দেশজুড়ে

বিশ্বাস করেন ভাই, আমি চোর না...

শিশু রাজনকে হত্যার পর এবার নরসিংদীর পলাশে কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে চোর সন্দেহে নাছির (২০) নামে এক যুবককে রাতভর শারীরিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে। পিটিয়ে রক্তাক্ত করার পর ইলেকট্রিক প্লাস দিয়ে তুলে নেয়া হয়েছে যুবকের ডান হাতের চার আঙ্গুলের নখ।  ঘোড়াশাল পৌরসভার ১, ২, ৩ ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর শাহানাজ পারভীনের উপস্থিতে ৭ থেকে ৮ জন ব্যক্তি ওই যুবককে লাঠি দিয়ে পেটান। এরপর ইলেকট্রিক প্লাস দিয়ে তার হাতের নখ উপড়ে ফেলা হয়। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে যুবককে তার গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। নির্যাতিত নাছির গাজীপুরের কালিগঞ্জ উপজেলার বড়গাঁও এলাকার তোতা মোল্লার ছেলে। সে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল এলাকায় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। এ ঘটনায় পলাশ থানায় মামালা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এ ব্যাপারে নাছির জানায়, চোর সাজিয়ে আমাকে রাতভর নির্যাতন করা হয়। চুরির অভিযোগ স্বীকার না করায় আমার চার আঙ্গুলের নখ ইলেকট্রিক প্লাস দিয়ে উঠিয়ে ফেলেছে তারা। আমার হাতে প্রচন্ড ব্যথা। বিশ্বাস করেন ভাই আমি চোর না। অকারণে তারা আমাকে নির্যাতন করেছে। তবে পলাশ থানা পুলিশের দাবি তাকে নির্যাতন চালালেও হাতের নখ উপড়ে ফেলা হয়নি। নাছিরের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, অভাব অনটনের কারণে নাছির পলাশে রিকশা চালিয়ে পরিবারের ভরণ-পোষণ করতো। বুধবার রাতে নাছির যাত্রী নিয়ে দড়িহাওলা পাড়া এলাকায় যায়। এরপর সেখানে যাত্রী নামিয়ে আসার পথে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে আমিন বাড়ির পাশের একটি জঙ্গলে যায়। প্রকৃতির কাজ শেষ করে আসার পথে বাড়ির লোকজন চোর সন্দেহে আটক করে। পরে মহিলা কাউন্সিলর শাহানাজ পারভিনকে খবর দিলে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। চোর সন্দেহে আটক করে তারা রাতভর নাছিরের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। পরে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বাড়ির মালিক আমিন সাংবাদিকদের জানায়, রাতে রিকশাচালক নাছির বাড়ির ভেতর থেকে বের হচ্ছিল। পরে তাকে চোর সন্দেহে আটক করে কাউন্সিলরকে খবর দেয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক কাজল জানান, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দেখি মহিলা কাউন্সিলরের সামনে ৭/৮ জন লোক মোটা লাঠি দিয়ে নাছিরকে রুমের ভেতর বেধড়ক পেটাচ্ছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন আমাদেরকে চোরের সহযোগি সাব্যস্ত করতে চেয়েছিল।অপর প্রত্যক্ষদর্শী বালুচর পাড়া এলাকার মনির হোসেন জানান, নাছির সম্পূর্ণ নির্দোষ। তারা তাকে অন্যায়ভাবে পাশবিক নির্যাতন করেছে। চুরির কোনো সঠিক তথ্যই তারা দিতে পারেনি। পরে আমি আমার জিম্মায় ঘটনাস্থল থেকে তাকে নিয়ে আসি।এ ব্যাপারে মহিলা কাউন্সিলর শাহানাজ পারভীন জানান, `কথা বলতে হলে বাড়িতে আসেন। ফোনে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না।` পলাশ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ নির্যাতনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তবে নখ উপড়ে তোলা হয়নি। ঘটনাটি দড়িহাওলা পাড়ায় নয়, ঘোড়াশাল অবদা কোয়াটার এলাকায়। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।  সঞ্জিত সাহা/এআরএ/এমএস

Advertisement