হাওর অঞ্চলের সাতটি জেলায় ৬০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। কৃষক এখন ধান বিক্রি শুরু করে দিয়েছেন। কারণ এই ধান বিক্রি করে কৃষক মজুরকে টাকা দেবেন। কিন্তু ধান কেনার পর্যাপ্ত ব্যাপারী নেই। যারা ধান কিনছেন তারা জমি থেকেই চিকনটা ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা মণ এবং মোটা ধান ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা মণ নিচ্ছেন।
Advertisement
এদিকে সোমবার (২৭ এপ্রিল) হাওর অঞ্চলে সরকারিভাবে ধান কেনার কথা থাকলেও শুধু নেত্রকোনায় সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তারা এক হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ধান কেনা শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জের খাদ্যগুদামে সোমবার দুপুরে ধান কেনা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম। এ সময় স্থানীয় কৃষক রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে ৩৬০ কেজি ধান কেনা হয়।
জেলা প্রশাসক জানান, জেলায় এবার এক হাজার ৪০ টাকা দরে ১৫ হাজার টন ধান কেনা হবে। জেলায় ৪০ হাজার টন সিদ্ধ ও আতপ চাল নিয়ে মোট ৫৫ হাজার টন কেনার বরাদ্দ এসেছে। তালিকা থেকে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হবে। তবে যারা গত মৌসুমে আমন ধান সরকারের কাছে বিক্রি করেছেন তাদের কাছ থেকে এবার বোরো ধান কেনা হবে না।
Advertisement
সুনামগঞ্জে খবর নিয়ে জানা গেছে, সেখানে এখনও সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে নির্দেশনা মোতাবেক ধান কেনা শুরু হয়নি। এ নিয়ে হাওরের সুনামগঞ্জে কৃষকদের মাঝে কিছুটা শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এলাকার কুষকদের কাছ থেকে জানা গেছে, গত রোববার থেকে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, দিরাই, শাল্লাসহ ১১ উপজেলায় ধান ক্রয় শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। কৃষকদের অভিযোগ, ফড়িয়া, টাউট ও মিলমালিকদের কম দামে ধান কেনার সুযোগ দিতেই তালিকা করতে বিলম্ব করে ধান ক্রয়ের দিন-তারিখ পেছানো হচ্ছে।
জামালগঞ্জের কৃষক ফারুক মিয়া বলেন, এক মণ ধানের উৎপাদন খরচ ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকা। কিন্তু কৃষকরা প্রতিমণ ধান বিক্রি করছেন ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকায়। ধান কাটার মজুর খরচ দেয়া, মহাজনের ঋণ শোধ করা এবং প্রতিদিন খরচের জন্য ধানের খলা থেকেই কৃষকরা কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কৃষকদের এই অসহায়ত্বের সুযোগ প্রতিবছরের মতো এবারও নিচ্ছে ফড়িয়া, টাউটরা।
সুনামগঞ্জ জেলা ধান ক্রয় কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, ২৬ এপ্রিল থেকে ধান ক্রয়ের নির্দেশনা ছিল। কৃষকরা হাওরের ধান কাটায় ব্যস্ত, এ কারণে কৃষকদের সুবিধার্থে ধান ক্রয় কিছুদিন পেছানো হয়েছে। তবে ৩০ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি ও যাচাই-বাছাই করে লটারির মাধ্যমে বাছাই করে সরাসরি তাদের কাছ থেকে ধান কেনা হবে। এতে কোনো অনিয়মের প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। চলতি বছর একজন কৃষক তিন টন ধান দিতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
Advertisement
জাগো নিউজের ভৈরব প্রতিনিধি (কিশোরগঞ্জ) আসাদুজ্জামান ফারুক বলেন, জেলার ভৈরব বাজারে নতুন ধান আমদানি শুরু হলেও ক্রেতা নেই। হাজার হাজার মণ ধান ট্রলারযোগে নদীপথে হাওর এলাকা থেকে ভৈরবে আমদানি হচ্ছে।
তিনি জানান, সোমবার ভৈরবে প্রতিমণ মোটা ধান প্রকার ভেদে ৪৭০-৫৫০ টাকা ও চিকন ধান ৬০০-৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এ জেলায় সরকারি ধান ক্রয় এখনও শুরু হয়নি।
ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম জানান, ভৈরবে আমদানিকৃত ধান আশুগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম ও চাঁদপুর জেলার ক্রেতারা কিনে নিয়ে যায়। আশপাশের এলাকার রাইস মিল মালিকরাও ধান কিনতে আসে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো ক্রেতা ভৈরবে আসতে পারছে না। সড়ক, রেল ও নৌপথে কোনো যানবাহন চলছে না। এ কারণে আমদানিকৃত ধান নিয়ে বিপদে আছি।
কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান এক প্রশ্নের জবাবে জাগো নিউজকে বলেন, অনেক কৃষক তাৎক্ষণিক টাকার প্রয়োজন মেটাতে ধান কেটে এনে খোলা খেকেই ধান বিক্রি করে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুড়িতে কৃষকরা খোলা থেকে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করছে। এর এক মণ ধান শুকালে ৩০ কেজি হবে। কাঁচা ধানের এই দাম মন্দ নয়।
আরেক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ইতোমধ্যে হাওরের ৬০ ভাগ ধান কাটা হয়েে গেছে। হাওরের কৃষকরা যাতে দ্রুত ধান ঘরে তুলতে পারে সে জন্য কৃষি বিভাগ কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধান কাটার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ১৮০টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ১৩৭টি রিপার সরবরাহের বরাদ্দ দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। বর্তমানে হাওর অঞ্চলে ৩৬২টি কম্বাইন হারভেস্টার ও এক হাজার ৫৬টি রিপার সচল রয়েছে। এছাড়াও ২২০টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৪৮৭টি রিপার দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, হাওরের বোরো ধান কাটার জন্য আমরা জরুরি ভিত্তিতে এসব যন্ত্রপাতি বরাদ্দ করেছি। এর ফলে এই অঞ্চলে ধান কাটার আর কোনো সমস্যা হবে না বলে আশা করছি।
এফএইচএস/বিএ/জেআইএম