ফিচার

করোনা দুর্গতদের পাশে মানবতার ফেরিওয়ালা

একঝাঁক তরুণ-কিশোর দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে পাড়া-মহল্লা। করোনার মত ভয়ঙ্কর মহামারীর সময় অন্য দশজনের মত ঘরে বসে থাকেনি তারা। কী রাত কী দিন ছুটে চলেছে তারা। করোনার ভয়কে জয় করে দুর্বার-দুরন্ত তারা। ফোনের ও প্রান্ত থেকে অসহায় মানুষের কল পেলেই দ্রুত ছুটে যাওয়া। ওষুধ, খাবার, বিদ্যুৎ বিল কিংবা কোনো রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া। হোক সেটা গভীর রাত, তাতে কী? তারা যে মানবতার ফেরিওয়ালা। চাঁদপুর জেলা সদরে মানবতার ফেরিওয়ালা খ্যাত ‘কিউআরসি’ নামে এ সংগঠনের কার্যক্রম চলছে।

Advertisement

যেভাবে জন্ম: করোনাভাইরাস পরিস্থিতি যখন বাংলাদেশে প্রাথমিক স্টেজে; তখন অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান জুয়েল উদ্যোগ নেন। ‘কিউআরসি’ (কুইক রেসপন্স ডিউরিং ক্রাইসিস) নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তৈরি করেন। সদস্যদের নিয়ে ২০টি মোটরসাইকেল গ্রুপ প্রস্তুত করা হয়। জুয়েলের নির্দেশনায় তারা ২৫ মার্চ থেকে মাঠে নেমে পড়েন। শুরুর দিকে জরুরি ওষুধ, পরিবহন ও বাজার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন। পরে কর্মহীন দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষের ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়।

কার্যক্রম: শুরুর দিকে কয়েকটি হটলাইন নম্বর দেওয়া হয়। এ সব নম্বরে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের অসংখ্য কল আসতে থাকে। সংগঠনের অন্যতম সদস্য মেহেদী হাসান জানান, প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা-১১টা পর্যন্ত কল আসে। এ ছাড়া নাজমুল হাসান বাঁধন এবং কামাল হোসেনের নম্বরেও একইভাবে কল আসতে থাকে। কল অনুযায়ী তারা ওয়ার্ডভিত্তিক ত্রাণসহ অন্যান্য সেবা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার কাজে নেমে যান।

পরিমাণ: সাহায্যের পরিমাণ সম্পর্কে মেহেদী হাসান জানান, গত ২২ এপ্রিল পর্যন্ত চাঁদপুর পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডে প্রায় ৫ হাজারেরও বেশি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়। প্রতি পরিবারের জন্য চাল, ডাল, তেল ও আলু দেওয়া হয়। এ ছাড়া জরুরি ছয়টি সেবা দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত ছয়শ জনের বেশি মানুষকে জরুরি ওষুধ সেবা, ৪শ জনকে পরিবহন সেবা, ৩শ জনকে বাজার পৌঁছে দেওয়া, ১৪০ জনকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া এবং ১১৫ জনের বাসায় বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারে লোড সার্ভিস দেওয়া হয়।

Advertisement

কর্মী যারা: চাঁদপুর বাইক রাইডার্সের আফসান জানি জিহান, আহমেদ মুনসুর, বাঁধন, সামির খান, মামুন, বাবু খান, আরিফ খান, সৃজন, হিমেল, মেহেদী হাসান আকাশ, রাইসুল ইসলাম রাকিব, জিএম রাকিব, জিএম আরিফ, মোস্তাফিজুর রহমান, রাকিব, তানিম, হামিম, তানজিমসহ অনেকে কাজ করছেন। অন্যরা হচ্ছেন- কামাল হোসেন, কাশেম গাজী, জাওয়াদ, নাজমুল হাসান, হৃদয় মজুমদার ও নাহিদসহ ৫০ জন।

প্রশংসনীয়: করোনার এ কঠিন মুহূর্তে জুয়েলের এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে মানুষ ভালো চোখেই দেখছে। বিশিষ্টজনেরাও স্বাগত জানাচ্ছেন। জিল্লুর রহমান জুয়েলের উদ্যোগটি সবার কাছে প্রশংসিত হয়েছে। জুয়েল বলেন, ‘এলাকার সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির দিক-নির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছি। যতদিন পরিস্থিতির উন্নতি না হবে এবং সামর্থ যতদিন থাকবে; ততদিন এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখবো।’

এসইউ/জেআইএম

Advertisement