দেশে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবার জন্য সরকার ঘোষিত ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ওয়ার্ড বয়সহ সহায়ক জনবলের সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও চিকিৎসক-নার্সসহ সেবাদাতারা আক্রান্ত হচ্ছেন। সরকারিভাবে পূর্ণাঙ্গ পরিসংখ্যান না থাকলেও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের হিসাবে, প্রায় ৮০০ চিকিৎসক-নার্স এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া রোগীদের তথ্য গোপনসহ নানা কারণে অনেক চিকিৎসক-নার্সসহ জনবলকে হোম কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশনে যেতে হচ্ছে। ফলে ধীরে ধীরে প্রকট হতে শুরু করেছে প্রয়োজনীয় জনবল সংকট।
Advertisement
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে এমনটি জানা গেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে স্বাস্থ্য অধিদফতর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাময়িকভাবে কাজ করার জন্য আগ্রহী চিকিৎসক, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ওয়ার্ডবয় ও আয়াদের আবেদন আহ্বান করেছে। এক্ষেত্রে নাম, পদবি, কর্মরত প্রতিষ্ঠানের নাম ও সেবাদান করতে ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের (www.dghs.gov.bd) ই-মেইলে আবেদন করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে গত ২৯ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. বেলাল হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে করোনা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় ক্রমশ করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজন হচ্ছে। করোনা হাসপাতালে কর্মরত বিভিন্ন পদবির চিকিৎসক, কর্মকর্তা, টেকনোলজিস্ট এবং সহায়ক কর্মচারীদের কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার কারণে অতিরিক্ত জনবলের প্রয়োজন হচ্ছে। এ কারণে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আগ্রহী চিকিৎসক, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ওয়ার্ডবয় ও আয়াদের নাম, পদবি, কর্মরত প্রতিষ্ঠানের নাম ও সেবাদান করতে ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে আবেদন করতে বলা হচ্ছে।
শুক্রবার (১ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ হেলথ বুলেটিন অনুসারে, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আট হাজার ২৩৮ জন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ১৭০ জন। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন ১৭৪ জন। যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে সিলেটের ডাক্তার মঈন উদ্দিনও রয়েছেন। তবে মোট আক্রান্তদের মধ্যে কতোজন চিকিৎসক রয়েছেন, তার কোনো সরকারি হিসাব পাওয়া যায়নি।
Advertisement
বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) তথ্যানুযায়ী, গতকাল ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৪৭৫ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ঢাকা বিভাগে ৩৪৩ জন, ময়মনিসংহ বিভাগে ৫৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪ জন, খুলনা বিভাগে ২৫ জন, বরিশাল বিভাগে ১০ জন, সিলেট বিভাগে ছয়জন, রংপুর বিভাগে সাতজন, অন্যান্য বিভাগে ১৬ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে অনেক চিকিৎসক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রেও (আইসিইউ) আছেন।
সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটসের তথ্যানুসারে, ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত নার্সের সংখ্যা ৩১১ জন। তাদের মধ্যে ৪৪টি সরকারি হাসপাতালে ২০৪ জন ও বেসরকারি ২০টি হাসপাতালে ১০৭ জন নার্স আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৬০ জন, বরিশালে ৪ জন, সিলেটে ২ জন, ময়মনসিংহে ২৮ জন, রংপুরে ৪ জন, খুলনায় ৮ জন ও রাজশাহী বিভাগে ৫ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে সন্তানসম্ভবা ৪ জন নার্স রয়েছেন। অবশ্য সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১২ জন নার্স।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত জটিল রোগীদের চিকিৎসার জন্য ১৪টি সরকারি ও ৩টি বেসরকারি হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়েছে। ১৪টি সরকারি হাসপাতাল হলো—কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, লালকুঠি বাজারের মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, বাবুবাজারের মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, কমলাপুর রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতাল, মিরপুরের রিজেন্ট হাসপাতাল, যাত্রাবাড়ীর সাজেদা ফাউন্ডেশন, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট ও হাসপাতালের দুই নম্বর ভবন, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এবং গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
বেসরকারি পর্যায়ে হলি ফ্যামিলি, আনোয়ার খান মর্ডান ও ইউনিভারসেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকেও করোনা ডেডিকেটেড ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে এগুলো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ব্যবহার হবে।
Advertisement
এমইউ/এইচএ/জেআইএম