চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে কন্টেইনার খালাসে স্টোররেন্ট দ্বিতীয় দফায় শতভাগ মওকুফের সিদ্ধান্ত আসার তিন দিনের মাথায় বন্দরে সৃষ্ট কন্টেইনার জট পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে। একইসঙ্গে কন্টেইনার সরবরাহ বেড়েছে বেসরকারি ডিপোগুলোতে (অফডক)। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে, প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টিইইইএসে কন্টেইনার ডেলিভারি হচ্ছে। আর এতেই প্রাণ ফিরছে অচল হতে বসা চট্টগ্রাম বন্দরে।
Advertisement
করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। চার দফা বাড়িয়ে এই ছুটি ৫ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। এ পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে দেখা দেয় নজিরবিহীন কন্টেইনার জট। ছুটির কারণে আমদানিকারকরা পণ্য ডেলিভারি না করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। এসময় বন্দর থেকে পণ্য সরবরাহ এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছিল। গত বৃহস্পতিবার বন্দরের ভেতর বিভিন্ন ইয়ার্ডে কন্টেইনার রাখার সর্বোচ্চ সীমাও (৪৯ হাজার একক) ছাড়িয়ে যায়। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন কন্টেইনার নামানো বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটির সময় থেকে বন্দর দিয়ে আমদানি করা সব ধরনের কন্টেইনার রাখার ভাড়ায় ছাড় দেয়া হয়েছিল। সাধারণ ছুটির কারণে বেশিরভাগ সংস্থার সেবার আওতা সীমিত করায় এই ছাড় দেয়া হয়। কিন্তু এ সুবিধা নিয়ে উল্টো বন্দরে কন্টেইনার ফেলে রেখে জট বাড়িয়ে দেয়া হলে গত ২০ এপ্রিল তা প্রত্যাহার করে নেয় কর্তৃপক্ষ। পরে পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন ও দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে স্টোররেন্ট মওকুফ সুবিধা আগামী ৪ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। আর এতেই বেড়েছে আমদানি পণ্য খালাসের তৎপরতা। তাই আবারও স্বাভাবিক হতে চলেছে দেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড খ্যাত এ সমুদ্রবন্দর।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক জাগোনিউজকে বলেন, ‘আজ থেকে সপ্তাহখানেক আগের পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। সে দিন বন্দরের ধারণক্ষমতা উপচে গিয়ে সাড়ে ৪৯ হাজার এককে উন্নীত হয়েছিল বাড়তি কন্টেইনারের জট। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া তখন যেন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে কন্টেইনার খালাসে স্টোররেন্ট দ্বিতীয় দফায় শতভাগ মওকুফের সিদ্ধান্ত আসার পর পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।’
Advertisement
তিনি জাগোনিউজকে জানান, গতকাল বুধবার (২৯ এপ্রিল) ও আজ বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) প্রতিদিন প্রায় চার হাজার করে কন্টেইনার বন্দর থেকে অপসারণ করা গেছে। এর মধ্যে আমদানিকারকরা প্রতিদিন প্রায় দুই হাজারের মতো কন্টেইনার ডেলিভারি নিয়েছেন। এছাড়া অফডকগুলোতে প্রতিদিন আরও দুই হাজার কন্টেইনার সরানো হচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ৪৫ হাজার টিইইইএস কন্টেইনার আছে।
এর আগে গতকাল বন্দরের ভাড়া মওকুফ করায় জট কমবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।
তিনি জাগোনিউজকে বলেন, ‘বন্দর থেকে এখন স্টোররেন্ট ফি মওকুফ করা হয়েছে। এটা প্রথমে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ছিল। এখন তা ৪ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ আরও ১৫ দিন বাড়ানো হয়েছে। আমরা আশা করি, এটা (জট) ক্লিয়ার হয়ে যাবে। শেষ ৪-৫ দিন ধরে প্রতিদিন দেড় হাজারের মতো কন্টেইনার মুভ (সরিয়ে নেয়া) হচ্ছে।’
আমদানিকারকদের উদ্দেশে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘যেহেতু ফি মওকুফ করা হয়েছে, সুতরাং আমদানিকারকরা এই সুবিধা নেবেন। সুবিধা পাওয়ায় আমদানিকারকদের পণ্য খালাস করা উচিত।’
Advertisement
ডেলিভারি বেড়েছে অফডকেওকরোনা পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট জট কাটাতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্যের কন্টেইনার পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে বেসরকারি ডিপোগুলোতে। ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডা জানিয়েছে, তাদের ডক থেকেও ক্রমশ বাড়ছে ডেলিভারি।
বিকডার সচিব রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব জাগোনিউজকে বলেন, ‘বন্দরের জট কাটাতে অফডকে কন্টেইনার পাঠাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। আমরা প্রতিদিন দুই হাজারের কাছাকাছি কন্টেইনার পাচ্ছি তাদের কাছ থেকে। এর মধ্যে প্রতিদিন আবার এক থেকে দেড় হাজার কন্টেইনার ডেলিভারিও হচ্ছে। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ চার্জ মওকুফ করলেও আমাদের সে সুযোগ নেই।’
অতিরিক্ত সচিব (বন্দর) এম এম তারিকুল ইসলাম জাগোনিউজকে বলেন, ‘বন্দরের বেসরকারি জেটি বা অফডকেও ব্যবসায়ীরা স্টোররেন্ট মওকুফ চেয়েছেন। অফডক সংশিষ্টদের অ্যাসোসিয়েশন আছে। তারা আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম জাগোনিউজকে বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনুমোদনের পর অফডকগুলোতে সব ধরনের আমদানি পণ্যের কন্টেইনার পাঠানো শুরু হয়েছে। প্রতিদিন অফডকসহ মোট আড়াই থেকে তিন হাজার টিইইউসের বেশি কন্টেইনার ডেলিভারি হচ্ছে। আশা করছি, সপ্তাহখানেক পর জট পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হবে।’
আবু আজাদ/এইচএ/পিআর