প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনা মোট ১৫৫ জনের প্রাণ কেড়ে নিলো। আক্রান্ত হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৫৪৯ জন। ফলে দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ছয় হাজার ৪৬২। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন আরও আটজন, এ নিয়ে সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩৯-এ।
Advertisement
মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চার হাজার ৩৩২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫৪ হাজার ৭৩৩টি। নতুন যাদের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, তাদের মধ্যে আরও ৫৪৯ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ফলে মোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ছয় হাজার ৪৬২ জন। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন আরও তিনজন। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৫ জনে। নতুন করে যে তিনজন মারা গেছেন তারা সবাই পুরুষ, ঢাকার বাসিন্দা এবং ষাটোর্ধ্ব। এছাড়া সুস্থ হয়ে উঠেছেন আরও আটজন। সব মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১৩৯ জন।
বুলেটিনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ১১১ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন এক হাজার ২৪৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৪৭ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৭৮৫ জন।
Advertisement
সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে নয় হাজার ৭৩৮টি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে আছে তিন হাজার ৯৪৪টি ও ঢাকার বাইরে পাঁচ হাজার ৯৯৪টি। বর্তমানে করোনা চিকিৎসার জন্য আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৩৪১টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট আছে ১০২টি।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই হাজার ৩৯২ জনকে। এ পর্যন্ত হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে এক লাখ ৮১ হাজার ৭৯৩ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন তিন হাজার ২৩১ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৭৬ হাজার ৮৪০ জন।
সারাদেশের ৬৪ জেলা এবং সেখানকার উপজেলায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৬০১টি প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে ৩০ হাজার ৬৩৫ জনকে কোয়ারেন্টাইন সেবা দেয়া যাবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকার এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয় বুলেটিনে।
Advertisement
প্রায় চার মাস আগে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন গোটা বিশ্বে তাণ্ডব চালাচ্ছে। চীন পরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দিয়ে উঠলেও এখন মারাত্মকভাবে ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের প্রায় পৌনে ৩১ লাখ। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার। তবে সোয়া নয় লাখের মতো রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর প্রথম দিকে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মিললেও এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুও।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। নিয়েছে আরও নানা পদক্ষেপ। যদিও এরই মধ্যে সীমিত পরিসরে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার কিছু পোশাক কারখানা সীমিত পরিসরে খুলতে শুরু করেছে। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করা না গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে কি-না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
পিডি/এমইউ/এইচএ/এমকেএইচ