আজ মহান মে দিবস। বিশ্বব্যাপী শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন। এ জন্য শ্রমিকদের কাছে দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বের। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিনটি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হচ্ছে। নতুন করে উচ্চারিত হচ্ছে শ্রমিক অধিকারের বিষয়গুলো।
Advertisement
বস্তুত দিন দিন শ্রমিক অধিকারের বিষয়টি নতুনমাত্রা পাচ্ছে। এ জন্য মে দিবসও আসছে নতুন ধ্যান-ধারণা নিয়ে। একসময় কেবল সংগঠিত শিল্প-শ্রমিকদের কাছেই এ দিবসের আবেদন ছিল। তারা সমাজবিপ্লবের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এ দিনে নতুন করে শপথ গ্রহণ করত। শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে নতুন ও জোরদার লড়াইয়ের ডাক দিত। কিন্তু এখন এর পরিসর আরও ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে। শুধু কলকারখানার শ্রমিক নয়, কায়িকশ্রমে যুক্ত সবার কাছেই মে দিবস অনুপ্রেরণার দিন। এমনকি কৃষিখাতে নিযুক্ত মজুরদের কাছেও পৌঁছে গেছে এ দিবসের মর্মবাণী- কাজের সময় ৮ ঘণ্টা হতে হবে।
১৮৮৬ সালের এই দিনে শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমের উপযুক্ত মূল্য ও দৈনিক আট ঘণ্টা শ্রমসময় নির্ধারণের দাবিতে শ্রমিকরা যখন আন্দোলন করছিল তখন তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছিল। রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল হে মার্কেট। তাতে শ্রমিকদের আন্দোলন থেমে যায়নি, বরং তা আরও শক্তিশালী হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আট ঘণ্টা শ্রমসময়ের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল কর্তৃপক্ষ।
১৮৮৯ সালে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে দিনটিকে মে দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই থেকে সারা দুনিয়ার শ্রমিক সমাজ আজকের দিনটিকে পরম শ্রদ্ধাভরে পালন করে আসছে। সভ্যতার চাকা এগিয়েছে শ্রমদানকারী শক্তির শ্রম, ঘাম আর রক্তের ওপর দিয়ে। এ প্রেক্ষাপটে একজন শ্রমিক অবশ্যই মূল্যায়িত হবে তার অবস্থান থেকেই। কিন্তু শ্রমিকের ইতিহাস বঞ্চনার ইতিহাস। শ্রমের মূল্য দিতে বরাবরই কার্পণ্য করে মালিক। অথচ শ্রমিকের ঘামে-শ্রমেই ঘুরে কলকারখানার চাকা, ওঠে ইমারত, বাড়ে উৎপাদন।
Advertisement
বাংলাদেশে শ্রমিক অধিকারের ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হলেও এখনও রয়ে গেছে নানা অপ্রাপ্তি ও বঞ্চনা। কলকারখানাগুলোতে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত নয়। যখন তখন চাকরিচ্যুতি, ন্যায্য মজুরি না পাওয়া, নারী-পুরুষ লিঙ্গভেদে মজুরির বৈষম্য, সঠিক কর্মপরিবেশ না থাকা, শ্রমিকনিরাপত্তার অভাবসহ রয়ে গেছে অনেক অসুবিধা।
প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ শ্রমশক্তি দেশের শ্রমবাজারে যুক্ত হয়, তাদের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে দুই থেকে আড়াই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়। বেসরকারি পর্যায়ে তিন থেকে চার লাখ। বাকিরা প্রায় বেকারই থেকে যায়। এ অবস্থায় সস্তায় শ্রমকেনার একটি প্রবণতা দেখা যায় মালিকদের মধ্যে। এতে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনাদি থেকে বঞ্চিত হয়।
এবার মে দিবস এসেছে এমন একসময়ে যখন বাংলাদেশসহ গোটাবিশ্ব করোনানামক মরণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত। চলছে লকডাউন। গণপরিবহনসহ বন্ধ রয়েছে কলকারখানা। সীমিত আকারে খুলে দেয়া হয়েছে পোশাককারখানা। অনেকেরই আয়-রোজগার বন্ধ। স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে অনেকে। এদের পাশে দাঁড়াতে হবে। করোনাভাইরাস থেকে রক্ষার পাশাপাশি তাদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ঠেকাতে হবে চাকরিচ্যুতি।
এবারও মে দিবসে নানা কথা উচ্চারিত হবে। অগ্নিউদগারী ভাষণও হবে শ্রমিকদের নিয়ে। কিন্তু শ্রমিকরা যে তিমিরে ছিল রয়ে যাবে সেখানেই। কিন্তু এই অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন। শ্রমিকরা যাতে সত্যিকার অর্থেই তাদের ন্যায্য পাওনাদি পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শ্রমিক-মালিকের স্বার্থ এক ও অভিন্ন হতে হবে। এবারের মে দিবসে এটাই হোক লক্ষ্য।
Advertisement
এইচআর/বিএ/এমএস