ত্রাণের ১৫ টন চাল উত্তোলনের পর গায়েব হওয়ার ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার ‘অভিযোগে’ অবশেষে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার আলোচিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈকা সাহাদাতকে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) রাতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে সাঈকা সাহাদাতকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
একই আদেশে ৩ মে’র মধ্যে তাকে সংযুক্তকৃত কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে। তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা সিদ্দিকা বেগমকে।
এর আগের দিন একই ঘটনায় উপজেলার টেইটং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে চেয়ারম্যানের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে মন্ত্রণালয়। তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাও করা হয়েছে। এরপর পরই তাকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
Advertisement
ত্রাণের চাল নিয়ে ‘নয়-ছয়ে’ ইউএনওর সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠলেও তার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। তার ‘শাস্তি’ শুধুমাত্র প্রত্যাহারেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
২৭ এপ্রিল ত্রাণের চাউল গায়েবের ঘটনা প্রকাশের পর এবং পেকুয়ার বারবাকিয়া হোসনে আরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৩০০ বস্তা চাউল জব্দের ঘটনায় ‘পেকুয়ায় ত্রাণের ৩০০ বস্তা জব্দ চাউল নিয়ে চলছে চালবাজি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে তদন্তে নামে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা।
এরপরই বেরিয়ে আসে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ শাখা থেকে ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই মানবিক সহায়তা হিসেবে পেকুয়ার টেইটং ইউনিয়নে ৪০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। ইতিমধ্যে ২৫ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ১৫ টন চকরিয়ার খাদ্য গুদামে মজুত ছিল। কিন্তু সম্প্রতি করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দিনমজুর, রিকশাচালক ও অসহায় দুস্থ পরিবারের জন্য সরকারের নতুন বরাদ্দ আসছে জেনে গুদাম খালি করতে ২০১৯ সালের বরাদ্দের সেই ১৫ মেট্রিক টন চাল উত্তোলন করতে গত ৩১ মার্চ টেইটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম চৌধুরীর অনুকূলে পরিপত্র স্বাক্ষর করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈকা সাহাদাত। সেই সব চালের ৩ টন ৬ এপ্রিল, বাকি চাল ৯ এপ্রিল পৃথক স্বাক্ষরে তোলেন উল্লেখিত ইউপি চেয়ারম্যান।
তবে উত্তোলন চাল কী করা হয়েছে এ হিসেব ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা ইউএনও কারও কাছে নেই। দীর্ঘ প্রচেষ্টা চালিয়েও বরাদ্দকৃত ওই চালের কোন হদিস মেলেনি এখনও। ফলে, সরকারি ত্রাণের এসব চালের হিসেব দিতে ব্যর্থ হওয়ায় চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়। চেয়ারম্যান ও দলীয় পদ থেকেও বরখাস্ত হন। একইসঙ্গে ইউএনও সাঈকা সাহাদাতের বিরুদ্ধে ১৫ টন চাল কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় তাকে প্রত্যাহার করা হলো।
Advertisement
তবে, একই সময়ে পেকুয়ার বারবাকিয়া হোসনে আরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৩০০ বস্তা চাল জব্দ করা হয়। জব্দকৃত চাল ওই স্কুলের মাঠ ভরাটের জন্য বরাদ্দ করা। মাঠ ভরাট করতে ১১৭.৪২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। ওই কাজের বিপরীতে বরাদ্দের চালের বেশিরভাগ ইতিমধ্যে উত্তোলন করা হয়। অবশিষ্ট ছিল ২৮ টন। এই চালের মধ্য থেকে ডিও নিয়ে ২৬ এপ্রিল ১৫ টন চাল উত্তোলন করে স্কুলে রাখা হয়।
এ অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প সভাপতি ছিলেন- শিলখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান ওয়ারেচী। চাল গায়েবের সূত্র ধরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই দিন পুলিশ তাকে আটক করে থানা হাজতে নিয়ে যায়। চাল উত্তোলনের বৈধ কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ২৪ ঘণ্টা পর রোববার রাতে ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
আর প্রাথমিক তদন্তে স্কুলের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত চালের সঙ্গে লোপাট হওয়া চালের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানানোর পর ত্রাণের ১৫ টন চাউল গায়েবের বিষয়টি জোরালো হয়ে উঠে। এতে চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং অন্য সংশ্লিষ্টদের নৈতিকতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এদিকে, সরকারের এই তড়িৎ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন পেকুয়ার সর্বস্তরের মানুষ। তাদের আশা, প্রত্যাহার হওয়া ইউএনওর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগসমূহের নিরপেক্ষ তদন্ত দুদক বা অন্য কোনো স্বচ্ছ সংস্থার মাধ্যমে করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাংসদ জাফর আলম পেকুয়ার ইউএনও সাঈকা সাহাদাতকে প্রত্যাহার এবং নতুন ইউএনও হিসেবে নাজমা সিদ্দিকা বেগমকে নিয়োগ প্রদানের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এফআর/পিআর