দেশজুড়ে

স্বাক্ষর জাল করে তিন বছর ধরে ১০ টাকা কেজির চাল উত্তোলন

গাইবান্ধার ফুলছড়িতে হতদরিদ্রদের জন্য সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ১০ টাকা কেজি দলের চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তালিকা অনুযায়ী যাদের নামে মাসের পর মাস চাল উত্তোলন করা হচ্ছে তারা তা জানেনেই না। ফুলছড়ি উপজেলার কয়েকশ নদী ভাঙন কবলিত মানুষের নাম খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় থাকলেও তাদের ভাগ্যে জোটেনি চাল। মাসের পর মাস বছরের পর বছর তাদের স্বাক্ষর জাল করে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল তুলে নিয়েছে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার এক ডিলারসহ একটি চক্র।

Advertisement

সরেজমিনে জানা যায়, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বাউশি গ্রামের কোকিলা বেগম। দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে অভাবের সংসারে প্রতিদিন তাকে যুদ্ধ করতে হয়। তিন বছর আগে ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে আবেদন করেন তার স্বামী লাল বাবু। তালিকা প্রণয়নের পরে তার মৃত্যু হলে স্ত্রী কোকিলা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড স্থানীয় ডিলারের কাছে জমা দেন নাম পরিবর্তনের জন্য। এরপর নাম পরিবর্তন না করে সেই লাল বাবুর স্বাক্ষর জাল করে চাল উত্তোলন করা হচ্ছে। কোকিলা তিন বছর পর জানতে পারেন তার স্বামীর নামে চাল উত্তোলন করা হচ্ছে ।

এ গ্রামের আবুল হোসেন জানান, তালিকায় নাম আছে কি-না জানতে অনেক বার স্থানীয় ডিলারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনোভাবেই স্বীকার করেননি। তিন বছর পর জানতে পারেন তার নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড হয়েছে। তার স্বাক্ষর জাল করে কার্ড থেকে ইতোমধ্যে ৫১০ কেজি চাল উত্তোলন করা হয়েছে গজারিয়া গ্রামের ফিরোজা বেগম (৫৫) বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্ট করে চার সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে হয়েছে। দেড় বছর পর জানলাম আমার নামে কার্ড হয়েছে। আমার নামে সরকারের ১০ টাকা কেজির ১৭ বস্তা (৫১০ কেজি) চাল বুঝে চাই।

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় নাম থাকা জয়নাল মিয়া (৫০) জানান, সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় নাম থাকলেও বছরের পর বছর ধরে চাল ভোগ করছে স্থানীয় ডিলার হামিদুর রহমানসহ একটি চক্র। বিষয়টি জানাজানি হলে অভিযুক্ত ডিলার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড ও কিছু টাকা ফেরত দিয়ে বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা করছেন।

Advertisement

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার হামিদুর রহমান বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আমাকে চাল বিক্রির জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ডধারী আমার আওতায় যারা আছেন তাদের যে কেউ সরকারের নিয়ম অনুযায়ী আমার কাছ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে চাল কিনতে পারবেন। এই চাল বিক্রির সময় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অফিসার উপস্থিত থাকেন। তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম থাকতে পারে কিন্তু আমার বিতরণে কোনো অনিয়ম হয়নি। আমাকে ফাঁসাতে প্রতিপক্ষ এসব অভিযোগ করেছে।

গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুর আলম জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে এমন ঘটনা ঘটলেও ভুক্তভোগী কেউ ইউনিয়ন পরিষদে বিষয়টি জানায়নি। এখন যেহেতু জানা গেছে তাই তালিকা অনুযায়ী সঠিকভাবেই চাল বিতরণ করা হবে।

ডিলারদের কার্যক্রম দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ফুলছড়ি উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা খাদ্য অধিদফরের প্রতিনিধি উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, পূর্বে চাল বিতরণে কী হয়েছে আমার জানা নেই। চলতি মাসে আমাকে এই ইউনিয়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সঠিক নিয়মে কার্ডধারীদের মাঝে ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিতরণ করা হচ্ছে ।

ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রায়হান দোলন জাগো নিউজকে বলেন, তালিকায় নাম অনুযায়ী খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল না পাওয়ার অভিযোগ এসেছে। অভিযুক্ত ডিলার স্বেচ্ছায় অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছেন। তাই সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সঠিক তালিকা অনুযায়ী চাল বিতরণ করা হচ্ছে। চাল বিতরণে অনিয়ম খতিয়ে দেখে অভিযুক্ত ডিলারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Advertisement

জাহিদ খন্দকার/আরএআর/এমএস