জাতীয়

করোনা জয় করে বাড়ি ফিরলো দশ মাসের আবির

দেশে প্রতিদিনই যখন করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, তখন চট্টগ্রামে আশার দিশাও দেখা যাচ্ছে। করোনাকে জয় করে বাড়ি ফিরেছে দশ মাস বয়সী শিশু আবির। এ নিয়ে দুই চিকিৎসকসহ চট্টগ্রামে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন ১৭ জন।

Advertisement

শনিবার (২ মে) দুপুর দেড়টার দিকে শিশু আবিরকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয় বলে জাগো নিউজকে জানান চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক জামাল মোস্তফা।

তিনি বলেন, ‘মাত্র ১০ মাসের শিশু, সেই কিনা করোনায় আক্রান্ত! তার চিকিৎসা কীভাবে হবে, তাই নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম সবাই। তবে আলহামদুলিল্লাহ, গতকাল তার দ্বিতীয় নমুনা পরীক্ষাটিও নেগেটিভ আসায় আজ আবিরকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।’

এর আগে গত মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) চন্দনাইশের শিশু আবিরের করোনা পজেটিভ সবাইকে হতবাক করেছিল।

Advertisement

কে ছড়ালো আবিরের শরীরে করোনার বিষ?

এ বিষয়টি হয়তো রহস্যই থকে যাবে। ২০ এপ্রিল শিশু আবিরের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পর তার পরিবারের বাকি সদস্যদেরও নমুনা পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু তারা সবাই করোনা নেগেটিভ। এমনকি চন্দনাইশে তাদের গ্রামেও কোনো করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি। তাই প্রশ্নটা থেকেই যায়, কে ছড়ালো আবিরের শরীরে করোনার বিষ?

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক জামাল মোস্তফা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা বড় রহস্য। তার পরিবারের কেউ করোনায় আক্রান্ত নন। পরিবারের কারও বিদেশ ফেরতেরও ইতিহাস নেই। অথচ মাঝখান থেকে ১০ মাসের একটা শিশু করোনায় আক্রান্ত!’

‘তবে ধারণা করছি, এর আগে তাকে যখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউমোনিয়ার চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছিল তখন হয়তো কোনোভাবে সংক্রমিত হয়েছে,’- বলেন জামাল মোস্তফা।

Advertisement

দুঃসময়ে আগলে রেখেছিলেন মমতাময়ী মা

শিশু আবির যখন করোনায় আক্রান্ত তখন মা রুমা আক্তারকে সবাই পরামর্শ দিয়েছিল শুধু দুধ পান করিয়ে যেন নিজে নিরাপদে থাকে। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকা সত্ত্বেও মা রুমা একবারের জন্যও শিশু আবিরের কাছ থেকে সরে জাননি। বরং করোনা আক্রান্ত শিশুকে নিয়ে ছিলেন জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডেই। তবে পুরো ১২ দিন আবিরের সঙ্গে থাকলেও মা রুমার নমুনাও করোনা নেগেটিভ এসেছে কাল।

চিকিৎসক জামাল মোস্তফা বলেন, ‘ছেলেকে নিয়েই হাসপাতালে ছিলেন রুমা। করোনার মতো ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ায় ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তিনি এক মুহূর্তের জন্যও সন্তানকে একা রাখেননি। এটাই আমাদের পরিবার, বাঙালি মায়েরা এমনই!’

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত ৭৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া দেশের বিভন্ন এলাকায় শনাক্ত আরও পাঁচজন চট্টগ্রামে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে এক শিশু, দুই বৃদ্ধ ও দুই নারীসহ মোট ছয়জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া আইসোলেশনে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ছয়জন। মৃত্যুর পর তাদের পাঁচজনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ পাওয়া যায়।

সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন মোট ১৭ জন নারী-পুরুষ। ৪৮ জন আইসোলেশনে ভর্তি আছেন।

জেডএ/জেআইএম