মতামত

কামরুল, নূরের ফেরা না ফেরা

অপরাধ করে সীমান্ত পার হলেই যে পার পাওয়া যায় না এর প্রমাণ শিশু রাজন হত্যার মূল আসামি কামরুল ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনা। একই ধারাবাহিকতায় এখন নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার প্রধান আসামী নূর হোসেনকেও দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। দেশের মানুষ চাইছিল এই প্রধান দুই আসামিকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। রাজন হত্যার  পর সৌদি আরবে পালিয়ে যাওয়া কামরুল  ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখন নূর হোসেনকেও যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হোক-এটাই সকলের চাওয়া।  গত ৮ জুলাই সিলেটের জালালাবাদ থানা এলাকার কুমারগাঁওয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনকে। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয় দেশব্যাপী। দাবি ওঠে ঘাতকদের গ্রেপ্তারের। এরই ফাঁকে দেশ ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যায় প্রধান অভিযুক্ত কামরুল ইসলাম। তাকে ফিরিয়ে আনার জোর দাবি উঠতে থাকে। সৌদি আরবের সাথে বন্দি বিনিময় চুক্তি না থাকায় কামরুলকে ফিরিয়ে আনা জটিল বিষয় ছিল। অবেশেষে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তর ও সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে কামরুল ইসলামকে দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে বিশেষ কৃতিত্ব দিতে হয় প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও। এরাই এই ঘাতককে ধরতে সহায়তা করে। এদিকে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ভারতের একটি আদালত। শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাত বিচারিক হাকিমের আদালত এ আদেশ দেন। বারাসাতের ভারপ্রাপ্ত জেলা দায়রা বিচারক সন্দীপ চক্রবর্তীর আতদালত শুনানি শেষে রায়ে বলেন, ‘আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী নূর হোসেনকে ফেরত দিতে হবে।’ আদালতের ওই নির্দেশের পর এখন আশা করা যাচ্ছে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে নূর হোসেনকে নারায়ণগঞ্জের সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করা যাবে। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে থেকে প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭ জন অপহৃত হন। ৩০ এপ্রিল বিকালে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৬ জন এবং ১ মে সকালে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার ১১ মাস পর গত ৮ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সংস্থা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) দুটি মামলায় নূর হোসেন, তিন র‌্যাব কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর ধিক্কার ওঠে সারাদেশে। বিশেষ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া নূর হোসেনকে ফিরিয়ে এনে খুনের রহস্য উদঘাটন এবং বিচারের মুখোমুখি করার জোর দাবি ওঠে। সরকারও বিভিন্ন সময় আশ্বাস বাণী শোনায় নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে। ভারতের আদালতের রায়ের পর এখন নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনার পথ অনেকটাই প্রশস্ত হল। আশা করা যাচ্ছে সকল আইনি জটিলতা শেষে তাকে শিগগিরই দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার ব্যাপারে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে। শিশু রাজন হত্যা এবং নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের বিষয়টি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। এই ঘটনার বিচারের দাবিতে দেশের মানুষজন সোচ্চার। বিশেষ করে প্রধান দুই অভিযুক্তকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে জোর দাবি ছিল। রাজন হত্যার আসামি কামরুল কে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে এখন নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনাটা জরুরি। তাকে ফিরিয়ে আনতে পারলে অপরাধীদের মনে এই ধারণা প্রোথিত হবে যে অপরাধ করে পার পাওয়া যায় না। সেটা দেশে হোক, আর দেশের বাইরে গিয়েই হোক। দেশে আইনের শাসন এবং  ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কোনো বিকল্প নেই। কামরুল এবং নূর হোসেনের মত অপরাধীদের বিচার করা সম্ভব হলে সেটা অপরাধ দমনে এক সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে। এ জন্যই নূর হোসেনকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা অত্যন্ত জরুরি। এইচআর/এমএস

Advertisement