আন্তর্জাতিক

নিঃস্ব শ্রমিকদের ট্রেনভাড়া নিয়ে মোদি সরকারের ‘নাটক’

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত ২৫ মার্চ অনেকটা হুট করেই ভারতে লকডাউন ঘোষণা করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এতে বিভিন্ন রাজ্যে আটকা পড়েন অন্তত এক কোটি অভিবাসী শ্রমিক। নিষেধাজ্ঞার কারণে কাজ বন্ধ, তার ওপর অভিবাসী হওয়ায় ত্রাণ পেতেও দুর্ভোগ। ফলে কিছুদিনের মধ্যেই মারাত্মক দুরবস্থায় পড়েন এসব শ্রমিক। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর সম্প্রতি বিশেষ ট্রেনে তাদের নিজ রাজ্যে ফেরানোর ঘোষণা দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। তবে সেক্ষেত্রে ভাড়া নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক।

Advertisement

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, গত ১ মে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, ট্রেনের ভাড়া শ্রমিকদেরই পরিশোধ করতে হবে। তবে চাইলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোও নিজ উদ্যোগে সেসব ভাড়া মেটাতে পারে। এরপর থেকেই এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা শুরু করেন বিরোধীরা। সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব থেকে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি– একযোগে সমালোচনায় নামেন মোদি সরকারের বিরুদ্ধে।

কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে অমানবিক উল্লেখ করে উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব বলেন, ‘এ থেকেই বোঝা যায়, কেন্দ্রীয় সরকার ঋণখেলাপিদের ছাড় দেয় আর অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর বোঝা চাপায়।’

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘যে শ্রমিক দুই মাস বেতন পায়নি, তার কাছে ভাড়া চাওয়ার মতো নির্মম আর কিছু হতে পারে না।’ ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার নেতা ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন বলেন, ‘ন্যূনতম মানবিকতাবোধ থাকলে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারত না।’

Advertisement

তবে সরকারের ওপর সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা দেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। সোমবার তিনি ঘোষণা করেন, শ্রমিকদের ট্রেনভাড়া মেটাবে কংগ্রেস।

এর পরপরই কার্যত ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যায় কেন্দ্রীয় সরকার। এদিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যুগ্মসচিব লব আগারওয়াল দাবি করেন, শ্রমিকদের থেকে ভাড়া নেয়ার কথা নাকি কখনোই বলেনি কেন্দ্রীয় সরকার।

তার কথায়, ‘সরকার প্রথমে রাজ্যগুলোকে পরিবহনের ব্যবস্থা করতে বলেছিল। তখন রাজ্যগুলো বলে, স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করুক কেন্দ্র। তারপর ঠিক হয়, শ্রমিকদের যাতায়াতের ভাড়ার ৮৫ শতাংশ রেল বহন করবে, বাকি ১৫ শতাংশ দেবে.সংশ্লিষ্ট রাজ্য।’ এ নেতার দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার প্রথম থেকে এ কথাই বলে এসেছে।

যদিও তার সঙ্গে ১ তারিখের ঘোষণার কোনও মিল নেই। কারণ, সেসময় ভারতীয় রেলের কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যমে বিবৃতিতে বলেছিলেন, যে রাজ্য থেকে শ্রমিকরা ট্রেনে উঠবে সেখানকার প্রশাসনকে সবধরনের পরীক্ষার পর তাদের কাছ থেকে ভাড়া সংগ্রহ করে টিকিট ধরিয়ে দিতে হবে।

Advertisement

এমনকি রেলের নির্দেশিকাতেও বলা হয়েছিল, সুপারফাস্টের চার্জ হিসেবে ৫০ রুপি এবং অন্যান্য খরচ বাবদ আরও ২৫ রুপি, অর্থাৎ ঘরে ফিরতে ৭৫ রুপি অতিরিক্ত দিতে হবে অভিবাসী শ্রমিকদের।

এখন অনেকেই মনে করছেন, সোনিয়া গান্ধীর ঘোষণাতেই চাপে পড়ে সিদ্ধান্ত বদলেছে মোদি সরকার।

এদিন কংগ্রেস সভানেত্রী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার মাত্র চার ঘণ্টার নোটিশে দেশ লকডাউন করেছে। ফলে অভিবাসী শ্রমিকরা বাড়ি ফেরারও সুযোগ পায়নি। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর এত খারাপ অবস্থা আর দেখা যায়নি। খাবার নেই, ওষুধ নেই, অর্থ নেই– লাখ লাখ মানুষ পরিবার-পরিজনের কাছে পৌঁছাতে খালি পায়েই হেঁটে যাচ্ছে। এখনও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বহু অভিবাসী শ্রমিক, দিনমজুর আটকে রয়েছে। তাদের কাছে বাড়ি ফেরার ন্যূনতম অর্থও নেই।’

এরপরই শ্রমিকদের ট্রেনভাড়া মেটানোর দায়িত্ব কংগ্রেস নিচ্ছে বলে ঘোষণা দেন সোনিয়া গান্ধী।

সূত্র: দ্য ওয়ালকেএএ/