করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় অর্থনীতিবিদ-বিশেষজ্ঞ-পেশজীবীদের সমন্বয়ে তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি ‘জাতীয় পুনর্গঠন কমিটি’ গঠনসহ আট দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে ‘নাগরিক ঐক্য’। রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্যের উদ্যোগে ‘কোভিড-১৯ : বৈশ্বিক মহামারি এবং বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা থেকে দলের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এ প্রস্তাবনা দেন।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘এখন একটা যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে। প্রথাগত যুদ্ধের চাইতে এই যুদ্ধ আরও ভয়ংকর। এই যুদ্ধ অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে। এমন একটা পরিস্থিতিতে সারা পৃথিবীর সবদেশ, সব শ্রেণী-পেশার এবং রাজনৈতি দলের মানুষকে নিয়ে যৌথভাবে এই সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু সরকার সেদিকে যায়নি। এমনকি এই বীভৎস ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পরও সেই ব্যাপারে তাদের কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।’
মান্না বলেন, ‘এই দায় এককভাবে তাদেরকেই নিতে হবে। এই সময়ে এসেও সরকার যদি মনে করে তারা জনগণেরে পাশে দাঁড়াবে। তাহলে কিছু পদক্ষেপ এখনই জরুরিভাবে নিতে পারে। সেটা মাথায় রেখে নাগরিক ঐক্য এই মুহূর্তে সরকারের কাছে এই আট দফা প্রস্তাব দিচ্ছে।’
আট দফা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন পেশাজীবী, এনজিও প্রতিনিধির সমন্বয়ে ৩-৫ বছর মেয়াদি একটি স্থায়ী ‘জাতীয় পুনর্গঠন কমিটি’ গঠন, ত্রাণ চুরিসহ স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির অভিযোগ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এনে শাস্তির ব্যবস্থা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-মাদরাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ফি আগামী ছয় মাসের জন্য মওকুফ, মাদরাসা ভিত্তিক লিল্লাহ বোডিং, এতিমখিানা ও বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে আগামী তিন মাসের খাবার সরবারহ, ‘দিন আনে দিন খাওয়া’ দুই কোটি পরিবারকে তিন মাসের খাবার সরবারহ নিশ্চিত করা, মধ্যবিত্ত-নিম্ন-মধ্যবিত্ত দুই কোটি মানুষের জন্য ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা।
Advertisement
নাগরিক ঐক্যের প্রস্তাবে আরও বলা হয়, দরিদ্র কৃষকদের সব ঋণ মওকুফ করা, মাঝারি চাষিদের ঋণ ছয় মাসের জন্য মওকুফ, চলতি বোরো মওসুমের খাদ্যশস্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিনা খরচে কর্তন, ত্রাণ বিতরণ ও টিসিবি কাযর্ক্রম তদারকি, রেশনিং এবং কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার দায়িত্ব সামরিক বাহিনীর হাতে ন্যস্ত, সামরিক বাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং এনজিও’র সমন্বয়ে তালিকা প্রণয়ন, বিতরণ ও বিপণনের ব্যবস্থা গ্রহণ, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য পর্যাপ্ত ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী সুরক্ষা উপকরণের ব্যবস্থা, সব ধরনের গৃহস্থালি ইউটিলি বিল আগামী তিন মাসের জন্য মওকুফ, পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বাড়ির মালিকদের প্রদান, ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক আয়ের মানুষের বাড়ি ভাড়ার অর্ধেক সরকারকে বহন করা এবং সরকারের ঘোষিত ঋণ প্রণোদনা বিতরণ তদারকিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান গভর্নর, শীর্ষ পর্য়ায়ের কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যক্তিবর্গ, এনজিও প্রতিনিধি, অর্থনীতিবিদ, গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিসহ মনিটরিং সেল গঠন প্রভৃতি।
সরকারের কঠোর সমালোচনা করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, ‘এই ধরনের দ্বি-চারিতা পৃথিবীর অন্য কোথাও হচ্ছে না। বিভিন্ন ভুল-ক্রটির কথা বলা হচ্ছে। আমাদের এখানে বলার পরেও যখন সেটা করা হচ্ছে তখন কী বলব। গভর্নেন্স- যারা শাসন করছেন তাদের বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘সবাই বলছেন দুই কোটি পরিবারকে বাঁচাতে তাদের অন্তত তিন মাসের খাবারের ব্যবস্থা করুন। সেই সম্পর্কে সরকার কথা বলছেন না। আমাদের এখন জোরে কথা বলা দরকার, চাপ তৈরি করা দরকার সরকারের ওপর। যাচ্ছেতাই করা যেতে পারে না মানুষের জীবন নিয়ে। আজকে সামাজিক শক্তিগুলোকে একসুরে কথা বলতে হবে।’
মান্নার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপির শওকত মাহমুদ, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মুনির হোসেন কাশেমী, খেলাফত মজলিশের মাওলানা মাহবুবুল হক, এবি পার্টির অবসরপ্রাপ্ত মেজর আব্দুল ওহাব মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নূর প্রমুখ।
Advertisement
এছাড়াও স্কাইপে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর সালেহ উদ্দিন আহমেদ ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
কেএইচ/এমএফ/এমকেএইচ