অর্থনীতি

করোনা : রাষ্ট্রীয় ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যয় কমানোর নির্দেশ

করোনাভাইরাসের ছোবলে থমকে গেছে দেশের অর্থনীতি। এ মহামারির কারণে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ব্যবসায়ীসহ সব ধরনের মানুষের জন্য প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। এ সংকট মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হচ্ছে তারল্য প্রবাহ বাড়িয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা। তাই এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অফিস স্পেস ভাড়া, সাজসজ্জা বন্ধ রাখা, চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) কম গুরুত্বপূর্ণ বিদেশ ভ্রমণ, বেশি দামি গাড়ি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞাসহ পরিচালন ব্যয় কমানোর জন্য ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

Advertisement

এসব নির্দেশনা দিয়ে রোববার (৩ মে) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান ও এমডিদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। এসব নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগোনিউজকে বলেন, করোনাভাইরাসের থাবায় স্থবির হয়ে পড়েছে সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, পুরো বিশ্ব পড়েছে আর্থিক মন্দার কিনারে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতেও। এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিসে সাধারণ ছুটি বা লকডাউন চলছে, যার মেয়াদ দফায় দফায় বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত করেছে সরকার।

সরকারি সিদ্ধান্ত মতে দেশের কোনো কোনো জেলা-উপজেলায় আবার পুরোপুরি লকডাউন চলমান। এ কারণে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধের পাশাপাশি অর্থনীতির সব চাকা স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে প্রতিদিন হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতিতে পড়েছে দেশ। এর ক্ষতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা বলতে পারছেন না খোদ অর্থমন্ত্রী। এই পরিস্থিতির মধ্যে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন অপ্রয়োজনে অতিরিক্ত ব্যয় না করে তাই এসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

Advertisement

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ সংকট মোকাবিলায় রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহে অধিকতর তারল্য প্রবাহ বাড়িয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা ও কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। এর প্রস্তুতি হিসেবে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অনাবশ্যক পরিচালন ব্যয় হ্রাসকল্পে নিম্নরূপ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলো।

নির্দেশনাগুলো হলো-১. ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অস্থাবর সম্পদ ক্রয়, অফিস স্পেস ভাড়া, সাজসজ্জা ইত্যাদি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে।

২. গাড়ি ব্যবহারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ সার্কুলার অনুসরণ করতে হবে এবং সাশ্রয়ী হতে হবে।

৩. পর্ষদ সভাসহ অন্যান্য সভা অনুষ্ঠান, বার্ষিক সাধারণ সভা, আপ্যায়ন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যয় যথাসম্ভব কমাতে হবে। সভার জন্য ভেনু ভাড়া না করে ব্যাংকের কনফারেন্স রুমেই আয়োজন করতে হবে।

Advertisement

৪. ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের চেয়ারম্যান ও নির্বাহীদের অনাবশ্যক বিদেশ ভ্রমণ না করা।

৫. বাৎসরিক ক্যালেন্ডার, ডায়েরি মুদ্রণ বা এ জাতীয় প্রচারণামূলক ব্যয়ে অর্থ বরাদ্দ সীমিত করতে হবে।

৬. কর্মচারীদের ভ্রমণ ও যাতায়াত ভাতা, আপ্যায়ন খরচ, স্টেশনারি, উন্নয়ন ফান্ডসহ বিবিধ খরচে মিতব্যয়ী হতে হবে।

৭. ক্রান্তিকালীন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সভাসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।

৮. পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ ইত্যাদি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে।

৯. ব্যাংকের ফ্রন্টলাইনে যারা কাজ করেন, তাদের অধিকতর স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রদান করা ও যাতায়াত সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়াতে হবে। এসব নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে।

এদিকে করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় এক লাখ কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, তার মধ্যে শিল্পঋণ খাত পাবে ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাত পাবে ২০ হাজার কোটি টাকা। এ প্যাকেজে রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে পাঁচ হাজার কোটি টাকা; নিম্ন আয়ের মানুষ ও কৃষকের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা, রফতানি উন্নয়ন ফান্ডের জন্য ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা; প্রিশিপমেন্ট ঋণ বাবদ পাঁচ হাজার কোটি টাকা; গরিব মানুষের নগদ সহায়তা বাবদ ৭৬১ কোটি টাকা; অতিরিক্ত ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা কেজিতে চাল দেয়ার জন্য ৮৭৫ কোটি টাকা এবং স্বাস্থ্যখাতে বাজেটের অতিরিক্ত ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

যদিও এ প্যাকেজের অধিকাংশ টাকার সংস্থানই হবে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে। কেবল প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণে সুদ ভর্তুকি বাবদ প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা এবং রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে পাঁচ হাজার কোটি টাকার সংস্থান বাজেট থেকে হবে। এছাড়া গরিব মানুষের নগদ সহায়তা বাবদ ৭৬১ কোটি টাকা, ১০ টাকা কেজিতে চাল দেয়ার জন্য ৮৭৫ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যখাতের জন্য বরাদ্দের টাকাসহ বেশ কিছু অর্থ বাজেট থেকে সংস্থান করা হবে। এ প্যাকেজের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্য দিক-নির্দেশনা দেয়ার পাশাপশি পর্যবেক্ষণও করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

এমইউএইচ/এইচএ/এমএস