করোনাকালীন সঙ্কট মোকাবিলায় তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ বলেছেন, চাহিদা সৃষ্টি করে উৎপাদিত পণ্য বিক্রির নিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক কর্মচঞ্চলতা সৃষ্টি এবং গরিব মানুষের হাতে নগদ টাকার ব্যবস্থা করতে পারলেই সংকট কিছুটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
Advertisement
করোনাকালীন সংকট এবং তা মোকাবিলার বিষয়ে জাগো নিউজের কাছে এসব কথা বলেন মামুন রশীদ।
তিনি বলেন, কৃষক, উদ্যোক্তা, রেমিটেন্স এবং তৈরি পোশাক খাতেই আমাদের অর্থনীতির নির্ভরতা। সারা বিশ্বেই এখন অর্থনৈতিক ধস। গার্মেন্টসের ভবিষ্যৎ এখনই বলা যাবে না। একই অবস্থা প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রেও। সঙ্গত কারণে আমাদেরকে দেশীয় উৎপাদনে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। চাহিদা তৈরির মাধ্যমে কৃষকের পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।
মামুন রশীদ বলেন, কৃষক তার খামারের দুধ মাটিতে ঢেলে দিচ্ছেন। বগুড়ায় বেগুন পাঁচ টাকা কেজি। মুরগির খামারিরা ডিম বিক্রি করতে পারছেন না। অথচ ঢাকায় বেগুন ৭০ টাকা কেজি। এটা পর্যবেক্ষণের বিষয়। সরকারকে এখানেই নজর দিতে হবে। কৃষককে বাঁচাতে হবে। কৃষকের পণ্য বাজারে এলে অন্যরা বাঁচবে। রাষ্ট্রীয় যে পরিবহন ব্যবস্থা আছে, তার মাধ্যমে পণ্য পরিবহন করা যেতে পারে। সেনাবাহিনী, পুলিশ এই সময়ে পরিবহনে মনিটরিং করতে পারে। প্রয়োজনে ত্রাণের কিছু অর্থ এই পরিবহন ব্যবস্থায় ব্যয় করা যেতে পারে। কারণ ত্রাণ সবাই পাবে না। সবাই ত্রাণ নেবেও না। কিন্তু বিশেষ ব্যবস্থায় ত্রাণের অর্থ ব্যয় করলে, সমাজের ব্যাপক অংশ সুবিধা পাবেন।
Advertisement
অর্থনীতি বিশ্লেষক মনে করেন, এনজিও এবং ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থাগুলোর অধীনে সরকারের প্রণোদনার একটি অংশ মানুষের মাঝে বিতরণ করতে পারলে অর্থের তারল্য সংকট কিছুটা দূর হবে। এটি ব্যাংকগুলো তাদের স্বাভাবিক ঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে পারবে না। কারণ তারা জানে না গ্রামে কার কার এই প্রণোদনা ঋণ দরকার। এটি এনজিও এবং ক্ষুদ্র ঋণদাতারা সংস্থাগুলো ভালো জানে। গ্রামাঞ্চলে ঋণ ও নগদ সহায়তা বিতরণে পিকেএসএফ (পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন) এবং এমআরএ (মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি) নিবন্ধিত এনজিও ও ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাকে ব্যবহার করতে হবে। ঋণ বিতরণের একটি অংশ তাদেরকে দিয়ে করানো যেতে পারে। সরকারকে এসব ব্যাপারে ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, এমন হতে পারে মানুষের হাতে টাকা থাকবে, কিন্তু খাবার মিলবে না। এ কারণে, আর্থিক সহায়তা এমনভাবে বণ্টন করতে হবে যাতে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং মানুষের কাছে তা পৌঁছায়। সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর তালিকা দ্রুত হালনাগাদ করতে হবে এবং সহায়তা বিতরণে এমএফএসগুলোকে (মুঠোফোনভিত্তিক আর্থিক সেবা) সম্পৃক্ত করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, যেকোনো মূল্যে উদোক্তাদের রক্ষা করতে হবে এবং অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সহায়তার আওতায় আনতে হবে।
মামুন আরও বলেন, করোনা মহামারির এ সময়ে প্রায় ৫ কোটি মানুষের হাতে টাকা নেই। এদের মধ্যে সাড়ে তিন কোটি মানুষের আয় ছিল সোয়া এক ডলারের মতো। এখন আয়ের পথ বন্ধ। আরও দেড় কোটি মানুষ যোগ হয়েছেন। তাদের কোনো উপায় নেই। এদের অনেকেই ত্রাণের অধীনে আসছেন। কিন্তু সে ত্রাণ নিয়েও ভাবনার সময় এসেছে। আমরা ত্রাণের মধ্যে প্রোটিনের গুরুত্ব দিতে পারি। ত্রাণের মধ্যে দুধ, ডিম, ডাল যুক্ত করে প্রোটিন-আমিষের চাহিদা তৈরি করা সম্ভব। এ কারণে ত্রাণ সহায়তার অংশ হিসেবে ডিম-দুধকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এতে করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও টিকে থাকতে পারবেন অন্তত। এভাবে না ভাবলে আমরা এই আপদকালীন এবং পরবর্তী সময়ে টিকে থাকতে পারব না।
এএসএস/এমএসএইচ
Advertisement