অর্থনীতি

খামারে ৬০ ঢাকায় ১৩০

লকডাউনের এক মাস পার হলেও পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা এখনও লোকসান দিয়েই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকায় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা বিক্রি হলেও খামারে এর দাম অর্ধেক। খামারে প্রতি কেজি মুরগি ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খামারের চেয়ে দ্বিগুণ দামে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ঢাকায়।

Advertisement

খামারিরা বলছেন, এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১১০ টাকা। সেখানে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। তা-ও আবার অনুরোধ করে পাড়ার ছোট বাজারে দিয়ে আসতে হয়। এবার করোনার কারণে পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা যে লোকসানে পড়েছেন, তা আর কোনোদিন পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন খামারিরা। অনেকে ছেড়ে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন এ ব্যবসা।

পোল্ট্রি এবং ডেইরি শিল্পে আর যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সেজন্য সবরকম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মতে, করোনা সংকটকালীন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। তাই প্রাণিজ পুষ্টির উৎস দুধ, ডিম, মাছ ও মাংসের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এ-সংক্রান্ত সংকট মোকাবিলায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে পোল্ট্রি, ডিম, একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চা, হাঁস, মুরগি ও গবাদিপশুর খাদ্য, দুগ্ধজাতপণ্য, অন্যান্য প্রাণী ও প্রাণিজাত পণ্য, মাছ, মাছের পোনা ও মৎস্য খাদ্য সরকার ঘোষিত ছুটিকালীন নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন, পরিবহন ও বিপণন সচল রাখতে সব জেলা প্রশাসক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে।

Advertisement

তবে মন্ত্রীর এসব নির্দেশনার বিষয়ে অবগত নন কোনো পোল্ট্রি ফার্মের মালিক। তারা বলছেন, পরিবহনজনিত সমস্যার কারণে খামারে কোনো ব্যাপারি যান না। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায় না। বরং মুরগির গাড়ি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পুলিশ নানা রকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। পথে পথে বিভিন্ন বাধার কারণে চালকরাও গাড়ি চালাতে চান না। ফলে খামার থেকে পর্যাপ্ত মুরগি শহরের দিকে আসতে পারছে না। এ কারণে স্থানীয়ভাবে লোকসান দিয়ে মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে খামারিদের।

নওগাঁর নিয়ামতপুরে পোল্ট্রি খামারি মো. খোকন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার দুই হাজার মুরগি খামারে রয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় অনেক কম দামে মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে। এক কেজি মুরগি তৈরি করতে আমাদের খরচ হয় ১০০-১১০ টাকা অথচ আমরা বিক্রি করছি ৬০-৭০ টাকা। প্রতি কেজি মুরগিতে প্রায় ৪০ টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার দুই হাজার মুরগি গড়ে দুই কেজি হলে বিক্রি করি। এখন প্রতিটি মুরগিতে ৮০ টাকা করে লোকসান হচ্ছে। এভাবে দুই হাজার মুরগিতে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। এভাবে আমার দুই লট মুরগি লোকসান হয়েছে। আমার মোট লোকসানের পরিমাণ ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা।’

মাগুরা সদর উপজেলা বাটিকাডাঙ্গা গ্রামের পোল্ট্রি খামারি অনুপ দত্ত। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের প্রতি কেজি মুরগির উৎপাদন খরচ প্রায় ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। রমজানের এই সময়ে প্রতি কেজি মুরগি ফার্মেই খুচরা বিক্রি হওয়ার কথা ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। পাইকারি ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করতাম। সেখানে করোনা পরিস্থিতির কারণে পাইকারি এক কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়।’

Advertisement

তিনি বলেন, খাবারের দোকান ও ওষুধের দোকানে বাকি। লোনবাবদ প্রায় ৪০ লাখ টাকার মতো দেনা রয়েছি। এমন অবস্থায় চরম দুশ্চিতায় আছি।’

করোনার কারণে পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের অবস্থা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ও কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সাবেক সভাপতি ড. শামসুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘মুরগি, ডিম ও দুধ- এগুলো সীমিত আকারে হলেও চালাতে হবে। বাজারে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যতটা পারা যায় এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ নেয়া দরকার। কারণ এ সেক্টরটি ধ্বংস হলে আমাদের পুষ্টির অভাব দেখা দেবে। করোনা হয়েছে বলে সব কিছু বন্ধ করলে চলবে না। মানুষের প্রয়োজনে কাঁচামাল বলে গণ্য যেসব পণ্য, সেগুলো বাজারজাতে যেন কোনো অসুবিধা না হয়, সেদিকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে খেয়াল রাখতে হবে।’

এফএইচএস/এসআর/পিআর