করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্থ দিয়েগো ম্যারাডোনার দেশ আর্জেন্টিনাও। যে দেশটিকে ম্যারাডোনা নিজের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে মনে করেন, সেই ইতালি তো সবার আগেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। করোনার কারণে মৃত্যুর চেয়ে এখন মানুষ খাদ্য সঙ্কটে পড়ে গেছে সবচেয়ে বেশি। সেই অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অবশেষে ম্যাারডোনার একটি জার্সি নিলামে তোলা হয়েছে ইতালিতে।
Advertisement
সেই জার্সিটি আবার বিক্রিও হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। বিক্রি হলো মোট ৫৫ হাজার ডলারে (প্রায় ৪৭ লাখ টাকা)। ইতালির ন্যাপোলিতে করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের সাহায্যে ব্যায় করা হবে এই অর্থ।
ম্যারাডোনার জার্সিটি কিন্তু তিনি নিজে নিলামে তোলেননি। তুলেছেন ইতালির সাবেক ফুটবলার সিরো ফেরেরা। ৩৩ বছর ধরে জার্সিটি তার কাছেই ছিল। ম্যাারডোনার আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধেই ইতালির হয়ে অভিষেক হয়েছিল সিরোর। ১৯৮৭ সালের জুন মাসে একটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে।
সেই ম্যাচ থেকেই দু’জনের বন্ধুত্ব। ওই ম্যাচের পরই সিরোর হৃদয় জিতে নিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। কারণ নিজের জার্সি খুলে দিয়েছিলেন সিরো ফেরেরাকে। দু’জনের বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হয় ন্যাপোলিতে একসঙ্গে খেলার সময়।
Advertisement
১৯৮৭ এবং ১৯৯০, এই দু’বছর সিরি ‘এ’ শিরোপা জিতেছিল নাপোলি। যে সাফল্যের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন ম্যারোডোনা এবং ডিফেন্ডার সিরো। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে দিশেহারা ইতালিতে এরই মধ্যে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিছুটা কমে আসলেও, এখনও প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা। পুরো দেশজুড়ে এখনও লকডাউন। যদিও লকডাউন শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে ইতালি সরকার।
তবে করোনায় সবচেয়ে বিপদে রয়েছেন মানুষ। অনেকেই খাদ্যাভাবে পড়ে গেছে। তাদের পাশে দাঁড়াতে দীর্ঘদিন ধরে সযত্নে রাখা ম্যারাডোনার জার্সি নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নেন সিরো।
সাবেক সতীর্থের এই উদ্যোগে দারুণ খুশি ম্যাারডোনাও। ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমরা আরও একটা ম্যাচ জিতলাম সিরো ফেরেরা। এই জয়টাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। এই ম্যাচটাও আমরা জিতলাম কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, যেমন এর আগেও জিতেছি। এই অসহনীয় পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে এভাবেও থাকতে পারলাম ভেবে সম্মানিত বোধ করছি।’
সিরো জানিয়েছেন, ম্যারাডোনা ছাড়া আরও কয়েকজন খেলোয়াড়ের বিভিন্ন স্মারক নিলামে উঠেছিল। সবমিলিয়ে সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ ৮৫ হাজার ইউরো (প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা)। ইতালির বিশ্বকাপজয়ী (২০০৬ সালে) অধিনায়ক ফ্যাবিও ক্যানাভারোকে নিয়ে সিরো ফেরেরা একটা ফান্ড গড়ে তুলেছেন। সেই ফান্ডেই এই টাকা জমা দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে ন্যাপোলিতে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষকে সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
Advertisement
এদিকে ঘরবন্দি ম্যারাডোনা বেশ হাঁপিয়ে উঠেছেন। অপেক্ষায় রয়েছেন মাঠে ফেরার। ম্যারাডোনার কথায়, ‘মাঠে বেশিদিন যেতে না পারলে মন ছটফট করে। কিন্তু উপায়ও নেই। সারা বিশ্বের পরিস্থিতিই খারাপ।’
এর আগে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ম্যারাডোনার দুটি জার্সি নিলামে তোলা হয়েছিল। যে দুটি বিক্রি হয়েছে ১৮৫০০ ইউরোয় (১৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা)। ন্যাপোলিতে ১৯৯০-৯১ মৌসুমে লাল রঙয়ের যে ৯ নাম্বার জার্সি পরে খেলতেন ম্যারাডোনা, সেই জার্সিটি বিক্রি হয়েছে ১২ হাজার ইউরোয়।
এছাড়া ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে আইকনিক ১০ নাম্বার জার্সি পরে ন্যাপেলিতে খেলেছিলেন ম্যারাডোনা। সে জার্সি বিক্রি হয়েছে ৬৫০০ ইউরোয়।
আইএইচএস/