমাল সময়ের থেকেও এখন অনেক পণ্যের দাম কম।
এমএএস/এমএফ/এমকেএইচ