‘দোকানের প্রবেশ পথেই টাঙানো মূল্যতালিকায় আদার দাম দেখলাম ২০০ টাকা। গোডাউনে মালামালের স্টক পরীক্ষা করে ফিরে দেখি, এবার সেখানে লেখা ১৪৫ টাকা। দোকানির কাছে জানতে চাইলাম, আসলে আদা কিনেছেন কত দিয়ে? জবাবে দোকানি বললেন, খাতুনগঞ্জ থেকে ২৪৫ টাকা কেজিতে কিনেছেন ওই আদা!’
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট বাজারে পরিচালিত অভিযান প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে এমনটি জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রহুল আমীন।
তিনি বলেন, ‘রমজান আসার আগে কয়েক দফায় চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে আদার দাম বাড়ে। সে প্রভাব রয়েছে স্থানীয় বাজারগুলোতে। অনেকে এ সুযোগে কম দামে কেনা নিত্যপণ্য বেশি দামে বিক্রি করছেন। কেউ কেউ আবার বেশি দামে কেনা পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তাই ভ্রাম্যমাণ আদালত দেখলেই দিশেহারা অবস্থা দোকানিদের।’
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ আদার আড়তে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান
Advertisement
নির্বাহী কর্মকর্তা রহুল আমীন বলেন, ‘আজ দুপুরে মদুনাঘাট বাজারে অমিত স্টোর নামে একটি দোকানে প্রবেশের সময় দেখলাম, মূল্যতালিকায় আদার দাম লেখা ২০০ টাকা। দোকানে ঢুকে তার স্টক চেক করতে করতে দেখি, দোকানি তালিকায় আদার দাম কেটে লিখলেন ১৪৫ টাকা। জানতে চাইলাম, আসলে আদা আপনি বিক্রি করেন কত টাকায়?’
দোকানির জবাব, ‘আদার দাম কমে গেছে, তাই ১৪৫ টাকায় বিক্রি করছি।’ বললাম, আমি দোকানে ঢোকার সময় ছবি তুলেছিলাম, সেখানে ২০০ টাকা লেখা ছিল। আপনার কেনা কত? এবার তার উত্তর, ‘২৪৫ করে ক্রয় করেছি।’ আমার প্রশ্ন, ২৪৫ টাকায় কিনে ১৪৫ টাকায় বিক্রি করবেন? এবার কোনো উত্তর ছিল না বিক্রেতার মুখে।
নির্বাহী কর্মকর্তা রহুল আমীন বলেন, ‘পাইকারি বাজারের কারসাজিতে অনেক খুচরা বিক্রেতা বেশি লাভের আশায় সবচেয়ে কম দামে অর্থাৎ ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় আদা কিনেছেন। এখন ওই টাকায় বিক্রিও করতে পারছেন না। অতি লোভে বিপাকে পড়েছেন তারা।’
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ আদার আড়তে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান
Advertisement
রোজা শুরুর আগে থেকেই প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের সঙ্গে আদার দামও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। বাজার নিয়ন্ত্রণে নামেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। জানা যায়, চট্টগ্রামের ৩৫ আমদানিকারক মিলে তিন হাজার ১৪৩ দশমিক ৯৫ মেট্রিক টন আদা আমদানি করেন। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সসহ এ আমদানিতে খরচ পড়ে ২৫২ কোটি ৬১ লাখ ৭ হাজার টাকা। খুচরায় প্রতি কেজি আদার দাম পড়ে ৮০ টাকা। অথচ ৮০ টাকার সেই আদা খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ২৫০ এবং নগরের বাজারগুলোতে খুচরা বিক্রি হয় ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকায়।
প্রায় সাড়ে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি হওয়া আদার বাজার নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মাত্রাতিরিক্ত দামে আদা বিক্রির প্রমাণ পাওয়ার পর ভ্রাম্যমাণ আদালত এটিকে ‘পেপারলেস ব্ল্যাক মার্কেটিং’ বলে মন্তব্য করেন।
আবু আজাদ/এমএআর/পিআর