রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতাল লকডাউনের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। এ দু’টি হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ও স্টাফরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্ক নিয়ে ডিউটি করছেন।
Advertisement
ইতোমধ্যেই এ দু’টি হাসপাতালের অসংখ্য চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ওয়ার্ডবয়সহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তের তালিকায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ৪০ জন চিকিৎসক ও সাতজন নার্স এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের আটজন চিকিৎসক, ১৬ জন নার্স ও অন্যান্য স্টাফসহ কমপক্ষে ৮৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কেন এত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, এর কারণ জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বৃহস্পতিবার দুপুরে জাগো নিউজকে জানান, বেশ কয়েকটি কারণে এ হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীসহ স্টাফরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
তিনি জানান, এ হাসপাতালটিতে আইসোলেশন সেন্টার খোলা হয়েছিল। সেখানে করোনা সন্দেহভাজন অনেককেই রাখা হয়েছিল। এছাড়া এ হাসপাতালে আক্রান্ত রোগীদের একটি নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছিল। ঢাকা শিশু হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে যেসব নমুনা পরীক্ষা করা হত সেগুলোর নমুনা এ হাসপাতালের সোয়াব কালেকশন সেন্টার থেকে সংগ্রহ করা হত। এ হাসপাতালে একটি ফ্লু কর্নারও করা হয়েছিল। ফলে জ্বর, ঠান্ডা, হাঁচি ও কাশি নিয়ে অনেক রোগী এখানে আসত।
Advertisement
অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া আরও জানান, হাসপাতালের ইনডোরে গাইনি, কিডনি ও সার্জারি বিভাগসহ বেশ কয়েকটি বিভাগে রোগীরা তথ্য গোপন করে ভর্তি হয়েছিলেন। বিশেষ করে বেশ কয়েকজন সন্তান সম্ভবা নারী একাধিক হাসপাতালে ঘুরেও যখন ডেলিভারি করাতে পারছিলেন না তখন এ হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাদের ভর্তি ও ডেলিভারি করান। তারা যে করোনা পজিটিভ ছিলেন তা পরে জানা গেছে। ফলে রোগীর সংস্পর্শে ও অস্ত্রোপচারের সঙ্গে জড়িত চিকিৎসকসহ অন্যান্যরাও আক্রান্ত হন। বর্তমানে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কম হওয়ায় নতুন করে কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি বলে জানান তিনি।
এদিকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে ইতোমধ্যেই জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের তিন নম্বর শিশু ও নারী সার্জারি ওযার্ড, পাঁচ নম্বর পুরুষ নন-পেয়িং ওয়ার্ড এবং কেবিন ব্লক লকডাউন করা হয়েছে।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা তথ্য গোপন করে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। আবার অনেক রোগীর শরীরে করোনার কোনো উপসর্গও ছিল না।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সেলিম মোল্লা জানান, তারা রোগীদের খুব কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ এবং এক্সরেসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকেন বলে তাদের ঝুঁকি বেশি। রোগীদের স্বার্থে তারা এখনও কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
Advertisement
এমইউ/এমএফ/এমএস