ফিচার

কোন রং কী ধরনের রোগ নিরাময় করে

পৃথিবীর প্রত্যেকটি পদার্থের নিজস্ব রং আছে। সূর্যরশ্মিতে সাতটি রং রয়েছে। সেগুলো হলো-সবুজ, নীল, বেগুনি, হলুদ, কমলা, লাল ও উদ্ভিজ্জ নীল। এগুলো সবই প্রাকৃতিক রং। প্রত্যেকটি রঙেরই রয়েছে নির্দিষ্ট রোগ নিরাময় ক্ষমতা। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এসব রঙের ভূমিকা অপরিসীম। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মো. বিল্লাল হোসেন-

Advertisement

রং দিয়ে রোগ নিরাময়ের পদ্ধতিকে বলা হয় ক্রোমোথেরাপি। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রং বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রায় ২,৫০০ বছর আগে পিথাগোরাস রঙের মাধ্যমে রোগ নিরাময়ের পদ্ধতি প্রয়োগ করেন চীন, মিশর ও ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। ড. র‌্যাবিটের মতে, ‘প্রাকৃতিক গবেষণাগারে সূর্যের আলো হচ্ছে প্রধান নিরাময়কারী পদার্থ।’

আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, কোন রং কী ধরনের রোগ নিরাময়ে ভূমিকা পালন করে থাকে-

লাল: লাল রং হচ্ছে আগুন ও রাগের প্রতীক। এটি উত্তেজক এবং শক্তিদায়ক রং হিসেবে কাজ করে থাকে। এ রং ধমনির রক্তবাহিকা উত্তেজিত করে এবং শরীরের তাপমাত্রা ফিরিয়ে আনে। লাল রং নিম্নরক্তচাপ, রিউমাটিজম, প্যারালাইসিস, অ্যানিমিয়া ও টিউবারকিউলোসিস নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

Advertisement

কমলা: কমলা হচ্ছে উন্নতি ও গর্বের প্রতীক। এটি দেহে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং স্নায়ুতন্ত্রকেশক্তিশালী করে। কিডনি ও পিত্তথলীর পাথর, হার্নিয়া এবং অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগের জন্য বিশেষউপকারী। এছাড়া কমলা রং শিশুর জন্মের পরে মায়ের বুকের উৎপাদন প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করে।

বেগুনি: স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতা, মানসিক সমস্যা ও নিদ্রাহীনতা প্রতিরোধে সহায়তা করে বেগুনি রং।

হলুদ: হলুদ রং আনন্দ ও সুখের সাথে সম্পৃক্ত। এটি ল্যাক্সেটিভস ও ডাইইউরেটিক হিসেবেও কাজ করে। হলুদ রং মস্তিষ্ক, যকৃত ও প্লীহাকে উত্তেজিত করে। ফলে এ অঙ্গগুলো বেশি কর্মক্ষম হয়ে ওঠে। ডায়াবেটিস, বদহজম, কিডনি ও লিভারের রোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, চোখের রোগ ও সিফিলিস প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

উদ্ভিজ্জ নীল: এ রং রক্ত উষ্ণকারী এবং অ্যান্টিসেপটিক নীল হিসেবে কাজ করে থাকে। কোন ধরনের অস্বস্তি ছাড়াই এ রং আপনার দেহকে সতেজ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কোষ্ঠকাঠিন্য, সাদাস্রাব, মাইগ্রেইন ও ত্বকের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে।

Advertisement

সবুজ: সবুজ রং ঐক্যের প্রতীক। এটি সাধারণত জ্বর, স্নায়ুদুর্বলতা, আলসার, ইনফ্লুয়েঞ্জা,ম্যালেরিয়া, ঠান্ডা, যৌনরোগ ও ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এ রং চোখের জ্যোতিকেশক্তিশালী করে। ব্যথা নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

নীল: নীল রং ব্যথা কমায়, রক্ত পড়া বন্ধ করে ও ক্ষতস্থান সারাতে সাহায্য করে। আমাশয়, কোলিক, অ্যাজমা, শ্বাসতন্ত্রের রোগ ও উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

ক্রোমোথেরাপি চলাকালীন বিভিন্ন রঙের খাবার অবশ্যই জরুরি। এবার তাহলে জেনে নেওয়া যাক, কোন রং কোন খাবারে পাওয়া যায়-

১. লাল রং পাওয়া যায় টমেটো, তরমুজ, লাল বাঁধাকপি, বিট এবং যেসব ফলের ত্বক লাল সেই সব ফলে।২. কমলা রং পাওয়া যায় গাজর, কমলা, আম, পেঁপে ইত্যাদিতে। ৩. বেগুন, জাম ও আঙুরে পাওয়া যায় বেগুনি রং। ৪. কলা, আম, হলুদ আপেল, পেয়ারা, কুমড়া ও আঙুরে পাওয়া যায় হলুদ রং। ৫. সব সবুজ শাক-সবজি ফল-মূলে রয়েছে সবুজ রং। ৬. নীল রং পাওয়া যায় নীল আঙুর, নীল শিম ও নীল তালে।

তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, রং আসলেই রোগ প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আসুনপ্রচুর রঙিন শাক-সবজি ও ফল-মূল খাই, সুস্থ থাকি।

লেখক: শিক্ষার্থী, ফলিত পুষ্টি খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

এসইউ/জেআইএম