গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সরকার বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করে। কিন্তু, ২০০১ সালে ৪ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া কার্যক্রমগুলো বন্ধ করে দেয়। বর্তমান মহাজোট সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চালু করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় গ্রামীণ মানুষেরা যাতে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবা পায় সেজন্য এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো কাজ করে যাচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষ অত্যন্ত দরিদ্র হওয়ায় তারা রোগে ভুগে প্রতিনিয়ত। জটিল কোনো রোগ না হলে তারা সহজে হাসপাতালে আসে না। তাই তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার যে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে তা থেকে গ্রামের দরিদ্র মানুষেরা স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে।মাগুরা সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান সহকারী মো. কাওছার আলী জাগো নিউজকে জানান, মাগুরার চার উপজেলায় প্রস্তাবিত কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা ৯৫টি। এর মধ্যে চার উপজেলায় চালুকৃত কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা ৮১টি। বাকি ১৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকের নির্মাণ কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় সেগুলো চালু হয়নি। মাগুরা সদর উপজেলায় প্রস্তাবিত কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা ৩৫টি। তার মধ্যে সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে মোট চালুকৃত ক্লিনিকের সংখ্যা ২৫টি। চালুকৃত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো হলো, উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর, মির্জাপুর, দারিয়াপুর, আঠারোখাদা ইউনিয়নে আড়াইসত, আঠারোখাদা, চন্দন প্রতাপ, বাগডাঙ্গা, কছুন্দী ইউনিয়নে বেলনগর, কছুন্দি, বগিয়া ইউনিয়নের বরই, বাগবাড়িয়া, হাজরাপুর ইউনিয়নে সাচানি রাউতড়া, গৌরিচরনপুর, রাঘবদাইড় ইউনিয়নে দোড়ামথনা গ্রামে, কাজীরাইল, অনপাড়া, মঘি ইউনিয়নের সত্যপুর, রাজিবের পাড়া, খান পাড়া, ভাবনহাটি, জগদল ইউনিয়নে নরসিনহাটি, ছনপুর, জাগলা, চাউলিয়া ইউনিয়নে নিশ্চিন্তপুর, বলেশ্বরপুর, ধলহরা, শত্রুজিৎপুর ইউনিয়নে রুপদাহ, পয়ারি, বেরইলপলিতা ইউনিয়নে বড়জোকা, বামনডাঙ্গা, কুচিয়ামোড়া ইউনিয়নে আসবা, বড়শোলই, গাংনি, গোপালগ্রাম ইউনিয়নে গোয়ালবাথান ও গোপালগ্রামে।শ্রীপুর উপজেলায় মোট ৮টি ইউনিয়নে প্রস্তাবিত কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা ১৯টি। এর মধ্যে চালু রয়েছে ১৫টি। ক্লিনিকগুলো হলো, গয়েশপুর ইউনিয়নে কুশাইছাপুর, জোকা, আমলসার ইউনিয়নে বদনপুর, আমলসার, কালিনগর, শ্রীকোল ইউনিয়নে হাট শ্রীকোল, বরিশাট, দোসতীনা, শ্রীপুর সদর ইউনিয়নে চরগোয়ালপাড়া, গোপালপুর, চিলগাড়ী, দ্বারিয়াপুর ইউনিয়নে চরচৌগাছি, চরগোয়াদাহ, কাদিরপাড়া ইউনিয়নে ঘাসিয়াড়া, কমলাপুর, সব্দালপুর ইউনিয়নে বাখেরা, সোনাইকুন্ডি, নাকোল ইউনিয়নে মধুপুর এবং ছফলগাছা। শালিখা উপজেলার প্রস্তাবিত কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা ১৮টি। ক্লিনিকগুলো হলো, ধনেশ্বরগাতী ইউনিয়নে ধনেশ্বরগাতী, দেবিলা, সিংড়া, তালখড়ি ইউনিয়নে ছান্দড়া, পাথরঘাটা, দেলুয়াবাড়ি, দরিলক্ষিপুর, আড়পাড়া ইউনিয়নে দরিশোলই, গোপালগ্রাম, আনন্দনগর, শতখালী ইউনিয়নে কাতলী, হরিশপুর, গোবরা, শালিখা সদর ইউনিয়নে দক্ষিণ শরশুনা, বুনাগাতী, বুনাগাতী ইউনিয়নে বাউলিয়া, ছাবড়ী, গঙ্গারামপুর ইউনিয়নে গঙ্গারামপুর ও সাবেকখাটর।মহম্মদপুর উপজেলার প্রস্তাবিত কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা ২৩টি। এর মধ্যে ৮টি ইউনিয়নে চালুকৃত কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা ২০টি। চালুকৃত ক্লিনিকগুলো হলো, বাবুখালী ইউনিয়নে মাধবপুর, ধুলজুরি, ডুমুরশিয়া, বিনোদপুর ইউনিয়নে উরুড়া, ঘুল্লিয়া, চৌবড়িয়া, কানুটিয়া, দীঘা ইউনিয়নে আওনাড়া, ঈরিলা , রাজাপুর ইউনিয়নে রাজাপুর , নাওভাঙ্গা, গোবরনাদা, বালিদিয়া ইউনিয়নে গোপিনাথপুর, বালিদিয়া, হরেকৃষ্ণ পুর, মহম্মদপুর সদর ইউনিয়নে চরসাচিয়ানি, ধোয়াইল, রায়পাশা, পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়নে ঝামা, কালীশংকরপুর, বনগ্রাম, নহাটা ইউনিয়নে খলিশাখালী, সালধা ও মোবারকপুর। মাগুরা সদর উপজেলার আঠারোখাদা ইউনিয়নের আড়াইশত গ্রামে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে আড়াইশত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে দানকৃত পাঁচ শতাংশ জমির উপর একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের জমি দান করেছেন রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও রনদা প্রসাদ বিশ্বাস। উক্ত কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত এফডব্লিউএ বিশ্বাস মমতা রাণী বলেন, এখানে আমি দীর্ঘদিন স্বাস্থ্য সেবার কাজ করে যাচ্ছি। এই ক্লিনিকে আমি ছাড়া একজন প্যারামেডিক্যাল ডা. মনির ইসলাম ও একজন এইচএ কর্মী কল্পনা শিকদার কাজ করেন। তিনি আরো জানান, ক্লিনিকটি সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আমরা এখানে বিনামূল্যে গ্রামের দরিদ্র রোগীদের সেবা দিয়ে থাকি। প্রতিদিন এখানে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ জন রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। বর্তমান এখানে ওষুধের মধ্যে প্যারামিটামল, হিস্টাসিন, এন্টাসিড, কট্রিম, ভিটামিন-বি কমল্পেক্স সিরাপ, চোখের মলম সরবরাহ আছে। কিন্তু বর্তমানে খাবার স্যালাইনের সংকট থাকায় ডায়রিয়া রোগীদের সেবা দেওয়া যাচ্ছেনা। সেবা নিতে আসা এই গ্রামের একজন বয়স্কা পথরানী বিশ্বাস জানান, আমরা এখানে ভালেঅ সেবা পাচ্ছি। ডাক্তার খুব মনদিয়ে আমাদের দেখে থাকেন। অন্য একজন রোগী জানান, দীর্ঘদিন গ্যাস্টিক রোগে ভুগছিলাম তারপর এখান থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পর বর্তমানে ভালো আছি। যদি এই কমিউনিটি ক্লিনিক না থাকতো তাহলে আমাদের দারুণ দুর্ভোগের শিকার হতে হতো। মাগুরা সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা. এফবিএম আব্দুল লতিফ জাগো নিউজকে জানান, বাংলাদেশের প্রতি ৬০০০ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য সরকার ১টি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছেন।এমএএস/এমএস
Advertisement